সরকারি এক কর্মীর মৃত্যুতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ বহরমপুর সদর হাসপাতালে হাসিম শেখ (৫৭) নামে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বহরমপুর ডিভিশনের কর্মী বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে ওই রোগীর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হলে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসককে ডেকে পাঠানোর জন্য নার্সদের কাছে গিয়ে করে অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্তব্যরত নার্সরা বাড়ির লোকদের কথার আমল দেয়নি বলে অভিযোগ। পরে ওই ব্যক্তি মারা যান।
ওই ঘটনায় পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য রোগীর বাড়ির লোকজন হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বহরমপুর থানার আইসি মোহায়মেনুল হক বলেন, “মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের চালক হিসেবে বহরমপুর ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন হাসিম শেখ। বাড়ি বহরমপুর লাগোয়া ভাকুড়ি-১ পঞ্চায়েতের পাকুড়িয়া গ্রামে। এদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বহরমপুর ডিভিশন অফিসে ডিউটিতে যান। সেখানে শারীরিক ভাবে অসুস্থ বোধ করলে সহকর্মীরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তির বন্দোবস্ত করেন। তিনি চিকিৎসক অরিন্দম চক্রবর্তীর অধীনে ভর্তি হন। ভর্তির সময়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসাও করেন। পরে একটু বেলা বাড়তেই তিনি শারীরিক ভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেয়ে সাফিয়া খাতুনের অভিযোগ, “বাবা শারীরিক ভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসককে কল-বুক দিয়ে পাঠানোর জন্য নার্সদের অনুরোধ করি। কিন্তু তাঁরা আমার কথা শুনতে চাননি। সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ বাবা মারা যান।”
হাসিম শেখের ভাই নাসিম শেখ বলেন, “দাদা মারা যাওয়ার পরে ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, হাসপাতালের পুরুষ বিভাগের কর্তব্যরত নার্সদের কাছ থেকে চিকিৎসককে কল-বুক পাঠানোর কোনও অনুরোধ আসেনি। এমনকী চিকিৎসক অরিন্দম চক্রবর্তী পৌনে ১০টা নাগাদ হাসপাতালে আসেন। তিনিও কোনও কল-বুক পাননি বলে জানান। কর্তব্যরত নার্সদের গাফিলতিতেই দাদার মৃত্যু হয়েছে।”
পরে বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগেও কর্তব্যরত নার্সদেরকে দায়ি করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন জনের তদন্তকারী দল তৈরি করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে নার্সদের কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” |