জাতিগত শংসাপত্র
ক্যাম্পের নির্দেশই সার, বহু আবেদন পড়ে জঙ্গলমহলে
ক সময় মহকুমাস্তরে প্রচুর আবেদন জমে থাকছিল। সমস্যায় পড়ছিলেন তপসিল জাতি- উপজাতির মানুষ। সাধারণত, আবেদন করার দেড় মাসের মধ্যে শংসাপত্র মেলার কথা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শংসাপত্র পেতে দু’-তিন মাস পেরিয়ে যাচ্ছিল। পরিস্থিতি দেখে ব্লক স্তরে ক্যাম্প করার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু, সেই নির্দেশেও পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি।
সরকার যখন ক্যাম্প করে শংসাপত্রের কাজ এগোনোর নির্দেশ দিয়েছিল, তখন পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৯ হাজার আবেদন জমে ছিল। এখনও প্রায় ৫ হাজার আবেদন জমে রয়েছে। সবথেকে বেশি আবেদন পড়ে জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। জেলা প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে, জমে থাকা আবেদনপত্রের সংখ্যা দ্রুত কমছে। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক রাহুল নাথ বলছেন, “শংসাপত্র বিলির কাজ ঠিক ভাবেই এগোচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব শংসাপত্র বিলি করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে তিনি মানছেন, “ঝাড়গ্রামে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল।” দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “এক সময় জঙ্গলমহলে ৯-১০ হাজার আবেদন জমে থাকছিল। এখন সেখানে ৩-৪ হাজার আবেদন জমে থাকছে। ফলে, পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা বদলেছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহল এলাকার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। গত দু’বছরে বেশ কয়েকবার তিনি জঙ্গলমহলে এসেছেন। ঝাড়গ্রাম- মেদিনীপুরে প্রশাসনিক সভা করেছেন। প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নানা সমস্যায় সে ভাবে এগোচ্ছে না বলে অভিযোগ। জেলাস্তরে উদ্যোগের অভাবে সমস্যার জাল সহজে ছিঁড়ছে না। জাতিগত শংসাপত্র বিলির কাজও চলছে ধীর গতিতে। অন্তত, একাংশ আবেদনকারীর অভিযোগ এমনই। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “কাজ এগোনোর সময় কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। তা না কাটানো গেলে কাজ সহজে এগোনো যায় না।” গত বছর শংসাপত্র বিলির ক্ষেত্রে রাজ্যের ছ’টি জেলা পিছিয়ে ছিল। অর্থাত্‌, এই সব জেলায় জমে থাকা আবেদনপত্রের সংখ্যা তুলনায় ছিল বেশি। সেই তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুরও ছিল। পরিস্থিতি দেখে গত বছর নভেম্বরে এক নির্দেশ জারি করে রাজ্য সরকার জানায়, ব্লক স্তরে ক্যাম্প করে কাজ এগোতে হবে। তখন জেলায় ৯১৮৯টি আবেদন জমে ছিল। গত জুনের পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় ৫৪৬৪টি আবেদন পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ৪২২১টি, ঘাটালে ৯৮২টি, খড়্গপুরে ২৬১টি। মেদিনীপুর মহকুমায় অবশ্য একটি আবেদনপত্রও পড়ে নেই।
অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, জুন মাসের আগে ঝাড়গ্রামে ৪৪৩৩টি আবেদন পড়ে ছিল। এর মধ্যে তফসিলি জাতির ১৬৬০টি, তফসিলি উপজাতির ৮০১টি। বাকিগুলো ওবিসি’র। ঘাটালে পড়ে থাকা ১২৭৯টি আবেদনের মধ্যে তফসিলি জাতির ৭২৮টি, তফসিলি উপজাতির ৯টি। বাকি ওবিসি’র। খড়্গপুরে সব মিলিয়ে ২২৪টি আবেদন পড়ে ছিল। দফতর সূত্রে খবর, জুন মাসে জেলার চারটি মহকুমায় নতুন করে ২১৫১টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে মেদিনীপুরে (সদর) ৭২১টি। খড়্গপুরে ৮৫৯টি। ঝাড়গ্রামে ৪৯৯টি এবং ঘাটালে ৭২টি। এই ২ হাজার ১৫১টি আবেদনপত্রের মধ্যে তফসিলি জাতির ৭১০টি। তফসিলি উপজাতির ৬২১টি। ওবিসি’র ১ হাজার ৬৪০টি। এ দিকে, ওই মাসে জেলার চার মহকুমায় শংসাপত্র বিলি হয় ২৬০৩টি। মেদিনীপুরে ৭১০টি, খড়্গপুরে ৮২২টি, ঝাড়গ্রামে ৭০৮টি এবং ঘাটালে ৩৬৩টি। জেলার চারটি মহকুমা মিলিয়ে ২০টি আবেদনপত্র বাতিল হয়।
জুন মাসের এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, জাতিগত শংসাপত্র বিলির ক্ষেত্রে ঝাড়গ্রাম মহকুমা জেলার অন্য তিন মহকুমার থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরে যে ৫ হাজার ৪৬৪টি আবেদন পড়ে রয়েছে, তার মধ্যে তফসিলি জাতির ২২৭৫টি। তফসিলি উপজাতির ৯৩৯টি এবং ওবিসি-র ৪৫০০টি। পরিস্থিতি দেখে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, “শংসাপত্র বিলির কাজ একেবারে ধীর গতিতে চলছে না। তবে, ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে কাজে গতি আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ওই আধিকারিকের কথায়, “হয়তো দেড় মাসের মধ্যে সব শংসাপত্র বিলি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, দু’মাসের বেশি সময় ধরে আবেদনপত্র পড়ে রয়েছে, এমনটা আমাদের নজরে নেই।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.