ফুঁলেফেপে ওঠা বর্ষার পদ্মা গিলে ফেলেছে ঘরবাড়ি। আবাদি জমিও তলিয়ে গিয়েছে পদ্মাগর্ভে। সর্বস্ব হারানো ভাঙন কবলিত পদ্মা পাড়ের মানুষ যন্ত্রণা চেপে রবিবার রানিনগরের চর মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির ভোটের লাইনে দাঁড়ালেন উৎসবের মেজাজে।
নিজেদের যাই হোক, পরবর্তী প্রজন্মের পড়াশোনা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই চিন্তাই ছিল তাঁদের বেশি। গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জিৎ মণ্ডল বলেন, “আমরা ভাঙনের ভয় নিয়েই সারা জীবন কাটালাম। আমরা চাই, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে ভাল জায়গায় ঘরবাড়ি করুক, যাতে তাদের আর ভাঙনের ভয়ে না থাকতে হয়। তারই একটি সোপান হল স্কুল। তাই ভোট দিতে গিয়েছিলাম।”
মাসখানেক আগেও চর মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ছিল পদ্মা থেকে নিরাপদ দূরত্বে। কিন্তু চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দিন তিনেকের বৃষ্টিতে পাড় ভাঙতে ভাঙতে পদ্মা চলে এসেছে স্কুলের কাছে। ভিটেমাটি হারা মানুষগুলি ভাঙন প্রতিরোধে প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ মনোভাবে বেশ বিরক্ত ছিলেন। কিন্তু সেই অসন্তোষ চাপা রেখে ভোট দিলেন তাঁরা।
গ্রামের রাস্তার দু’পাশে যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় পতাকায় ছয়লাপ। আগাম সতর্কতা নিয়ে গ্রামের মোড়ে মোড়ে পুলিশ। তার মধ্যেই ভোটারদের জটলা। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। বোঝা মুশকিল, কয়েকদিন আগেই এঁরাই ভাঙন নিয়ে ভোটবাবুদের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “ভাঙন তো আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা। তাই বলে ভোট দেব না? স্কুল ভোটে অংশ নেওয়া আমাদের কর্তব্য। স্কুলে তো আমাদের ছেলেমেয়েরাই পড়ে।”
এত মানুষ ভোট দেওয়ায় স্বস্তিতে রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্তারা। ডোমকলের তৃণমূলের সভাপতি মোহিত দেবনাথ বলেন, ‘‘ভাঙনের ব্যথা ভোলা সহজ না। তবু গ্রামের মানুষ স্কুল ভোটে যেমন উৎসাহ দেখালেন, ভাবা যায় না।’’
সিপিএমের রানিনগর জোনাল কমিটির সম্পাদক সাজাহান আলিও বলেন, “ভাঙন এঁদেরর কাছে গা সওয়া। ফলে নির্বাচনের দিনে ভাঙন নিয়ে ভাবতে রাজি নন কেউই।’’ ডোমকলের মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ ভোট দেওয়ায় আমরা খুশি।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র মণ্ডলের বক্তব্য, “এ বার আমরা স্কুলের তরফে ভাঙন রোধের কাজে নামব।” |