সফেদির চালান কোথায় গেল, উদ্বিগ্ন এসটিএফ
বাদাম রোগান। ইমাম সাহেব। সফেদি।
কোনও মামুলি জিনিস বা কোনও ব্যক্তি নয়। আপাত নিরীহ শব্দবন্ধগুলো আসলে মারাত্মক সব বিস্ফোরকের সাঙ্কেতিক নাম!
দাউদ-ঘনিষ্ঠ জঙ্গি সৈয়দ আব্দুল করিম ওরফে টুন্ডার শ্বশুর মহম্মদ জাকারিয়া চার বছর আগে যখন কলকাতায় ধরা পড়ে, তখন তার মুখে শব্দগুলির গূঢ় অর্থ জেনে থ হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা। জানা গিয়েছিল, ‘বাদাম রোগান’ মানে নাইট্রোবেনজিন জাতীয় বিস্ফোরক, ‘ইমাম সাহেব’ বলতে বোঝাচ্ছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জাতীয় বিস্ফোরক। আর ‘সফেদি’ হল আরডিএক্স। তার রং যে ধবধবে সাদা!
শুক্রবার নেপাল সীমান্তে টুন্ডা ধরা পড়ার পরে এই ‘সফেদি’ই ভাঁজ ফেলেছে গোয়েন্দাদের কপালে।
কেন? কারণ ওঁরা জেনেছেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে টুন্ডার পাঠানো ‘সফেদি’র চালান ২০০৫-এ মুর্শিদাবাদের লালগোলা সীমান্ত দিয়ে এ দেশে পাচার করেছিল জাকারিয়া। পাঁচ-পাঁচ কেজি আরডিএক্স তখন লস্কর-ই-তইবার জন্য ভারতে ঢুকেছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। কিন্তু তা কোন নাশকতায় ব্যবহার করা হয়েছে, জাকারিয়ার কাছ থেকে জানা যায়নি। গোয়েন্দাকর্তারা বলছেন, ২০০৫-এর অক্টোবরে দিল্লিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ৬০ জন মারা যান, ২০০৬-এর জুলাইয়ে মুম্বইয়ে সাতটি লোকাল ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে প্রায় দু’শো লোকের প্রাণ যায়। লস্কর দাবি করেছিল, দু’টোই তাদের কাজ। এসটিএফের সন্দেহ, লালগোলা দিয়ে ঢোকা পাঁচ কেজি আরডিএক্স দিল্লি বা মুম্বইয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে।
সন্দেহ সত্যি কি না, টুন্ডার মুখ থেকে তা যাচাই করতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। দিল্লি পুলিশের হেফাজতে থাকা টুন্ডাকে জেরা করে এসটিএফের গোয়েন্দারা আরও তথ্য বার করার চেষ্টা করবেন।
যেমন? গোয়েন্দা সূত্রের খবর: ২০০৫-এ টুন্ডা করাচি থেকে বাংলাদেশে ১৫ কেজি আরডিএক্স পাঠায়। ঢাকার যাত্রাবাড়িতে তার হবু শ্বশুর জাকারিয়ার ডেরায় ‘সফেদি’র চালানটি পৌঁছয়। এসটিএফের দাবি: দশ কেজি রেখে জাকারিয়া বাকিটা লালগোলা দিয়ে ভারতে ঢোকায়। “জাকারিয়া মাঝেমধ্যে বিস্ফোরক বাহকের (ক্যুরিয়র) কাজ করলেও সে বার ভার দিয়েছিল দুই বিশ্বস্ত চরকে। সে জেরায় জানায়, পাঁচ কেজি আরডিএক্সের চালান পশ্চিমবঙ্গের কোনও জায়গা থেকে টুন্ডার নির্দেশে সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিল লস্করের এজেন্টরা।” বলছেন এক গোয়েন্দা-কর্তা। তাঁর কথায়, “ওই বিস্ফোরক কোন হামলায় লেগেছিল, টুন্ডার মুখে সেটা জানা জরুরি। বাকি দশ কেজি আরডিএক্সের কী হল, তা-ও জানতে চাইব। কেননা বিস্ফোরক পাঠানো থেকে শুরু করে তার প্রয়োগ পুরোটা টুন্ডাই নিয়ন্ত্রণ করেছে।”
আরডিএক্স পাচারের পরের বছর ২০০৬-এ জাকারিয়ার অষ্টাদশী মেয়ে আসমার সঙ্গে ৬৩ বছরের টুন্ডার বিয়ে হয়। ২০০৯-এর মার্চে শিয়ালদহের কাছে জাকারিয়া বিস্ফোরক-সহ এসটিএফের ফাঁদে পড়ে। তার পর থেকে সে কলকাতার জেলে। লালবাজার সূত্রের খবর: বাংলাদেশে নিজের হেফাজতে রাখা অবশিষ্ট দশ কেজি আরডিএক্স সে কী করেছে, জাকারিয়া তা বলেনি। তবে বলেছে, ২০০৭-এর গোড়ায় সে টুন্ডার নির্দেশে ইলাহাবাদ স্টেশনে এক এজেন্টকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ‘চালান’ দিয়েছিল। যদিও জাকারিয়ার দাবি, বিশালাকৃতি ও শ্যামবর্ণ এজেন্টটির পরিচয় সে জানে না। টুন্ডাকে এ ব্যাপারেও জেরা করবে এসটিএফ।
গোয়েন্দা-কর্তারা জানিয়েছেন, জামাইয়ের তালিম নিয়ে জাকারিয়া নিজেও বিস্ফোরক বানাতে পটু হয়ে উঠেছিল। এমনকী, সে বাজারে সহজলভ্য জিনিসপত্র দিয়ে জোরালো বিস্ফোরক তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। “ইউরিয়া আর নাইট্রিক অ্যাসিড কিংবা চিনির সঙ্গে পটাসিয়াম ক্লোরেট মিশিয়ে বিস্ফোরক বানানোটা ওর কাছে প্রায় জলভাত।” মন্তব্য লালবাজারের এক অফিসারের। ওঁদের দাবি, টুন্ডা হাতে-কলমে আরডিএক্স তৈরিও শিখিয়েছিল শ্বশুরকে।
এবং ২০০৩-এ এক বার নিজের হাতে তৈরি আরডিএক্স নিয়েই জাকারিয়া বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছিল বলে দাবি করছে লালবাজার। সে সবের গতি কী হল, সেটাই গোয়েন্দারা বার করতে চান।

পুরনো খবর:

টুন্ডার দাবি
প্রাক্তন আইএসআই প্রধান হামিদ গুল সব সময়েই তাকে মদত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি আব্দুল করিম টুন্ডা। অন্তত তেমনটাই দাবি দিল্লি পুলিশ সূত্রের। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, গুলই তাকে আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে টুন্ডা। তবে এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন গুল। তাঁর দাবি, টুন্ডা, দাউদ ইব্রাহিম-কাউকেই তিনি চেনেন না। কিছুটা হালকা সুরে গুল বলেছেন, “টুন্ডার নামটা আমার মোটেই পছন্দ নয়। আমার সঙ্গে দেখা হলে তাকে নাম বদলাতে বলতাম।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.