জলবন্দি গ্রামে ত্রাণের জন্য হাহাকার
ল নামছে না কিছুতেই। ত্রাণ না পেয়ে ক্রমশই ক্ষোভ বাড়ছে পাঁশকুড়া, তমলুকের জলবন্দি গ্রামগুলিতে।
কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে পাঁশকুড়া ও তমলুক ব্লকের একশোরও বেশি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে গত কয়েকদিনে। সোমবারও তমলুকের বেশ কিছু এলাকায় জল ঢুকেছে। বিষ্ণুবাড়-১, পদুমপুর ১, ২ পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামের সঙ্গে খোদ তমলুক ব্লক অফিস চত্বর জলে ডুবে গিয়েছে। কাঁসাই নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে প্রবল গতিতে জল ঢুকছে। বস্তুত সোমবার পাঁশকুড়া থেকে বন্যার জল তমলুকের রাধামনি এলাকায় হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক পর্যন্ত পৌঁছেছে। তমলুক ব্লক সংলগ্ন শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রঘুনাথপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দক্ষিণ ওশুতপুর গ্রামে জল ঢুকেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “কাঁসাই নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ বাঁধার কাজ শুরু হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় মোট ১৭টি স্পিডবোট ও বেশ কয়েকটি দেশি নৌকা নামানো হয়েছে। ৭১টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের বাহিনী বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণবিলির কাজ করছে।”
সোমবার বিকেলে পাঁশকুড়ার বন্যা পরিস্থিতি ও গড়পুরুষোত্তমপুরে কাঁসাইয়ের বাঁধ দেখতে যান তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘কাঁসাইয়ের বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতির কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর।”

তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের ধারে বন্যা দুর্গতদের অস্থায়ী সংসার।
এ দিন পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুর ও তমলুক ব্লকের অনন্তপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কের দক্ষিণ দিকের সমস্ত গ্রামই জলের তলায় ডুবে রয়েছে। বিস্তীর্ণ জলরাশির তলায় গ্রামীণ রাস্তা ও চাষ জমি। মাঠের মধ্যে জেগে আছে শুধু বিদ্যুতের খুঁটি। নৌকা না পেয়ে প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা কলার ভেলায় করে অথবা বাঁশের লাঠি ধরে একগলা সমান জলে ডুবে যাওয়া রাস্তা দিয়ে তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে আসছে ত্রাণ পাওয়ার আশায়। কিন্তু ত্রাণ কই?
বন্যা দুর্গতদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত নৌকা নেই। গ্রামের ভিতরে উঁচু জায়গায় কোনও মতে আশ্রয় নিচ্ছেন লোকজন। সেখানে সরকারি নৌকা যাচ্ছে না। ফলে পানীয় জল, খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘বন্যা কবলিত প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে যাতায়াত, ত্রাণ ও পানীয় জল দেওয়ার জন্য আরও নৌকার প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসন নৌকা জোগাড় করেনি। বহু গ্রামের বাসিন্দা অসহায় ভাবে আটকে রয়েছেন।” অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যের জলসম্পদমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘বন্যাদুগর্তদের উদ্ধার করতে বিভিন্ন স্থানেই নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া জন্য নৌকাগুলি কাজ করছে।”
বাস্তবে অবশ্য মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিফলন পাওয়া গেল না। উল্টে পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুর পঞ্চায়েত এলাকার মহম্মদমুরাদ গ্রাম থেকে বাঁশের লাঠি ধরে প্রায় ৫ কিলোমিটারের বেশি ডুবে থাকা রাস্তা পেরিয়ে পুরুষোত্তমপুরে আসতে দেখা গেল বিনয় মাজী, দুর্গাপদ মাইতিদের। পুরুষোত্তমপুর বাজার থেকে মুড়ি, আলু, তেল, মশলাপাতি কিনে ফের দল বেঁধে গ্রামে ফিরছিলেন তাঁরা।

অনন্তপুরে আশ্রয়ের খোঁজে।
এলাকার পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে বিনয় বলেন, ‘‘শনিবার সন্ধেয় গ্রামের মাঠ ঝাঁপিয়ে বন্যার জল বাড়িতে চলে আসে। সব ডুবে গিয়েছে। প্রতিবেশীর উঁচু বাড়িতে উঠেছি। কোনও ত্রাণ পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে একগলা জল ভেঙে বাজারে এসেছি।” একই অবস্থা পাঁশকুড়া লাগোয়া তমলুক ব্লকের অনন্তপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার আশুদাপাইকবাড়, চক শ্রীরাধা, চক গাড়ুপোতা, চকদুর্গাদাস, শালিকাগড়চক প্রভৃতি গ্রামের। দামোদরপুর থেকে রাজগাছতলা ও হরিদাসপুর থেকে রাজনগর পাকা রাস্তা জলে ডুবে রয়েছে। রাজনগর গ্রামের মরিয়াম বিবি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে উঠেছেন অনন্তপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে। মরিয়াম বিবি বলেন, “গতকাল মাটির বাড়ি জলে ডুবে ভেঙে গিয়েছে। গ্রামের একটি উঁচু জায়গায় রাত কাটিয়েছিলাম কাল। কিন্তু আজও জল বাড়তে থাকায় আর ঝুঁকি না নিয়ে ত্রাণ শিবিরে উঠেছি।”
পুরুষোত্তমপুর এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ বিশ্বনাথ দাস বলেন, “৭৮ সালের বন্যাতেও তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কের দক্ষিণ দিকের এই এলাকায় জল ঢোকেনি। তাই এখানে অনেক মাটির পুরনো বাড়ি রয়েছে। সেগুলি সব একে-একে ভেঙে পড়ছে। এই বয়সে এসে এমন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি।”

পুরনো খবর:
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.