জন্মের সময় অস্বাভাবিক কম ওজন ছিল ছেলেটার। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে তখন সবে চালু হয়েছে নবজাতদের জন্য পরিচর্যাকেন্দ্র। সেখানেই কিছু দিন চিকিৎসার পরে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান বাড়ির লোকেরা। আড়শার উপরজাড়ি গ্রামের সেই রজনী সিং সর্দার এখন আট পেরিয়ে ন’বছরে পড়েছে। বয়স বাড়লেও সে ভাল করে কথা বলতে পারে না।
পুরুলিয়া মফস্সল থানার চাকড়া গ্রামের মামণি মাহাতোর জন্মবৃত্তান্তও এক। ছ’বছরের সেই মেয়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তারও কথায় জড়তা রয়েছে। ফলে লেখাপড়ায় বিস্তর অসুবিধে হচ্ছে।
রজনী, মামণিদের মতো এ রকম প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যাঁরা বেড়ে উঠছে তাঁদের সুস্থ করে লেখাপড়ার মূল স্রোতে নিয়ে আসতে পুরুলিয়ায় শুরু হল এক নয়া প্রকল্প‘দ্রুত রোগ প্রতিবিধান কেন্দ্র’। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের সহায়তায় ও রাষ্ট্রীয় বাল শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম এই জেলায় প্রকল্পটি শুরু হল। শনিবার প্রকল্পের সূচনা করেন রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। |
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “সদ্যোজাত থেকে আঠারো বছর বয়সীদের মধ্যে নানা শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় যাঁদের সুষম বিকাশ হচ্ছে না, তাঁদের সমস্যা দূর করতেই এই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এই কেন্দ্র চালু করা হল। এখানে বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরিষেবা দেবেন।”
কী ভাবে মিলবে এই পরিষেবা? জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই কেন্দ্র পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ চিকিতসকদের যে দল তৈরি করেছে, তাঁদেরই একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শিবশঙ্কর মাহাতো বলেন, “ভাল করে কথা না বলতে পারা, খুঁড়িয়ে হাঁটা, কানে কম শোনা, কম দৃষ্টি শক্তির মতো নানা সমস্যায় শিশুরা ভোগে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে এ সব নিরাময় করা যেতে পারে।” তিনি জানান, ওই ধরনের সমস্যায় থাকা শিশুদের খুঁজে এই কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি থেকে স্কুলে গিয়ে এই ধরনের বাচ্চাদের চিহ্নিত করবেন।
এই প্রকল্পের রাজ্যের নোডাল অফিসার পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, “এই কর্মসূচি আমরা প্রথম জেলা হিসেবে পুরুলিয়ায় শুরু করছি। পরে রাজ্যে আরও ৫টি মেডিক্যাল কলেজে ও ৭টি হাসপাতালে এই কেন্দ্র চালু করা হবে।” জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “চিকিৎসকেরা যে নিষ্ঠা নিয়ে একসময় পুরুলিয়ায় নবজাতদের জন্য পরিচর্যাকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন, আশা করব এই কেন্দ্রটিকেও একই ভাবে তাঁরা গড়ে তুলবেন।” |