ছেলের স্মৃতি ধরে রাখতে স্কুলে পাঠাগার গড়ে দিলেন শিক্ষিকা
র জুড়ে ছড়িয়ে থাকত নানা রকমের বই। তাতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকতেই পছন্দ করতেন একমাত্র ছেলে। বছরখানেক ধরে সে সবে বইয়ে আর হাত পড়ে না। সেই ছেলেই যে হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পুত্রশোকের পাষাণ বুকে আঁকড়ে বসে না থেকে ছেলের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে নিজের স্কুলে একটা আস্ত পাঠাগারই গড়ে ফেললেন প্রধান শিক্ষিকা সুপ্রিয়া মুখোপাধ্যায়।
কুলটির উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুপ্রিয়াদেবী কর্মজীবনের সঞ্চয় স্কুলে থেকে গড়েছেন পাঠাগার ও পাঠভবন। শনিবার তার উদ্বোধন করেন আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী সুখানন্দ। সেখানেই দান করলেন নিজের ছেলের নানা বইপত্রও। ছেলের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এটাই অবশ্য সুপ্রিয়াদেবীর প্রথম পদক্ষেপ নয়, এর আগেও আসানসোলের ব্রেইল অ্যাকাডেমিতে একটি দন্ত চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে দিয়েছেন তিনি।
উদ্বোধনের পরে পাঠাগারে স্বামী সুখানন্দের সঙ্গে সুপ্রিয়া মুখোপাধ্যায়। ছবি: শৈলেন সরকার।
সুপ্রিয়াদেবীর একমাত্র ছেলে স্বর্ণরেণু মুখোপাধ্যায় পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। পাঁচ বছরের মেয়েকে সাঁতার শেখাতে সুইমিং পুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মেয়েকে উপরে রেখে নিজেই আগে নেমেছিলেন জলে। আর ওঠেননি। মিনিট ২৫ পরে জল থেকে তোলা হয় তাঁর নিথর দেহ। বছর আঠাশের তরতাজা ছেলেকে হারিয়ে প্রথমের দিকে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন সুপ্রিয়াদেবী। সেই শোক থেকে নিস্তার পেতেই ছেলের ভাললাগার বিষয়গুলি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হন তিনি।
সুপ্রিয়াদেবী জানান, অফিস ঘরের মাঝামাঝি কাঠের আড়াল তুলে ছোট একটি অস্থায়ী পাঠাগার ছিল স্কুলে। ছাত্রীরা সেখানে যেতে চাইত না। বসে পড়ার মতো পরিস্থিতি বা ভাল বইও ছিল না সেখানে। কিন্তু একটি সম্পূর্ণ পাঠাগার গড়া তো সহজ কথা নয়। একটা আস্ত ঘরের সঙ্গে চাই বই রাখার আলমারি ও অন্য আসবাবপত্র। বসে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজন চেয়ার-টেবিলও। সে অনেক টাকার ব্যাপার। অনেকের কাছে তদ্বির করেও সেই ইচ্ছে এত দিন পূরণ হয়নি। সুপ্রিয়াদেবী বলেন, “শেষ পর্যন্ত ছেলের স্মৃতিতে কর্মজীবনের সঞ্চয় থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে এই পাঠাগার ও পাঠভবনটি বানিয়েছি। খুব তৃপ্তি হচ্ছে।” পাঠাগারে নিজেই দিয়েছেন নানা ধরনের প্রায় ছ’শো বই। নানা আসবাবপত্র, পাখা, আলোর সঙ্গে রেখেছেন একটি টেলিভিশনও। প্রধান শিক্ষিকা জানান, তাঁর দেওয়া বইগুলির মধ্যে অর্ধেকই তাঁর ছেলের।
শনিবার পাঠাগারের উদ্বোধন ঘিরে স্কুলে ছিল সাজো সাজো রব। দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হওয়ায় খুশি ছাত্রী ও অন্য শিক্ষিকারা। দুধ সাদা ভবনটি সাজানো হয়েছে ফুলমালা দিয়ে। সাদা-কালো কলকা আঁকা মার্বেলের মেঝেতে ফুলের সাজি হাতে স্কুলের সবুজ-সাদা পোশাকে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ছাত্রীরা। উদ্বোধন উপলক্ষে ছিল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজনও। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারি বলেন, “পরিচালন সমিতির হাতেই প্রধান শিক্ষিকা পাঠাগার গড়ার টাকা তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর এই উদ্যোগের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.