প্রশ্নের মুখে শহরের সরকারি হাসপাতাল
জরুরি পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচারের তারিখ পেতে বছর কাবার
বুকে ব্যথা, রাতে ঘুম হয় না, শরীরে সব সময়ে অস্থির ভাব। এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন বছর পঞ্চাশের শান্তি ঘোষ। শান্তিবাবুকে দেখে সেখানকার ডাক্তারবাবুরা ইকোকার্ডিওগ্রাম করতে বললেন। জানালেন, সেই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখার পরেই শুরু হবে আসল চিকিৎসা। নির্দিষ্ট বিভাগে পরীক্ষার ‘ডেট’ নিতে গেলেন শান্তিবাবু। ২০১৩-এর অগস্ট মাসে দাঁড়িয়ে তিনি ‘ডেট’ পেলেন এক বছর পরে, ২০১৪-র জুলাইয়ে। স্তম্ভিত শান্তিবাবুর প্রশ্ন, “শরীরের যা অবস্থা, তাতে অত দিন কি আমি পরীক্ষা করানোর জন্য বেঁচে থাকব?” ডাক্তারবাবুরা উত্তর দেন, “অতশত জানি না। এটাই দস্তুর।”
পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন অবনী সাঁতরা। তাঁর পায়ে ধাতব প্লেট বসানোর প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারের সম্ভাব্য তারিখ জানানো হয়, ২০১৪-র জুন। অত দিন চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখলে অবনীবাবুর পা-টা যে পুরোপুর অকেজো হয়ে যাবে, সে বিষয়ে অবশ্য সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত শুভা চন্দ্র। পরিবারের লোকেরা চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যালে। সেখানে পরীক্ষার পরে জানানো হল, অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু সেই পরিকাঠামো নেই। তাই রেফার করা হল বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি-তে (বিআইএন)। শুভাদেবীর ছেলে সুবল চন্দ্র বলেন, “বিআইএন-এর ডাক্তারবাবুরা জানালেন, এখানে প্রচুর রোগী, অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অন্তত বছরখানেক লাগবে। কিন্তু মা হয়তো তত দিন বাঁচবেই না।”
এর কোনওটিই বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। সরকারি হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসা করাতে এসে অনন্তকাল অপেক্ষার এমন অভিজ্ঞতা অহরহ হচ্ছে রোগীদের। কোথাও জরুরি পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হচ্ছে এক-দেড় বছর পরে, কোথাও আবার জীবনদায়ী অস্ত্রোপচারের জন্য আট-দশ মাস অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। এসএসকেএম, এনআরএস, ন্যাশনাল, কলকাতা মেডিক্যাল, আর জি কর কোনওটিই এর ব্যতিক্রম নয়। প্রশাসনের কাছে বিষয়টি তোলা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু তা বাস্তবে রূপায়ণের দায়িত্ব যাঁদের উপরে, তাঁরা তেমন নড়েচড়ে বসেন না।
এসএসকেএম-এ ইকোকার্ডিওগ্রামের ‘ডেট’ এক বছর পরে দেওয়া হচ্ছে জেনে জুলাইয়ের গোড়ায় তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেছিলেন হাসপাতাল পরিচালন সমিতির সদস্যরা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব আরও দু’টি ইকোকার্ডিওগ্রাফির যন্ত্র কেনা হোক। বরাদ্দ হয়েছিল প্রয়োজনীয় অর্থও। কিন্তু দেড় মাস পরেও যন্ত্র আসেনি। এসএসকেএম তথা ইনসিটিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই যন্ত্র চলে আসবে।” কিন্তু সেই তারিখটা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছিলেন, এনআরএস-এর অর্থোপেডিক বিভাগে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। দৈনিক অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বাড়লে রোগীদের অপেক্ষাও কমবে। এনআরএস কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, এখনই তেমন কিছু হওয়ার নয়।
একই ভাবে ন্যাশনাল মেডিক্যাল, আর জি কর, বা কলকাতা মেডিক্যালেও রোগীদের অপেক্ষার মেয়াদ কমাতে স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বললেন, “রোগীর এমন বিপুল চাপ যে চাইলেও দেরিটা এড়াতে পারছি না। তবু চেষ্টা চালাচ্ছি। অন্তত যন্ত্র খারাপ থাকার জন্য যাতে আলাদা ভাবে দেরি না হয়, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ডাক্তার ও টেকনিশিয়ানদেরও যত্নবান থাকতে বলা হচ্ছে। কোনও যন্ত্র খারাপ হলে তা দ্রুত সারাতে হবে।”
তবে স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এর কোনওটিই স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তাঁদের মতে, রেফারাল ব্যবস্থা যত দিন না সঠিক ভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তত দিন এর সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “জেলা স্তরের হাসপাতালগুলিতে না গিয়ে রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন কলকাতার হাসপাতালে। এটা যেমন সত্যি, তেমনই জেলায় অনেক পরিকাঠামো এখনও নেই, সেটাও সত্যি। তাই রোগীদের বাধ্য হয়ে কলকাতায় আসতে হয়। ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ প্রক্রিয়ায় কিছু হবে না। এর জন্য দরকার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার। সেটাই হচ্ছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.