ভারত-বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে উঠে এল স্থলসীমান্ত চুক্তি দ্রুত রূপায়নের প্রসঙ্গটি। এই চুক্তিটি দ্রুত ভারতীয় সংসদে পাশ করিয়ে নেওয়া হলে দ্বিপাক্ষিক সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে বলেই উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
গত তিন দিন ধরে চলা বৈঠকে স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভারতকে চাপ দিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য বাংলাদেশের নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে, সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিল আনা হবে এবং তা যাতে পাশ করানো সম্ভব হয় সে জন্য ইতিমধ্যে চেষ্টাও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, এখনও বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি মনমোহন সিংহের সরকার। স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এখনও অসম, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বের সম্মতি মেলেনি। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি অস্বস্তিতে রেখেছে বিদেশ মন্ত্রককে। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, নিরাপত্তা এবং সীমান্ত সুরক্ষার প্রশ্নে হাসিনা সরকারের কাছ থেকে সব রকম সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছে। আজকের যৌথ বিবৃতিতেও জাল নোট থেকে সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিশদ উল্লেখ রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি মনে করছে, বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘ দিনের দাবি মেটাতে স্থলসীমান্ত অথবা তিস্তার মতো চুক্তি সেরে ফেলার কূটনৈতিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু এই দু’টি চুক্তিই আটকে গিয়েছে ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধায়।
আজকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দু’দেশই সদ্যসমাপ্ত বৈঠকে ১৯৭৪ সালে তৈরি স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে আলোচনা করেছে। দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বকেয়া সমস্যা মেটাতে এই চুক্তির বিভিন্ন দিকগুলির আশু বাস্তবায়ন প্রয়োজন।’ বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে অন্তত এই চুক্তিটি ভারতের কাছ থেকে ‘আদায়’ করে নেওয়ার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ঢাকার। তাই বিভিন্ন মঞ্চে বিষয়টি উত্থাপন করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ঘরোয়া ভাবে বলা হয়েছিল, আলফা নেতা অনুপ চেতিয়াকে অতি দ্রুত দিল্লির হাতে তুলে দেবে ঢাকা। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া বৈঠকটির পরেও এ ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট দিনক্ষণের আশ্বাস মেলেনি। ভারত বিষয়টি বৈঠকে তুললেও সরকারি সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি হয়নি। আজ প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব মুস্তাক আহমেদ বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে এগোচ্ছি। তবে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে পারছি না। যখন চেতিয়াকে ফেরানো হবে, তখনই জানতে পারবেন।” রাজনৈতিক সূত্রের অনুমান, তিস্তা বা স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে ভারত হাতেকলমে পদক্ষেপ না করলে চেতিয়ার প্রত্যর্পণের বিষয়ে সক্রিয়তা দেখাবে না ঢাকা। |