স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে নিখোঁজ। মেয়ের সঙ্গতি নেই। অসহায় বৃদ্ধা তাই সংসার পেতেছেন ঢাকা নর্দমার উপর। রক্তের সর্ম্পকের কেউ পাশে না থাকলেও বৃদ্ধার সাহায্য এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ওই বৃদ্ধা ‘বুধি মাসি’ নামে পরিচিত। তবে তাঁর ভাল নাম সাবিত্রী কুন্ডু। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে সাহেববাগান এলাকাতেই ওই মহিলার বাড়ি ছিল। স্বামী সুবীরবাবু বেঁচে থাকাকালীন তিনি বাড়ি বিক্রি করে দেন। চলে আসেন ভাড়া বাড়িতে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন তিনি। কিছুদিন পরে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় ছেলে। এরপর কখনও কাটোয়ায় বাপের বাড়িতে, কখনও দুর্গাপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। বছর চারেক আগে রাস্তায় পড়ে কোমরে আঘাত পান তিনি। অর্থের অভাবে ঠিক মতো চিকিৎসা হয়নি। ক্রমেই নষ্ট হয়ে যায় তাঁর হাঁটাচলার ক্ষমতা। আত্মীয়রা আস্তে আস্তে তাঁর প্রতি আগ্রহ হারায়। |
মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ওই বৃদ্ধা কখনও কাটোয়া শহরের ঘোষহাট, কখনও কাটোয়ার বাসস্ট্যান্ডে দিন কাটাতেন। কিছু দিন এইভাবে চলার পর কয়েক মাস আগে তিনি আসেন কাটোয়ার সাহেববাগানের রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের কাছে। সেখানে একটি ঢাকা নর্দমার উপর থাকতে শুরু করেন তিনি। তারপর থেকে এটাই বুধিমাসির ঠিকানা। ঘটনা হল, এই ঠিকানা থেকে কয়েক পা দূরেই তাঁর মেয়ের বাড়ি। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে ‘জায়গা’ না থাকায় মাকে নিয়ে গিয়ে রাখতে অপারগ তাঁর মেয়ে। বাড়ি লাগোয়া একটি মুদিখানা দোকানে দাঁড়িয়ে বুধিমাসির মেয়ে জানালেন, “আমার স্বামী নেই। শ্বশুরবাড়িতে মাকে এনে রাখব এমন ঘর নেই। তবে কেউ মাকে সাহায্য করতে চাইলে আমি পাশে দাঁড়াতে পারি।”
পরিবারে ব্রাত্য হয়েও অবশ্য বুধিমাসির কারওকে কিচ্ছু বলার নেই। তাঁর ‘সংসারে’ রয়েছে থালা, গ্লাস, মশারি এমনকি নতুন কাপড়ও। পথচলতি মানুষ তাঁকে টাকা দিতে চাইলেও তিনি তা নিতে নারাজ। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম গোস্বামী, অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর চক্রবর্তীরা তাঁর নিয়মিত খোঁজ নেন। কেউ তাঁকে দেন চা-মুড়ি, দু বেলা ভাত, আবার কেউ তুলে দেন স্নানের জল। স্থানীয় বাসিন্দারা বৃদ্ধার কথা কাটোয়া পুরসভাকে জানিয়েছিলেন। পুরসভার পক্ষ থেকে বৃদ্ধাকে ‘নতুন ঘর’ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি রাজি হননি।
কারণ এখানেই ‘ভাল’ আছেন তিনি। অল্প হেসে আস্তে আস্তে বলেন, “এখানে তো সবই আছে বাবা। আমার এই ভরা সংসার ছেড়ে শেষ বয়সে আমি আর কোথাও যেতে চাই না।” |