|
|
|
|
মুড়ি, চানাচুর নিয়ে বাপের বাড়ি এলেন উমা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ঘাটালের শ্বশুরবাড়ি থেকে ‘ত্রাণ’ নিয়ে বাপের বাড়ি পাঁশকুড়ায় এলেন উমা।
ফি বছর বর্ষায় ভাসে ঘাটাল। তখন পাঁশকুড়ার বাপের বাড়িতে আশ্রয় নেন ঘাটালের জগন্নাথপুর এলাকার বধূ উমা রুইদাস। এ বার উল্টো ছবি। কাঁসাইয়ের বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়েছে বাপের বাড়ি। তাই রবিবার প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ উজিয়ে বাপের বাড়ি পৌঁছলেন উমাদেবী। সঙ্গে সাড়ে তিন কেজি মুড়ি, আড়াইশো চানাচুর, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কার পুঁটলি। উমার কথায়, “দু’দিন হয়ে গেল সরকারি ত্রাণ পৌঁছল না। ফোনে তা জানতে পেরে যতটা পেরেছি নিয়ে চলে এসেছি।” |
|
জলমগ্ন পাঁশকুড়ার ১০ নম্বর ওর্য়াড।—নিজস্ব চিত্র। |
বস্তুত, খটখটে রোদেও জল কমার লক্ষ্মণ নেই দুই মেদিনীপুরের জলমগ্ন এলাকাগুলিতে। উল্টে কোনও কোনও এলাকায় নতুন করে জল ঢুকছে। পাঁশকুড়া ব্লকে ৫০টি ও তমলুক ব্লকের ৩০টি গ্রামে জল ঢুকেছে। সন্ধ্যায় জল ঢুকতে শুরু করে তমলুক ব্লকের নীল কুণ্ঠিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে। প্রতাপপুর হাইস্কুলের কাছেই তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের প্রায় আধ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে এ দিন হু হু করে জল বইছে। বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। অতিরিক্ত জেলাশাসক সাগর সিংহ জানান, তমলুকে আটটা ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। তবে, জল ছাড়ার পরিমাণ কমায় কাঁসাই নদীর জলস্তর এখন বিপদসীমার নীচে। |
|
জল সরেনি ঘাটালেও।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিকে, রানিহাটীর কাছে কাঁসাই বাঁধের ভাঙা জায়গা দিয়ে বিপুল গতিতে জল ঢোকায় পাঁশকুড়া ব্লকের রঘুনাথবাড়ি, খণ্ডখোলা, তমলুক ব্লকের অনন্তপুর ১, ২, শ্রীরামপুর ১, ২ নতুন করে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পাঁশকুড়ার বেশ কিছু জায়গায় ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছে। এ দিন প্রতাপপুর হাইস্কুলের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, দুর্গতদের মধ্যে যেমন রয়েছে মাসখানেকের শিশুকন্যা দীপশিখা, তেমনই ঠাঁই পেয়েছে আদরের টিয়া ‘মিঠু’ও। বাড়িতে রোজ দুধ-ভাত পেলেও ত্রাণ শিবিরে খাঁচার ভিতর মিঠুর জন্য বরাদ্দ সরকারি খিচুড়ি। দীপশিখাকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন ঠাকুমা দীপ্তি দত্ত। তিনি বলেন, “শুক্রবার কাঁসাইয়ের বাঁধ ভাঙার পর থেকেই জল ঢোকার আশঙ্কায় ছিলাম। শনিবার দুপুরে বাড়ির কাছে জল ঢুকতে শুরু করলে এখানে চলে আসি। এখন বাড়িতে এক মানুষ সমান জল।”
এ দিকে জলমগ্ন এলাকায় ত্রাণ বিলি নিয়ে পাঁশকুড়ায় বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিন দুপুরে রানিহাটি এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যান পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সইদুল ইসলাম খান। সেই সময় বাসিন্দারা ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভে যোগ দেওয়া উদয় অধিকারী, শেখ সোলেমানরা বলেন, “দু’দিন ধরে গ্রামের ভিতরে আটকে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ-সহ বহু বাসিন্দা। কিন্তু গ্রামের ভিতরে কোনও সরকারি ত্রাণ পৌঁছনো হচ্ছে না। অথচ প্রশাসন বলছে ত্রাণ সর্বত্র পৌঁছেছে।” প্রতাপপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আমড়াগোহালেও ত্রাণ বিলি নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিলি নিয়ে এ দিন পাঁশকুড়া বিডিও অফিসে সর্বদল বৈঠক করেন তমলুকের মহকুমাশাসক দেবাশিস বিশ্বাস। |
|
|
পাঁশকুড়ার গ্রামে বন্যা দুর্গতদের
উদ্ধারে
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
জল-যন্ত্রণা। বাড়িতে জমা জলেই বাসন ধোয়া।
কেশপুরের বিশ্বনাথপুর গ্রামে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
|
কংসাবতীর জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ এ দিন অনেকটাই কমে হয়েছে ৫ হাজার কিউসেক। তবুও ঘাটাল পুরসভার ১২টি ওয়ার্ড-সহ ব্লকের দশটি পঞ্চায়েত এবং দাসপুর ১ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রাম এখনও জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীর আশ্বাস, “নতুন করে জল ছাড়া না হলে বড় বিপদ আর হবে না।” আর ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই আশ্বাস দেন, “বর্ষা কমলেই দ্রুত বাঁধ সংস্কারের কাজ হবে। তা ছাড়া ঘাটাল শহর সংলগ্ন দু’নম্বর চাতালে সেতু তৈরির ব্যাপারে সেচমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেয়েছি।”
এখনও ঘাটাল-চন্দ্রকোনা এবং ঘাটাল-মেদিনীপুর (ভায়া নাড়াজোল) সড়ক জলের তলায় রয়েছে। মোটামুটি চারশোর বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া ফুল, সব্জি চাষ-সহ গোটা মহকুমায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মহকুমার অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন। |
|
আশ্রয়ের খোঁজে। পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুরের গ্রামবাসীরা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
ঘাটালের মনসুকা ১ ও ২, দেওয়ানচক, মোহনপুর, আজবনগর ১ ও ২, দাসপুর ১ ব্লকের নাড়াজোল, রাজনগর, সরবেড়িয়া ১ ও ২ পঞ্চায়েতে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, নৌকায় করে জলমগ্ন এলাকায় পানীয় জলের পাউচ বিলি করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, সুবর্ণরেখার জলে নতুন করে জলমগ্ন হল এগরা ১ ব্লকের সাহারা পঞ্চায়েত এলাকার আলিপুর, সাহারা, চকমুরারি এবং জুমকি পঞ্চায়েত এলাকার নেহালিয়া। সাহারার পঞ্চায়েত প্রধান শান্তিলতা দাস জানান, সুবর্ণরেখার জল ওড়িশার ভোগরাই থানা এলাকা দিয়ে ঢুকে ওই এলাকা জলমগ্ন করেছে। |
পুরনো খবর: ভাঙা বাঁধ দেখতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়লেন মন্ত্রী |
|
|
|
|
|