|
|
|
|
বৃষ্টি থামলেও ব্যারাজের জল নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
চার দিনের নাগাড়ে বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে রোদ উঠল বৃহস্পতিবার।
রবিবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩০৮ মিলিমিটার। সেখানে বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১০ মিলিমিটার। তারপরও অবশ্য উদ্বেগের মেঘ কাটেনি। বুধবার কংসাবতী ও সুবর্ণরেখা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ায় এই দুই নদীর তীরবর্তী বেশ কিছু ব্লকে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়। বৃহস্পতিবারেও বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে কংসাবতী জলাধার থেকে ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এ দিন সকাল থেকে ঘাটালের বিভিন্ন এলাকায় মাইকে করে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সেচ দফতর সূত্রে খবর, কংসাবতী নদীর জল চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। শিলাবতী, ঝুমি-সহ অন্য নদীর জলস্তরও বিপদসীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কের উপর মনসাতলা চাতাল (কজওয়ে) ও ঘাটাল শহরের দু’নম্বর চাতাল এবং ঘাটাল-মেদিনীপুর (ভায়া নাড়াজোল) সড়ক জলের দখলে চলে গিয়েছে। ফলে ঘাটালের প্রধান ওই দুই সড়কের উপর দিয়ে যান চালাচল বন্ধ। তাই এখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তা-ও পর্যাপ্ত নয়। ঘাটালের মহকুমাশাসক আংশুমান অধিকারী বলেন, “জলাধার থেকে জল ছাড়ায় আরও জল বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। আমরা নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে প্রচার করেছি। বেশ কিছু এলাকার স্কুলে ত্রাণ শিবিরেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজন হলেই জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হবে।” এ দিকে দু’দিন ধরে ঘাটালের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ঘাটালের বিডিও দেবব্রত রায়ের আশঙ্কা, “শুক্রবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।” |
|
বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে তমলুকের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
মঙ্গল ও বুধবার ঝাড়খণ্ডে সুবর্ণরেখার জলাধার থেকে দফায় দফায় মোট পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার কারণে গোপীবল্লভপুর ১, গোপীবল্লভপুর ২, নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইল ব্লকের অনেক গ্রাম জলমগ্ন হয়। এ দিন আকাশ পরিস্কার হওয়ার পাশাপাশি, সুবর্ণরেখার জলও নামতে শুরু করেছে বলে দাবি প্রশাসনের। যদিও ঝাড়খণ্ডের চাণ্ডিল জলাধার থেকে এ দিন ফের ১লক্ষ ৬৬ হাজার জল ছাড়ার ফলে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছে না প্রশাসন।
সুবর্ণরেখার জল এবং টানা বৃষ্টিতে ডুলুং নদীর জল একাকার হয়ে তীরবর্তী সাঁকরাইল ব্লকের আস্তি, বৈঞ্চা, শালতুরিয়া, শালবনি, কুচলাদাঁড়ি ও তেলকন্দের মতো গ্রামগুলিকে জলবন্দি করে ফেলেছিল। বুধবার সন্ধ্যায় কুচলাদাঁড়ি ও তেলকন্দের মহিলা শিশু ও বয়স্ক মিলিয়ে দেড়শো বাসিন্দাকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর স্পিডবোটে করে রগড়ার ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার নৌকায় করে ওই গ্রামগুলিতে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়। সাঁকরাইল ব্লকে তিনটি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। নয়াগ্রাম ব্লকের দেউলবাড়, খান্দারপাড়া, মলম, সুখদেবপুর, যাদবপুর, কমলাপুর, ডাহির মতো গ্রামে জল ঢুকেছে। নয়াগ্রামে সীতানালা পুল ও দেউলবাড়ে দু’টি কালভার্ট ভেঙে গিয়েছে। ৫টি ত্রাণ শিবির খুলেছে প্রশাসন। এ দিন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু, নয়াগ্রাম ব্লক তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল দত্তরা নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের জলমগ্ন এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। এই ব্লকের সাতমা-ডোমপাড়া, জানাঘাঁটি, চাঁপাশোল, করবনিয়ার মতো জলমগ্ন গ্রামগুলি থেকে জল সরলেও এ দিন সন্ধ্যা থেকে ফের জল বাড়তে শুরু করেছে। দু’টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের চোরচিতা ও কুলিয়ানা অঞ্চলের ৫টি গ্রামে জল ঢুকেছে।
সুবর্ণরেখার জলে প্লাবিত হয়েছে দাঁতন ১ ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের প্রায় তিরিশটি গ্রাম। সেচ দফতরের কাঁথি বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার স্বপনকুমার পণ্ডিত জানান, মূলত ঝাড়খণ্ডের গালুডি ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে ওই বিপত্তি। তা ছাড়া এখন ভরা কোটালের সময় থাকায় নদীর জল দ্রুত বঙ্গোপসাগরে নিকাশি হতে পারছে না। সোনাকনিয়া পয়েন্টে সুবর্ণরেখার জল বিপদসীমা ছুঁয়েছে। দাঁতন ১ ব্লকের বিডিও জ্যোতি ঘোষ জানান, আলিকষা, কররুই, দাঁতন ২ ও আঙ্গুয়া পঞ্চায়েত এলাকায় বুধবার রাত থেকেই জল ঢুকতে শুরু করে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাত থেকেই পাঁচটি স্পিড বোট নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩৫ জওয়ান। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাঁরা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। এলাকায় মোট ৭টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। তা ছাড়া ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রিপল, শুকনো ও রান্না করা খাবারের। ৩৬৫টি বাড়ি পুরোপুরি ও ১ হাজার ৪৮১টি বাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আলিকষা পঞ্চায়েতের রাউতারাপুর, বহলিয়া, মহেশ্বরপুর, বড়া, তররুই পঞ্চায়েতের পানশোলা, পুনন্দ, সিংদা, লালপুর, পালশিয়া, আঙ্গুয়া পঞ্চায়েতের পানতুনিয়া, ললিতাপুর, মালপাড়া দাঁতন ২ পঞ্চায়েতের বেলমূলা, বালিডাংরি গ্রামগুলি সম্পূর্ণ জলের তলায় রয়েছে। এলাকার প্রায় ছ’হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ও সব্জি খেত ডুবে থাকায় তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়াও সুবর্ণরেখার জলে আংশিক প্লাবিত হল মোহনপুর ব্লকের নীলদা পঞ্চায়েতের নীলদা, দোবাড়িয়া ও কাঁটাবনি গ্রাম। ব্লক আধিকারিক সুলোক প্রামাণিক জানান, বরঙ্গি খাল দিয়ে জল ঢোকায় ওই বিপত্তি হয়েছে। তবে, ৪টি স্পিড বোট নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩৫ জওয়ান প্রস্তুত রয়েছেন।
এ দিকে বৃহস্পতিবার পূর্ণিমা কোটালের জোয়ারে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় তমলুক শহর সংলগ্ন চর এলাকায় রূপনারায়ণের জল ঢুকে পড়ে দুপুর ১২টা নাগাদ। এর ফলে দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি কোমর জলে ডুবে যায়। স্থানীয় বধূ রূপা বেরা বলেন, “রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় মাঝপথে রান্না বন্ধ করে দিতে হয়েছে।” নন্দকুমারের হাঁসগেড়িয়া গ্রামে আবার রাত ৮টা নাগাদ জমা জলে একটি মাটির বাড়ি ধসে যায়। দুই শিশু ও এক মহিলা জখম হন। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক জানিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক সাগর সিংহ (সাধারণ) বলেন, “পাঁশকুড়ায় ৪টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। ২৫৩ জন গ্রামবাসী রয়েছেন সেখানে।” |
পুরনো খবর: ব্যারাজের জলে বন্যার ভ্রূকুটি দুই জেলায় |
|
|
|
|
|