আশারাম বাপুর বিরুদ্ধে এফআইআরে ধর্ষণের অভিযোগ রাখেনি জোধপুর পুলিশ। তাতে কেবল যৌন নির্যাতনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জোধপুরের একটি আশ্রমে আশারাম তাকে যৌন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেছে এক নাবালিকা। জোধপুর ছাড়াও দিল্লিতে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে আশারামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তীব্র হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। এই ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রংও। তবে এখনও অটল খোদ আশারাম। তাঁর বক্তব্য, “আমি নির্দোষ। ওই বালিকা আমার মেয়ের মতো।” তাঁর দাবি, হিন্দু সন্তদের বদনাম করার এক বৃহত্তর চক্রান্তের অঙ্গ হিসেবেই তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।
তদন্তের জন্য আশারামের আমদাবাদ ও মধ্যপ্রদেশের ছিন্দোয়ারার আশ্রমে দল পাঠিয়েছে জোধপুর পুলিশ। আশারামের বিরুদ্ধে যে কিশোরী অভিযোগ এনেছে সে আগে তাঁরই ছিন্দোয়ারার গুরুকূলে পড়ত। জোধপুরের আশ্রমে ঘটনার দিন ওই গুরুকূলের মূল তত্ত্বাবধায়ক হাজির ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাই আশারাম ছাড়াও ওই তত্ত্বাবধায়ক-সহ গুরুকূলের কয়েক জন কর্মীকে জেরার জন্য সমন পাঠানো হয়েছে।
আশারাম এখন ইনদওরে। তাই তাঁকে সমন দিতে ইনদওরেও গিয়েছে জোধপুর পুলিশের একটি দল। পুলিশকে এড়াতেই আশারাম ইনদওরে গিয়েছেন বলে অভিযোগ নানা শিবিরের। তবে সেখানেও বিক্ষোভের হাত থেকে নিস্তার পাননি তিনি। যৌন নির্যাতনের অভিযোগের পরে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন আশারাম। তিনি বলেন, “গুরু নানক দেবজিকেও জেলে যেতে হয়েছিল। তাই আমিও জেলে যেতে প্রস্তুত।” গুরু নানকের সঙ্গে নিজের তুলনা করায় আজ ইনদওরে শিখ সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের মুখে পড়েন আশারাম।
আজ লোকসভায় আশারাম প্রসঙ্গ তোলেন জেডিইউ নেতা শরদ যাদব। মুম্বইয়ে চিত্রসাংবাদিকের গণধর্ষণ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের বিবৃতির পরেই মুখ খোলেন শরদ। তিনি বলেন, “ এক জন সাধু গোটা দেশের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছে একটি মেয়ে। কেন্দ্রের এই বিষয়েও কিছু বলা উচিত। পদক্ষেপও করতে হবে।” আশারামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে সরব হন সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্ত ও শিরোমণি অকালি দলের হরসিমরত কৌরের মতো সাংসদরা।
আবার আশারামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। এই প্রসঙ্গে কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা উল্লেখ করেছেন উমা। উমার বক্তব্য, “অভিযোগ সত্য হলে অবশ্যই আশারামের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে শঙ্করাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা ভোলা সম্ভব নয়। তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল।”
রাজনৈতিক সূত্রে খবর, হিন্দু সন্ত হিসেবে আশারামকে কিছুটা সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছেন উমা ভারতী-সহ বিজেপির একাংশ। তবে দলের অন্য একটি অংশ তার তীব্র বিরোধী। হিন্দু আবেগের কথা ভেবে বিষয়টিতে বিশেষ জড়াতে চাইছে না কংগ্রেসও। তবে আজ লোকসভায় গোলমালের পরে আশারামকে নিয়ে দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ওই তিনটি এলাকায় আশারামের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। শিন্দে জানিয়েছেন, আশারাম সম্পর্কে তথ্য পেলে তিনি সংসদে বিবৃতি দেবেন।
|