গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে হাবরার দু’টি ব্লকে খারাপ ফল করেছে তৃণমূল। সেই ক্ষত মেরামতের আগেই আসন্ন পুরভোট ঘিরে হাবরায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থীদের মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ এতটাই তীব্র যে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ইতিমধ্যে একাধিকবার শহরের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-মিছিল করে ফেলেছেন। তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর পক্ষে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামলাতে দলের জেলা নেতৃত্ব একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
পুরভোট ঘিরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “দলের কেউ যদি নির্দল প্রার্থীর হয়ে কোনও রকম প্রচার করেন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।”
হাবরা পুরসভার মোট আসন ২৪টি। গতবার ২৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১১টি, সিপিএম ১০টি এবং কংগ্রেস ও নির্দল একটি করে আসন পায়। প্রকাশ্যে জোট না হলেও সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আসন সমঝোতা হয়েছিল। এ বার অবশ্য লড়াই পুরোপুরি ত্রিমুখী।
হাবরা পুরসভা পাঁচ বছর ধরে তৃণমূলেরই দখলে ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান তপতী দত্ত এবং ভাইস-চেয়ারম্যান তপন সেনগুপ্তের (পিলে) দ্বন্দ্বের জের এ বারেও মনোনয়নে পড়েছে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। এ বারও ভোটে ওই দু’জন দলের টিকিট পেয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য ওয়ার্ডে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিবাদ চরমে উঠেছিল বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেই মেনে নিয়েছেন। দলের টিকিট না পাওয়ায় ২২ নম্বর এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসেবে এমন দু’জন প্রার্থী হয়েছেন, যাঁরা তপন সেনগুপ্তের অনুগামী হিসেবেই পরিচিত।
তবে, তৃণমূলের একটা বড় অংশের ক্ষোভ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী নারায়ণ সাহা এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নীলিমেশ দাসকে নিয়ে। কেননা, নারায়ণবাবু চলতি মাসের গোড়ায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তার কিছুটা আগে নীলিমেশবাবুও কংগ্রেস ছেড়ে আসেন। এত অল্প সময়ে দলে এসে তাঁদের পুরভোটে দলের টিকিট পেয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি পুরনো কর্মী-সমর্থকেরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ-মিছিল হয়। বারাসতে মহকুমাশাসকের দফতরে ওই দু’জনের মনোনয়নের সময়ে বিক্ষোভও হয়। জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “কংগ্রেস থেকে আসা ওই দু’জনকে প্রার্থী করায় দলের যুব ও ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। আলোচনা করে তা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
শুধু তাই নয়, তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তি এবং অসুস্থ ব্যক্তিকেও প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। মনোনয়নে টাকা লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে। একটি ওয়ার্ডে আবার স্থানীয় নেতাকে না দাঁড় করিয়ে অন্য জায়গা থেকে এক ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলেও ক্ষোভ রয়েছে কর্মী-সমর্থকদের অনেকের মধ্যেই। |