আসছে বিশ্বকর্মা পুজো। সেইজন্য গত ১৫ দিন যাবত শহরের পঞ্চাননতলা রেলগেটের সামনে গাড়ি আটকে শুরু হয়েছে চাঁদা তোলা। নেতৃত্বে লরিচালক ও খালাসির পৃথক তিনটি ইউনিয়ন। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, চাঁদা আদায়ের দাপটে বহরমপুর শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে তৈরি হচ্ছে যানজট। পঞ্চাননতলা রেলগেট থেকে বহরমপুর বাস টার্মিনাসের দূরত্ব বড় জোর দেড় কিলোমিটার। যানজটের জেরে সেই দূরত্ব পার হতেই পেরিয়ে যাচ্ছে আধ
ঘণ্টারও বেশি সময়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চাননতলা রেলগেটের একশো মিটারের মধ্যে রয়েছে লরির চালক ও খালাসিদের পৃথক ৩টি ইউনিয়ান। যাত্রী দুর্ভোগের কথা অস্বীকারও করছেন না ওই তিনটি ইউনিয়ানের কর্তারা। তবে তার জন্য তাঁরা নিজেদের নয়, দায়ী করছেন বিরোধী পক্ষকে। পুলিশের নাকের ডগাতেই জাতীয় সড়ক আটকে চাঁদা আদায়ের জুলুম চলছে। তবুও মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের দায় সারা জবাব, “খোঁজ নিয়ে দেখছি কি ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়।” |
বহরমপুর শহরের পঞ্চাননতলা রেলগেটের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে রয়েছে কংগ্রেস পরিচালিত লরির চালক ও খালাসিদের ইউনিয়ন। বছর কুড়ি ধরে ওই ইউনিয়ানের পক্ষ থেকে রাস্তা আটকে বিশ্বকর্মা পুজোর চাঁদা আদায় করা হয়। পরে রেলগেটের পশ্চিম দিকে রাস্তার পাশে হয় সিপিএম পরিচালিত লরির চালক ও খালাসিদের ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ানও ২০০৫ সাল থেকে রাস্তা আটকে বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য চাঁদা আদায় করে। ওই দু’টি ইউনিয়ন ভবনের মাঝে গত বছর গড়ে উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত লরির চালক ও খালাসিদের ইউনিয়ন। তাঁরাও গত বছর থেকে একই ভাবে রাস্তা আটকে বিশ্বকর্মা পুজোর চাঁদা আদায় করছে। লরি চালক কিষাণ মান্না বলেন, “এ ভাবে রাস্তা আটকে চাঁদা আদায়ের জুলুমে যানজট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো আর কোনও উপায় নেই। তাই মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে এই অন্যায়।” ভোগান্তির কথা বলছেন নিত্যযাত্রীরাও।
গাড়ি আটকে ওই তিনটি ইউনিয়নের চাঁদার জুলুম বাজির সঙ্গেই রয়েছে যানজটের আরও দু’টি কারণ। বছর ছয়েক ধরে ওই এলাকাতেই রাস্তায় পুরসভার পক্ষ থেকে টোলট্যাক্স আদায় করা হয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে ওই রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে অনেকগুলি। ওভার ব্রিজ না থাকায় পঞ্চাননতলা রেলগেটটি ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৬ বার বন্ধ করতে হয়। তার উপর রয়েছে মালগাড়ি। সব মিলিয়ে পঞ্চাননতলার যানজটের জেরে প্রায় সব সময়ই রেলগেটের দু’ প্রান্তে যানবাহনের লাইন লেগে থাকে। |
কংগ্রেস পরিচালিত ইউনিয়নের সহ-সভাপতি লিয়াকত শেখ বলেন, “রাস্তার পাশে জায়গা থাকলে সেখানে গাড়ি নামিয়ে নিয়ে চাঁদা আদায় করা যেতো। সেই সুযোগ না থাকায় রাস্তার উপরেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমাদের চাঁদা তুলতে হয়।”
সিপিএম পরিচালিত ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আমোদ শেখের দাবি, “চাঁদা আদায়ের জন্য আমরা জবরদস্তি করি না। আমাদের চাঁদা আদায়ের জন্য কোনও রকম যানজট হয় না। অন্য ইউনিয়নগুলোই জবরদস্তি চাঁদা আদায় করে। তাই যানজট হয়।” সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “লরির চালক-খালাসিদের তো বছরে আনন্দ ফূর্তি করার সময় বলতে বিশ্বকর্মা পুজোর চারটে দিন। ফলে চাঁদা তো তুলতেই হয়।”
তৃণমূল পরিচালিত ইউনিয়ানের অফিস সম্পাদক তাপস বিশ্বাস বলেন, “পুলিশকে বলেছি, তিনটি ইউনিয়নকে নিয়ে আলোচনা করে রাস্তা আটকে চাঁদা তোলা বন্ধ করতে। কিন্তু পুলিশ তা করেনি। তাই অন্যরা যখন তুলছে, তখন আমরাও চাঁদা তুলছি।” তিনি বলেন, “অন্য জেলায় আমাদের জেলার লরি চালকদের পুজোর চাঁদা আদায়ে জবরদস্তি করা হয়। তার বদলা নেওয়ার মানসিকতা থেকেও এখানে বিশ্বকর্মা পুজোর চাঁদা আদায় করা হয়।”
কারোর আনন্দ আবার কোথাও বা বদলা নেওয়ার মানসিকতা। আবার এর ফাঁকে পড়ে ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষেরই। |