|
|
|
|
মোম্বাসা থেকে ফোন, আমির রেজার সন্ধানে এসটিএফ |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
বিশ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে এসেছিল ফোনটা। পার্ক সার্কাসের মফিদুল ইসলাম লেনের একটি বাড়িতে সেই ফোন ধরা হয়েছিল।
পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়ার বন্দর শহর ও পর্যটনের জন্য বিখ্যাত মোম্বাসা থেকে ফোনটা যে-করেছিল, তার ব্যাপারে দাউদ-ইব্রাহিম ঘনিষ্ঠ, লস্কর-ই-তইবার চাঁই সৈয়দ আবদুল করিম ওরফে টুন্ডাকে জেরা করবেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা। মোম্বাসা থেকে মফিদুল ইসলাম লেনে ফোনটা যে-করেছিল, সে কি এখন পাকিস্তানে না সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে, নাকি পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়া কিংবা কেনিয়ার মতো কোনও দেশে কলকাতার গোয়েন্দাদের জানার আগ্রহ সেটাই।
এসটিএফ সূত্রের খবর, আর কেউ নয়, মোম্বাসা থেকে কলকাতায় ফোনটা করেছিল খোদ আমির রেজা খান। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমির ২০০২ সালে কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। এখনও পর্যন্ত পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা আমির এ বছরের জানুয়ারিতে মোম্বাসা থেকে মফিদুল ইসলাম লেনের বাড়িতে ফোন করে কথা বলেছিল তার মায়ের সঙ্গে।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, মোম্বাসা থেকেই ২০০৬-এর জুলাইয়ে টুন্ডা ধরা পড়ে কেনিয়া পুলিশের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী বিভাগের হাতে। পরে কোনও ভাবে সেখান থেকে পালায় সে। টুন্ডা ও আমির রেজা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-ই শুধু নয়, কেনিয়া ও অন্যান্য দেশে বিস্তৃত একই জঙ্গি নেটওয়ার্কের অংশ বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাই আমিরের হদিস যে টুন্ডা দিতে পারবে, সেই ব্যাপারে গোয়েন্দারা এক রকম নিশ্চিত।
শুধু তা-ই নয়, তদন্তকারীরা জেনেছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ, বিশেষ করে এশিয় মুসলিমেরা প্রচুর সংখ্যায় মোম্বাসায় বসবাস করেন। সেই সুযোগ নিয়ে টুন্ডা ও আমিরের মতো জঙ্গি-চাঁইয়েরা সেখানে ঘাঁটি গাড়ার সুযোগ পেয়েছে। তা ছাড়া, গত দশকের মাঝামাঝি আমির রেজা খানেরা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন গড়ে তোলার পর ওই সংগঠনের হয়ে যুবকদের নিয়োগ, তাদের জঙ্গি তালিম দেওয়া ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণের দায়িত্বও টুন্ডার উপর ছিল। কাজেই, সেখানেও আমির ও টুন্ডার যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
এসটিএফের এক অফিসারের কথায়: “ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড দাউদ ইব্রাহিম যে পাকিস্তানে, সে কথা টুন্ডা স্বীকার করেছে। এ বার কলকাতার মোস্ট ওয়ান্টেড আমির রেজা খানের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইব। আমির এই মুহূর্তে ঠিক কোথায়, তা জানা জরুরি। আশা করছি, আমিরের গতিবিধি টুন্ডার অজানা নয়।”
এসটিএফ জানাচ্ছে, জানুয়ারির এক রাতে আমির তার মায়ের মোবাইলে ওই ফোন করে। ফোনটা আসে কলকাতার সময় রাত সাড়ে ৮টার পরে। মিনিট দশেক মা-ছেলের কথাবার্তা হয়। ফোনে আমির আত্মীস্বজনের খোঁজখবর নেওয়ার পর তার মা তাকে জানান, পুলিশ বাড়িতে এসে মাঝেমধ্যেই বিরক্ত করছে। ফোনে ওই কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আমির। সে জানায়, পুলিশের ‘দুশমনি’ তো তার সঙ্গে, তা হলে অনর্থক তার বাড়ির লোককে এমন হেনস্থা করা কেন। ফোনে পুলিশকে আমির ‘মামুলোগ’ বলে সম্বোধন করেছিল। সে মাকে জানায়, প্রয়োজনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার নম্বর যেন পুলিশকে দেওয়া হয়, পুলিশ তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুক, কিন্তু বাড়িতে এসে যেন বিরক্ত না-করে।
গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন, ওই ফোন নিশ্চয়ই পাকিস্তানের করাচি বা সে দেশেরই অন্য কোনও শহর থেকে এসেছিল। কিন্তু কেনিয়ার উপকূলবর্তী শহর মোম্বাসা থেকে আমির ফোন করেছে জেনে তাঁরা তাজ্জব হয়ে যান। পুলিশ সূত্রের খবর, এসটিএফের একটি দল টুন্ডাকে জেরার জন্য শুক্রবার দিল্লি পৌঁছয়। টুন্ডা তখন হাসপাতালে ভর্তি। সেখানেই তাঁকে জেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল সাহায্য করছে কলকাতার এসটিএফ-কে।
|
পুরনো খবর: সফেদির চালান কোথায় গেল, উদ্বিগ্ন এসটিএফ |
|
|
|
|
|