সিরিয়া সরকারের বিরোধিতায় একজোট আমেরিকা-ব্রিটেন-ফ্রান্স। বদলা নেবে বলে হুমকি দিচ্ছে আল কায়দা সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী আল নুসরাও। চাপের মুখে পড়ে শেষমেশ রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি দলকে ‘রাসায়নিক হানা’র তদন্ত করতে সিরিয়ায় আসার অনুমতি দিল আসাদ সরকার।
গত ২১ অগস্ট রাসায়নিক গ্যাস হানায় দামাস্কাস লাগোয়া তিন শহরতলি এলাকা আইন তারমা, জামালকা এবং জোবারে অন্তত ১৩০০ লোক নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে এখনও।
তবে চিকিৎসকরাই জোর গলায় বলছেন, অন্তত ৩৫৫ জনের মৃত্যুর লক্ষণ দেখে স্পষ্ট, রাসায়নিক হামলাই ঘটেছে। প্রথমে ঘটনার কথা অস্বীকার করেছিল আসাদ সরকার। পরে তারা বলে, বিদ্রোহীরাই সরকারের ঘাড়ে দায় চাপাতে এ সব করেছে। কিন্তু অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ সব কিছু সত্ত্বেও ডাক্তাররা তাঁদের বক্তব্যে একরোখা।
এমনই এক চিকিৎসক মজিদ আবু আলি। গত কয়েক দিন ধরে আস্তানা দামাস্কাসের অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির। মজিদ চোখের সামনে মরতে দেখেছেন শ’য়ে শ’য়ে নারী-পুরুষ-শিশুকে। তাঁদের চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল। বেঁকে গিয়েছিল শরীর। |
সিরিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-মোয়াল্লেমের (ডান দিকে)
সঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি আঙ্গেলা কেন। ছবি: এএফপি |
হাঁ হয়ে থাকা মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল গ্যাঁজলা।
সাংবাদিক দেখে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বলে উঠলেন মজিদ, “আমরা চাই, গোটা দুনিয়া জানুক কী চলছে এখানে। নিষ্পাপ মানুষগুলোকে কী সহ্য করতে হচ্ছে। রাজনীতি করতে নয়, হত্যালীলা থামাতেই এ সব বলছি।” মানুষ তো মরছেই, যে চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মৃতপ্রায় মানুষগুলোকে বাঁচাতে, ক্রমে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন তাঁরাও। মৃত্যুদূত বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত কালই সতর্কবার্তা দেন সিরিয়াকে। রাসায়নিক হানার পিছনে আসাদ সরকারের হাত যদি প্রমাণ হয়ে যায়, কঠিন মূল্য দিতে হবে তাদের। শনিবার এ বিষয়ে ফোনে টানা ৪০ মিনিট ধরে কথা হয় দুই রাষ্ট্রনেতার। তার পরই এ কথা ঘোষণা করেন তাঁরা।
ইরান অবশ্য এতে বেঁকে বসে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আমেরিকা যদি নাক গলায়, “পরিণতি খুব খারাপ হবে।” বরং তারা চায় রাষ্ট্রপুঞ্জ আসুক সিরিয়ায়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদও সিরিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ইজরায়েলও প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। এমনকী আল কায়দা সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল নুসরা’ও সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে। আল নুসরা হুমকি দিয়েছে, রাসায়নিক হানার বদলা নিতে তারা আসাদের সমর্থক গোষ্ঠীর উপর রকেট হানা চালাবে।
চাপে পড়েই শেষমেশ রাজি হয়ে গিয়েছে আসাদ সরকার।
নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি আঙ্গেলা কেন সিরিয়ার বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকেই সবুজ সঙ্কেত দেয় সরকার। তার পরেই ঘোষণা করা হয়, অধ্যাপক আকে সেলস্টোরেমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তদন্ত করতে যাবে দামাস্কাসে।
|