কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের চলতি আবহের মধ্যেই আজ ফের উত্তপ্ত হল পরিস্থিতি।
অসামরিক বিমান পরিবহণ নীতি তথা বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের প্রসঙ্গ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে চাপানউতোর হল তৃণমূল নেতৃত্বের। আজ অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে তৃণমূলের তরফে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদপত্র জমা দেওয়া হল। সূত্রের খবর, কলকাতা বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণের বিষয়টি-ই শুধু নয়, এয়ারপোর্ট অথরিটির ক্ষমতা খর্ব করা থেকে শুরু করে নতুন স্বশাসিত সংস্থা গড়া কেন্দ্রের প্রতিটি সিদ্ধান্তেরই প্রতিবাদ জানালো তৃণমূল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ, তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি-র রাজীব প্রতাপ রুডি, কংগ্রেসের নবীন জিন্দাল প্রমুখ।
কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালালেও বামেদের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। এ দিন তৃণমূলও নিজেদের আপত্তি ফের স্পষ্ট করে দিল। সুদীপবাবু এ দিনের বৈঠকে অজিত সিংহকে জানান, কলকাতা বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ হলেও পরিষেবা ক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। কেন্দ্রের কাছে তাঁর দাবি, সার্বিক ভাবে দেশের বিমানবন্দরগুলিকে একচেটিয়া ভাবে বেসরকারিকরণ করার উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। তাঁর যুক্তি, এয়ারপোর্ট অথরিটি দেশের ‘মিনিরত্ন’ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। সেই মর্যাদা যেন লঘু না করা হয়। বামেদের সুরেই ‘জাতীয় সম্পদ’কে বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়ার বিরোধিতা করেন তিনি। একই সঙ্গে সুদীপবাবুর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে কম খরচে ৫১টি বিমানবন্দর তৈরির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার পুরো বাজেট সহায়তা দিতে হবে কেন্দ্রকেই।
জবাবে অজিত সিংহ জানান, বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ না করা হলে প্রত্যাশিত পরিষেবা পাওয়া যাবে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি দিল্লি এবং মুম্বই বিমানবন্দরের প্রসঙ্গে জানান, এই ক্ষেত্র দু’টিতে বেসরকারিকরণ করার ফল হাতেনাতে মিলেছে। পরিষেবার মান অনেকটাই উন্নত হয়েছে। মন্ত্রীর বক্তব্য, গোটা দেশের সরকারি এয়ারলাইন্স-এর সম্মিলিত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের বিপুল চাপও (৮৬ হাজার কোটি টাকা) কেন্দ্রের ঘাড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় বেসরকারিকরণ ছাড়া রাস্তা নেই।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, প্রফুল্ল পটেল অসামরিক বিমান মন্ত্রী থাকার সময় থেকেই কেন্দ্র দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে মরিয়া। যোজনা কমিশনও বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণের পক্ষেই সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সিপিএমের বিরোধিতায় এই নীতি কার্যকর করতে পারেনি কেন্দ্র। পরবর্তী কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর নতুন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেন। কিন্তু মমতাও বামেদের সুরেই বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি হাতে দেওয়ার বিরোধিতা করছেন।
ইউপিএ থেকে তৃণমূল সমর্থন তোলার পর এই বিরোধিতার সুর চড়েছে। সম্প্রতি বিমান প্রতিমন্ত্রী কে সি বেণুগোপাল সংসদে একটি বিল পেশ করেছেন, যার জেরে সংঘাত বেড়েছে। বিলের বক্তব্য, আমেরিকার ধাঁচে ভারতেও অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রণের ভার একটি স্বশাসিত সংস্থার হাতে দেওয়া হোক। এই নিয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূলের। ওই বিল পাশের সময় আপত্তি জানিয়ে সাংসদ সৌগত রায় বলেছিলেন, “বিল পেশের সময় বলা হল, আমেরিকা নাকি এমন চাইছে। আমেরিকা চাইলেই আমাদের মেনে নিতে হবে কেন?”
|