|
|
|
|
রাজীবের জন্মদিনেই খাদ্য বিল পাশ করাতে মরিয়া সনিয়ারা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রয়াত রাজীব গাঁধীর জন্মদিন কাল। ১২৫ কোটির দেশে খাদ্য সুরক্ষার মতো বিল পাশ করানোর জন্য এর চেয়ে ভাল দিন আর কী হতে পারে কংগ্রেসের কাছে! তাই যে কোনও ভাবে কাল ওই বিলটি পাশ করাতে মরিয়া মনমোহন সরকার। লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হলেই হাজারো ঝঞ্ঝাট ও হট্টগোলে অধিবেশন পণ্ড হওয়ার আশঙ্কা। এ জন্য আগামিকালের কার্যবিবরণীতে ওই পর্বটিই থাকছে না। সকাল এগারোটায় সংসদ বসলে প্রথমেই আলোচনা শুরু হবে খাদ্য সুরক্ষা বিলটি নিয়ে।
দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত, কংগ্রেসের নেতারা কাল এই প্রকল্পে রাজীবের নাম জুড়ে দেওয়ার দাবি তুলতে পারেন। দলের দাবি ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে লোকসভায় বিতর্কে অংশ নিতে পারেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও। আগামী কালের কার্যতালিকায় জমি ও পেনশন বিলও রয়েছে। তবে খাদ্য বিলই কাল পাখির চোখ সনিয়া-রাহুলদের। সনিয়ার দেওয়া কয়েকটি প্রস্তাব বিলটির চূড়ান্ত খসড়ায় বাদ দিয়েছিল সরকার। সেগুলি ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে কংগ্রেস সূত্রে। এগুলির মধ্যে রয়েছে গৃহহীন ও নিঃস্বজনের জন্য ‘কমিউনিটি কিচেন’-এর ব্যবস্থা করা ও মিড-ডে মিলের মতো প্রকল্প থেকে ঠিকাদারদের দূরে রাখা।
কংগ্রেস খাদ্য সুরক্ষা আইন করার পুরো কৃতিত্বই দিতে চাইছে সনিয়াকে। তবে এর রাজনৈতিক তাৎপর্য মাথায় রেখে বিজেপি আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছে, তারা বিলটিকে সমর্থন করবে। কিন্তু তা-ও ঝুঁকি নিতে চাইছে কংগ্রেস। কারণ বিজেপি-র প্রচারের মুখ নরেন্দ্র মোদী বিলটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলিকে বিলটির বিরোধিতা করার জন্য একজোট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। বিলটির ব্যাপারে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে বৈঠক ডাকারও দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে। এই অবস্থায় সম্ভাব্য বিরোধিতা এড়াতে কমলনাথ আজ এ কথাও জানিয়ে রেখেছেন যে, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দু’শোটির বেশি সংশোধনী জমা পড়েছে। এর মধ্যে কাযর্কর করা সম্ভব এমন প্রস্তাবগুলি সরকার মেনে নেবে।
এর পাশাপাশি কংগ্রেস হাইকম্যান্ড আজ দলের সব মুখপাত্রকে নির্দেশ দিয়েছে, খাদ্য সুরক্ষার মতো বিষয়েও বিরোধিতা করার জন্য মোদীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে ঝাঁপাতে হবে। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, বিলটি প্রসঙ্গে মোদীর তাত্ত্বিক আপত্তি নিয়ে তর্কে না গিয়ে তাঁকে সরসরি গরিব-বিরোধী হিসেবে তুলে ধরাই হবে কংগ্রেস নেতৃত্বের কৌশল। সেই অনুযায়ীই কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ বলেন, “এক সময় বিজেপি-র স্লোগান ছিল, ভয়, ভুখ ও ভ্রষ্টাচার মুক্ত ভারত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে গরিবের ভুখ নিয়ে কোনও চিন্তাই নেই নরেন্দ্র মোদীর। বরং দেশকে এখন কংগ্রেস-মুক্ত করার ডাক দিচ্ছেন তিনি। এতে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর ফ্যাসিবাদী চেহারাটাই প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে।’’
মোদীর বিরুদ্ধে এই ভাবে তোপ দেগে কংগ্রেস বাকি দলগুলিকেও বার্তা দিতে চাইছে। তা হলো, যারাই এই বিলের বিরোধিতা করবে, তাদেরই জুটবে গরিব-বিরোধী তকমা। সেই রাজনৈতিক ঝুঁকি নেওয়ার আগে দলগুলি যেন শত বার ভাবে। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের যখন মাত্র ক’মাস বাকি।
বিলটি কাল পাশ করানোর পথে সম্ভাব্য আর একটি বাধা নিয়েও সতর্ক কংগ্রেস। গত বুধবারই বিলটি পাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের বিরোধিতায় তেলুগু দেশম সাংসদদের হট্টগোলে সভা মুলতুবি করে দিতে হয়। সে জন্য তেলুগু দেশম সাংসদদের কাল অধিবেশনের গোড়াতেই এক দিনের জন্য বহিষ্কার করার কথাও ভাবছে সরকার পক্ষ। কংগ্রেসের সব সাংসদকে কাল লোকসভায় উপস্থিত থাকার জন্য হুইপ জারি করার পাশাপাশি, কংগ্রেসের নেতারা এ দিন মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে কথা বলেছেন। খাদ্যসুরক্ষা বিল নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারির সমালোচনা করলেও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীও বিলটিকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন।
কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল ২০ অগস্টের আগেই বিলটি পাশ করানো। যাতে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীবের জন্মদিনে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রকল্পের রূপায়ণ শুরু করা যায় কংগ্রেস শাসিত কিছু রাজ্যে। সেই অনুযায়ী কাল দিল্লিতে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। অথচ সংশ্লিষ্ট বিলটি এখনও সংসদে পাশ হয়নি। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, কাকতালীয় ভাবে হলেও কাল লোকসভায় খাদ্য সুরক্ষা বিলটি পাশ হলে সেটাও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
|
পুরনো খবর: খাদ্য বিল ঘিরে জটিলতা, অর্ডিন্যান্সের জল্পনা |
|
|
|
|
|