সারা বছরই কার্যত জলে ডুবে রয়েছে শ্রীরামপুরের মাহেশের সঙ্গে মল্লিকপাড়া বা প্রভাসনগরের সংযোগকারী আন্ডারপাসটি। ফলে অনেকটা ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। নতুবা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইন পেরোতে হচ্ছে তাঁদের। পুরসভা সূত্রে খবর, পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় কেএমডব্লিউএসএকে একের পর এক চিঠি লিখেছেন স্যুয়ারেজের জীর্ণ পাইপটি সারানোর জন্য। সম্প্রতি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। কয়েক দিন আগে অবশ্য ওই প্ল্যান্টের পুরনো পাইপ বদলে নতুন পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই কাজে আপাতত ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অমিয়বাবু বলেন, “আশা করছি নতুন পাইপ বসলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।” যদিও তা সারালেই সমস্যা কমবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী।
আন্ডারপাসটির পশ্চিমে রয়েছে নতুন মাহেশ, প্রভাসনগর, মল্লিকপাড়া, তারাপুকুরের মতো জনবহুল এলাকা। এই সব এলাকা থেকে বহু ছাত্রছাত্রী অন্যপ্রান্তে স্কুলে যায়। জীবিকার প্রয়োজনে কারখানাতেও যেতে হয়। সামান্য দূরেই রয়েছে জিটি রোড। সাইকেল, মোটরবাইক নিয়েও অনেকে যাতায়াত করেন। শ্রীরামপুর স্টেডিয়াম, স্পোর্টিং-সহ বিভিন্ন মাঠে ছেলেমেয়েরা খেলতে আসে। সর্বত্রই যোগাযোগের মাধ্যম আন্ডারপাসটি। |
জলমগ্ন হয়ে রয়েছে আন্ডারপাস। তাই বাধ্য হয়ে রেল লাইন দিয়েই চলছে যাতায়াত।—নিজস্ব চিত্র। |
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পিন্টু নাগের উদ্যোগে একটি সাবমার্সিবল্ পাম্প বসানো হলেও সমস্যার সমাধান অবশ্য হয়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের নিকাশি জল ওই প্ল্যান্টে শোধনের পরেই পাইপের মাধ্যমে গঙ্গায় গিয়ে পড়ার কথা। শ্রীরামপুর পুর-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্ল্যান্টের পাইপ জীর্ণ। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (এসটিপি) কর্মীরা নোংরা জল শোধন না করেই ফেলে দেওয়া দেন। সেই জলেই ডুবে যায় ওই আন্ডারপাস। পিন্টুবাবুর অভিযোগ, “পুরসভার বদনাম করতেই সিটু প্রভাবিত ‘এসটিপি’র কর্মীরা রেল লাইনের ধারে জল ছাড়েন। তাতেই আন্ডারপাসে কোমরজল দাঁড়িয়ে যায়।” এ নিয়ে সম্প্রতি তৃণমূলের লোকজন এসটিপিতে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, প্ল্যান্টের সিটু সমর্থক কর্মীদের গায়ে হাত তোলে তৃণমূলের লোকেরা। সিপিএমের স্থানীয় লোকাল কমিটির সম্পাদক সন্তোষ চক্রবর্তী বলেন, “ওঁদের পাম্পই ঠিক মতো কাজ করছে না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ওঁরা ভাল সাজতে চাইছেন।”
আগেও স্টেশনের পূর্বপাড়ে নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউ, বিপি দে স্ট্রিটের মতো রাস্তাগুলিতেও অল্প বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যেত। তাড়াতাড়ি জল নামতও না। এ বার অবশ্য জমা জল দ্রুত সরে গিয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, মাটির নীচে নিকাশি চ্যানেলগুলি ভালভাবে পরিষ্কার করাতেই সমস্যা দূর হয়েছে।
স্থানীয় মানুষের অবশ্য ক্ষোভ, এলাকায় নিচু জায়গায় একের পর এক বাড়ি তৈরি হচ্ছে। যে জলাশয়টি এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম সহায়ক ছিল, সেই খালটির অস্তিত্বই এখন সঙ্কটে। ফলে জল নেমে আসছে রেললাইনের দিকে। পুর-প্রধান বলেন, “রেললাইনের পশ্চিমপাড়ের অনেক জায়গাই নিচু। এর সমাধান হিসেবে জেলাস্তরে একটি ওয়াটার লিফ্টিং স্টেশনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে যাতে জমা জল চাতরার খালে গিয়ে পড়তে পারে।” |