চট করে দেখলে দু’জনে কোনও মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দু’জনেই সাদা-কালো বোর্ডের দুনিয়ায় জাতীয় সেরা। তবু মিলের চেয়ে অমিল বেশি, শুধু একটা বাদে।
এক জনের পছন্দের ঘুঁটি সাদা। অন্য জন আবার কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলেই গত দু’বারের জাতীয় সেরা। প্রথম জন দিল্লিওয়ালি। দ্বিতীয় জন আবার দমদমের তরুণী। সাদা-কালো বোর্ডের বাইরে প্রথম জন মডেলিং জগতের সুন্দরী হলে, দ্বিতীয় জন মননশীল সাহিত্যপ্রেমী।
প্রথম জন অবসরে র্যাম্পে হাঁটলে, দ্বিতীয় জন সে সময় ‘ডান্স ফ্লোর’-এ সালসা, লম্বার্ডি নিয়েই মেতে থাকেন।
তা হলে মিল? মিল, সমাজচেতনায়। মিল, মুম্বই-কাণ্ড নিয়ে বলতে গেলে দু’জনের আগুন ঝরা গলা। শহরে ৪০ তম মহিলা জাতীয় দাবায় অংশ নিতে এসে প্রতিযোগিতার শীর্ষ বাছাই তানিয়া সচদেব যখন মুম্বই-এর গণধর্ষণ নিয়ে প্রতিবাদে সরব, তখন কলকাতার মেরি অ্যান গোমস-এর গলায় আবার যুবরাজ সিংহ-র সুর। দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান-ডে ম্যাচের সেরা হয়ে যুবি যেমন তা উৎসর্গ করেছিলেন ওই তরুণীকে, কলকাতার মেরি ঠিক তেমনই বলছেন, “এ বার চ্যাম্পিয়ন হলে হ্যাটট্রিক হবে। যদি হয় তা হলে সেই খেতাব মুম্বইয়ের ওই মহিলার সঙ্গে দেশের নারীশক্তিকেই উৎসর্গ করব।” আর তানিয়ার বক্তব্য, “দিল্লি কাণ্ডের পর তো মোমবাতি নিয়ে সবাই হাঁটল। কিছু হল কি? কঠোর শাস্তি চাই। এ ভাবে আর কত দিন?” |
এক ফ্রেমে তানিয়া-মেরি। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
সোমবার বাইপাসের ধারে অভিজাত ক্লাবে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর হাত ধরে শুরু হতে চলা ৪০ তম জাতীয় দাবার আসরে দেশের সেরা দুই কন্যার এই আগুন জ্বলবে তো? মেরি বলছেন, “আমরা দু’জন তো নই। আরও দশ জন রয়েছেন। সাত জন গ্র্যান্ড মাস্টার। পাঁচ জন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। রাউন্ড রবিন লিগে কে জিতবে কেউ জানে না।”
২০০৬-০৭-এর পর তানিয়া আর চ্যাম্পিয়ন হননি। মহিলাদের প্রথম দুই হরিকা, হাম্পি নেই। এ বার হবে? শুনে আলতো হেসে ভারতীয় দাবার ‘মারিয়া শারাপোভা’ বলছেন, “দশ বছর খেলছি। ঘুরে দাঁড়ানোর কী আছে?” আর বাকিরা? প্রথম ম্যাচে তানিয়ার প্রতিপক্ষ পদ্মিনী রাউত ড্রয়ের পরেই মুখ ডুবিয়ে ফেললেন ‘চেস পাজল বুক’-এ। মেরির প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী মিশেল ক্যাথরিনা তখন বলছেন, “মেরিকে হারাতেই হবে।”
দ্বাদশ কন্যার এই টুর্নামেন্টে কে শেষ পর্যন্ত জিতবেন, আপাতত তা যেন গৌণ। মুখ্য ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ‘ম্যাচ’টা জেতা যাবে কি না! |