সিপিএম কর্মী লিয়াকত মিদ্যাকে খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাঁকুড়া জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত দত্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে পাত্রসায়রের গোস্বামীপাড়ার বাড়ি থেকে থানার নতুন ওসি অমিত সিংহ মহাপাত্রের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় বালসি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জিত ওরফে গোবিন্দ মাঝি নামে আরও এক তৃণমূল কর্মীকে ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ওই খুনের ঘটনায় তৃণমূলের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হল।
সোমবার ধৃতদের বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “লিয়াকত মিদ্যা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুব্রত দত্ত-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনার তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।” |
গত বছর ১৮ অগস্ট পাত্রসায়র থানার কাঁটাদিঘি গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকতকে পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়-সহ দলের প্রথম সারির ২৪ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সম্প্রতি ওই ঘটনায় আদালতে পুলিশের তরফে যে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, তাতে অভিযুক্তদের তালিকা থেকে স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়-সহ তিন জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে, চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্তদের তালিকায় তৃণমূল নেতা নব পাল, সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত-সহ ২১ জনের নাম রয়েছে।
লিয়াকতের পরিবারের তরফে সম্প্রতি হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না। এর পরেই পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব পুলিশি সক্রিয়তার বিরোধিতায় সরব হয়। জুলাই মাসে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ তুলে এলাকায় মিছিল করে থানায় স্মারকলিপিও দেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তারই এক মাস পরে পাত্রসায়র থানার ওসি মানবেন্দ্রনাথ পালকে জেলা পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করেন পুলিশ সুপার। রবিবার পাত্রসায়র থানার ওসি পদে যোগ দেন বাঁকুড়া সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর অমিত সিংহ মহাপাত্র। সেই রাতেই বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে গিয়ে সুব্রত দত্তের বাড়ি ঘিরে ফেলেন ওসি। বাড়ি থেকেই ধরা পড়েন ওই টিএমসিপি নেতা।
বস্তুত, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকেই সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পাত্রসায়র এলাকা। দু’দলেরই তিন জন করে কর্মী খুন হয়েছেন। ধৃত সুব্রতর বিরুদ্ধে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট, মারধর, তোলাবাজির পাশাপাশি ‘সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে’ এলাকায় তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন এলাকার সিপিএম নেতৃত্ব। বিধানসভা ভোটের আগে দু’বার তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তিন মাস জেলে থাকার পরে জামিনে ছাড়া পান তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএম কর্মী জলধর বাগদি, লিয়াকত মিদ্যা খুন-সহ ৩০টির বেশি মামলায় অভিযোগ রয়েছে সুব্রতর বিরুদ্ধে। অধিকাংশ মামলায় জামিন পেয়েছেন এই টিএমসিপি নেতা। এক সময় ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন সুব্রত। মাস আটেক ধরে স্নেহেশবাবুর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে এই ছাত্রনেতার। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন সুব্রত। কিন্তু দল তাঁকে প্রতীক না দেওয়ায় প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। সুব্রতর ধরা পড়া প্রসঙ্গে স্নেহেশবাবুর মন্তব্য, “ওই খুনের ঘটনায় পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক, আমরা এটাই চাই।”
|