বেজায় অস্বস্তির পরিবেশ! আগামী পাঁচ বছর দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখকে বসবাস করতে হবে সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতের অধীনে! বিপিএল বা জাতি-উপজাতি শংসাপত্রের জন্য
কেউ এলে পাঠাতে হবে সিপিএম প্রধানের কাছে! কারণ, বিষ্ণুপুর-২ নম্বর ব্লকের বাঁকড়াহাট পঞ্চায়েত এ বার সিপিএমের দখলে।
সভাধিপতির বাড়ি বিবিরহাট মোড়। পশ্চিম নন্দাভাঙা এলাকায় শামিমার বাড়ির বুথেও তৃণমূল পরাজিত! ওই বুথে শামিমার দলের হার হয়েছে ১৮ ভোটে।
এ বছর বাঁকড়াহাট জেলা পরিষদ আসনটি সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে নিজের পাড়ায় ওই পঞ্চায়েত এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি শামিমা। গত বার পঞ্চায়েত ভোটে ১৭টির মধ্যে ১৬টি আসনই সিপিএমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। ওই পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই জেলা পরিষদে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শামিমা। পরে জেলা সভাধিপতি হন।
এ বার গণেশ একেবারে উল্টে গিয়েছে! বাঁকড়াহাট পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে সিপিএমের দখলে চলে গিয়েছে ১০টি আসন। তারাই পঞ্চায়েত গঠন করেছে। আর সিপিএমের তরফে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন শামিমার পড়শি বাবলু শেখ। পড়শি মানে একেবারে শামিমার বাড়ির উল্টো দিকেই থাকেন বাবলু!
এলাকার বাসিন্দা হিসাবে আসা যাওয়ার পথে মাঝেমধ্যেই শামিমার সঙ্গে দেখা হয় বাবলুর। কিন্তু কোনও কথা হয় না। শামিমার পড়শি সিপিএম নেতাদের কথায়, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মাঝেমধ্যে রাস্তায় দেখা হলে ভাবী একটু-আধটু মুচকি হাসতেন। কিন্তু সভাধিপতি হওয়ার পরে গাড়িতে বেরিয়ে যান। এখন আর ফিরে তাকান না।” বস্তুত, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘ভাবী’-র সঙ্গে স্থানীয় সিপিএম নেতাদের সম্পর্ক ভালই ছিল। শামিমার স্বামী রমজান আলি শেখ একদা বাঁকড়াহাট অঞ্চলের দাপুটে সিপিএম কর্মী ছিলেন। ২০০০ সালের পরে দল পরিবর্তন করে সস্ত্রীক তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরে ২০০৮ সালে রমজানের স্ত্রী জেলা পরিষদে তৃণমূলের প্রার্থী হন। আর কালের ফেরে এ বার সেই সিপিএমেরই পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হয়ে উঠতে হয়েছে!
এখনও পর্যন্ত দলীয় স্তরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি ঠিক হয়নি। তবে জেলা তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিত, শামিমাই দৌড়ে একটু এগিয়ে। শামিমা ছাড়াও ফলতা ব্লকের মীনাক্ষী মণ্ডল ও গোসাবা ব্লকের হামিদা বিবির নামও জেলা সভাধিপতি হিসেবে উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং জেলা সভাধিপতি মনোনীত করবেন। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “শামিমাকে দিদি একটু পছন্দ করেন। তা ছাড়া, গত পাঁচ বছর জেলা সভাধিপতির কাজের একটা অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শামিমাই এগিয়ে রয়েছেন।”
শেষ পর্যন্ত ফের জেলা সভাধিপতি হলেই বা কী? শামিমা ও রমজানকে রেশন কার্ড থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স-সহ নানা শংসাপত্রের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী স্থানীয় প্রধানের দ্বারস্থ হতে হবে। যদিও দলেরই কোনও কোনও মন্ত্রীর ফরমান মানলে পড়শি প্রধানকে বয়কট করেই চলা উচিত শামিমার! এই অবস্থায় সিপিএমের প্রধান বাবলু অবশ্য তাঁর ‘ভিআইপি’ পড়শিকে সাদর আমন্ত্রণ করতে প্রস্তুত।
বাবলুর কথায়, “আমি বাঁকড়াহাট পঞ্চায়েতের প্রধান। তৃণমূল বা সিপিএম সমর্থক-সহ আমার অঞ্চলের সব মানুষের আমি প্রধান। জেলা সভাধিপতিরও প্রধান। সকলেই আমার আপনজন!” আর শামিমার বক্তব্য, “আমি সব সময় সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করেছি। আশা করি, আমিও সকলের কাছ থেকে সহযোগিতা পাব।” |