পিছুই হটল প্রশাসন।
অনিচ্ছুক মালিকদের জমিতে জোর করে কাজ করা যাবে না রাজ্য সরকারের এই মনোভাব বুঝে রঘুনাথপুরে পুলিশ মোতায়েন করে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ করানোর সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “আমরা চাইছি না অনিচ্ছুক জমি মালিকদের জমিতে জোর করে কাজ করা হোক। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
জেলাশাসকের বক্তব্য, “আলোচনা করেই সমস্যা মেটাতে চাইছি। কী ভাবে আলোচনা হবে, তার রূপরেখাও তৈরি করা হচ্ছে।” শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও অনিচ্ছুকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান চাইছেন বলে শান্তিরামবাবুর দাবি। যদিও শিল্পমন্ত্রী এ দিন বলেন, “জমিদাতাদের বক্তব্য থাকলে তাঁরা স্থানীয় প্রশাসন বা আমাদের জানান। আমরা এই প্রকল্প বন্ধ হতে দেব না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওখানে এসইউসি-র লোকজন সমস্যা তৈরি করছেন। তাঁদের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। ওই প্রকল্প হবেই। কোনও বাধা বরদাস্ত করব না। যত দূর যেতে হয় যাব!” অভিযোগ উড়িয়ে এসইউসি-র জেলা সম্পাদিকা প্রণতি ভট্টাচার্য বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে আন্দোলন সমর্থন করছি না। সর্বদল বৈঠকেও আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।”
রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন সপ্তাহ দুই আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সোমবার থেকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকের উপস্থিতিতে পুলিশ মোতায়েন করে ‘ওয়াটার করিডর’ (জলের পাইপলাইন) তৈরির কাজ করানো হবে। সূত্রের খবর, রবিবার রাতে জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন মহকুমাশাসককে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে আশাহত ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্তার আক্ষেপ, “একটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মুখে। কিন্তু, জল না মিললে কী লাভ!” ইতিমধ্যেই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ডিভিসি। এই পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। সংস্থার খবর, সমস্যার কথা আগেই জানানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের ‘সক্রিয় সহযোগিতা’ চাইবে তারা।
জমির বদলে প্রকল্পে স্থায়ী চাকরি এবং বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ-সহ একাধিক দাবিতে ‘ওয়াটার করিডর’-এর কাজে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’। তাদের শতাধিক সদস্য এ দিন ‘ওয়াটার করিডর’-এর প্রস্তাবিত জমিতে অবস্থান করেন। জোর করে কাজ করানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার হাইকোর্টে আবেদনও করেছেন ৭ কমিটি সদস্য।
কিন্তু পুলিশ মোতায়েন করে কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশাসন পিছু হটল কেন?
এর মূলে রয়েছে রাজ্য সরকারের নীতি। প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার এই প্রকল্পটির সমস্যা সম্পর্কে রাজ্যর মনোভাব জানতে শান্তিরামবাবুকে ফোন করেন জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা। মন্ত্রী রাজ্য সরকারের মনোভাব ওই কর্তাকে জানান। শান্তিরামবাবুর কথায়, “ডিভিসি-র প্রকল্প ঘিরে কোনও রকম অনিশ্চয়তা চাইছি না। আলোচনা করেই সমাধানের পথ বেরোবে।”
আলোচনায় না মিটলে? মন্ত্রীর মন্তব্য, “একান্তই না হলে বিকল্প পথ ভাবতে হবে।” |