|
|
|
|
ফোন আমার কেমন কেমন করে
ফোনটা না থাকলেই মন কেমন। হাজারো কাজ, অ্যাপস্ আর গেমিং-টা হবে কী করে শুনি!
সেলিব্রিটিদের নানা ফোন বাতিকের সন্ধান দিলেন ইন্দ্রনীল রায় |
কেউ ফোনে মেয়ের সঙ্গে মায়ামিতে স্কাইপে চ্যাট করেন, তো কারও ফোনে রয়েছে কমপক্ষে এক হাজারটা গান। কেউ আবার নিজের মনের কথা ফোনে রেকর্ড করে রাখেন তো কেউ সময় পেলেই ‘ফ্রুট নিনজা’ খেলেন।
মোবাইল ফোন এবং সেলিব্রিটিদের এ যেন এক অদ্ভুত যোগাযোগ। সারাদিন তাঁদের ফোনে এত ফোন আসে যে তাঁরা প্রায় সবাই বিরক্ত। কিন্তু ফোন ছাড়াও যে একদিনও তাঁদের পক্ষে থাকা অসম্ভব!
তা কী ফোন ব্যবহার করেন তাঁরা? কোন অ্যাপ্লিকেশনটা ছাড়া চলে না তাঁদের? আর কোন দোকান থেকেই বা সব চেয়ে বেশি ফোন কেনেন সেলিব্রিটিরা? কার ফোন হ্যাবিটস কী রকম?
নিজের ফোনটা সাইডে রেখে তা হলে পড়তে থাকুন।
সময় পেলেই ছেলের ডাউনলোড করা গেমস খেলি
“আমি ব্ল্যাকবেরি বোল্ড আর স্যামসাং গ্যালাক্সি ব্যবহার করি। বিবিএম, হোয়াটসঅ্যাপ তো রয়েছে। যেটা কেউ জানে না, আমি সুযোগ পেলেই ফোনে পেন্সিল স্কেচ করি জানেন,” সেদিন বলছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
স্কেচ ছাড়াও প্রসেনজিতের ফোনে রয়েছে তাঁর ছেলের ডাউনলোড করে দেওয়া হাজারো গেমস। “ছেলে হস্টেলে যাওয়ার আগে সব ডাউনলোড করে দিয়েছিল। ওর গেমসগুলোই আমি খেলি। টেম্পল রান, সাবওয়ে সার্ফারস, কার পার্কিং, ডব্লুডব্লুই রেসলিং। এ ছাড়াও আমার ফোনে ইউটিউব খুব চলে। কোনও নতুন সিনেমার ট্রেলার হোক বা কোনও ছবির ফার্স্ট লুক— সবক’টাই আমি ফোনে দেখি। এ ছাড়াও খবরের কাগজের অ্যাপসগুলো নিয়মিত চেক করি। ফোনটাই আমার অফিস,” বলছিলেন প্রসেনজিৎ।
|
|
ফোন ছাড়া ঋতুপর্ণা শেষ
প্রসেনজিতের মতোই ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কাছেও ফোনটাই অফিস। ঋতু ব্যবহার করেন তিনটি ফোন। দেড় লক্ষ টাকার ব্ল্যাকবেরি পোর্শ, গত বছর পত্রিকা ক্যুইজ জিতে পাওয়া ব্ল্যাকবেরি টর্চ আর স্যামসাং গ্যালাক্সি থ্রি।
“আমার ফোন যদি কেউ একদিনের জন্যও নিয়ে চলে যায়, আমি অচল। ঋতুপর্ণা শেষ, একেবারে গন। আমার পুরো জীবনটাই চলে ফোনের উপর,” হাসতে হাসতে বলছিলেন ঋতু।
ঋতু তাঁর ফোনে সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করেন হোয়াটসঅ্যাপ আর বিবিএম। “হোয়াটসঅ্যাপ, বিবিএম ছাড়াও মেলটা ব্যবহার করি। টুইটারও চেক করি। আর আমার ছেলে অঙ্কন কিছু গেম ডাউনলোড করে দিয়েছে। সেগুলো খেলি,” বলছিলেন ঋতু।
টলিউডের দুই সুপারস্টার প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার মধ্যে ‘কী মিল’ জাতীয় প্রশ্ন ক্যুইজে করলে, সঠিক উত্তর যে তাঁদের দু’জনের ফোনেই তাঁদের ছেলেরা গেমস ডাউনলোড করে দিয়েছে তা এই স্টোরি করার আগে কে জানত!
দোকানে ডেটা ট্রান্সফার করেন না দেব
অন্য দিকে দেব ব্যবহার করেন আই ফোন ফাইভ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ফোর।
শোনা যায়, টালিগঞ্জে তিনি সব চেয়ে মোবাইল স্যাভি, সব সময় লেটেস্ট মডেল ব্যবহারে বিশ্বাসী। এ ছাড়াও দেব একটা ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে। যখনই ফোন কেনেন তখন কিছুতেই দোকানে ডেটা ট্রান্সফার করাতে চান না।
“দেব নিজের প্রাইভেসিটা রাখতে পছন্দ করে। তাই ফোন কিনে নিজের কম্পিউটার ছাড়া অন্য কোথাও ডেটা ট্রান্সফার করে না,” জানাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু।
সময় পেলেই ফ্রুট নিনজা
অন্য দিকে শ্রাবন্তী, স্বস্তিকা আর পাওলি আবার আইফোন-এর ভক্ত। যদিও পাশাপাশি অন্য ফোনও রয়েছে তাঁদের। “আমার তো আইফোনের স্ক্রিনটাও ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু ছাড়তেই পারছি না,” বলছেন শ্রাবন্তী।
শ্রাবন্তীর আইফোন না ছাড়ার আর একটি কারণ, তাঁর ফোনে রয়েছে চার হাজার ছবি। “ওগুলো কিছুতেই কম্পিউটারে ট্রান্সফার করা হচ্ছে
না। আইফোন ছাড়াও ব্ল্যাকবেরি
কার্ভ আছে। আর গেমস-এর কথা
যদি বলেন, তা হলে আমি সারাদিন ‘ফ্রুট নিনজা’ খেলি। ওই যে ফ্রুটস কাটলেই খচখচ আওয়াজ হয়,
ওটা আমার ফেভারিট,” কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেন শ্রাবন্তী।
অন্য দিকে পাওলি ব্যবহার করেন তিনটি ফোন। আইফোন ছাড়াও তাঁর রয়েছে ব্ল্যাকবেরি এবং স্যামসাং। “আমি বেশির ভাগ সময়ই টুইটার, করি ফোনে। কিন্তু গেমস খেলতে ভয় পাই জানেন? এত ব্যাটারি চলে যায় না!” বলছিলেন পাওলি।
পাওলি ফোনে গেম খেলা ছেড়ে দিলেও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের সে রকম কোনও প্ল্যান নেই।
নতুন সিনেমা ‘নির্বাসিত’র প্রি-প্রোডাকশন মিটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকেই চলছে তাঁর সুদোকু আর চেস খেলা। “চেস-টা অত নয়, সুদোকু-টা কিন্তু আমার অ্যাডিকশন। ওটা ছাড়া আমার চলে না,” শনিবার সকালে বলছিলেন চূর্ণী।
ফোন চুরি করে চোর হাজারখানেক গান পাবে
পরিচালক সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য খুব একটা গেমস খেলেন না। “আমি মেল, বিবিএম আর হোয়াটসঅ্যাপ— এই তিনটে জিনিস আমার ব্ল্যাকবেরিতে সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করি। আর হ্যাঁ, কিছু জানার দরকার হলেই গুগল-এ চলে যাই,” ‘জাতিস্মর’-এর শুট্যিংয়ের ফাঁকে বলছিলেন সৃজিৎ।
তবে সৃজিতের ফোন যদি কোনও দিন চুরি হয় তা হলে নিজেই স্বীকার করছেন, চোর দুর্দান্ত একটা গানের কালেকশন পেয়ে যাবে।
“আমার ফোনে হাজারখানেক গান রয়েছে। রয়েছে কবীর সুমনের আনরিলিজড বহু রেয়ার গান। ওগুলোর মূল্য আমার কাছে অপরিসীম,” বলেন পরিচালক।
আবির চট্টোপাধ্যায়ের ব্ল্যাকবেরিতে অবশ্য বিশেষ গান ডাউনলোড করা নেই। “আমার অত গান নেই ফোনে।
বিবিএম, হোয়াটস্অ্যাপ আর মেলটাই ব্যবহার করি। চাকরি যখন করতাম, তখন শুট্যিংয়ের মাঝে অফিসের কাজ ওই মেল-এর থ্রু দিয়েই করতাম,” বলছেন আবির।
অন্য দিকে রাইমা সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ্লিকেশন। “এই মুহূর্তে আমি ব্ল্যাকবেরি কিউ টেন ব্যবহার করি । আমার ফোনে ছবিগুলো ফোটোশপ করতে দারুণ লাগে,” বলছিলেন রাইমা।
পোস্ট প্রোডাকশন মিটিং হয় স্কাইপ-এ
অন্য দিকে ‘বস’ জিৎ তাঁর ফোনে অদ্ভুত এক কাণ্ড করেন। যখন তাঁর মাথায় কোনও আইডিয়া আসে বা কোনও ভাবনা আসে, সেগুলো তিনি তাঁর ফোনে ‘ভয়েস নোটস’ হিসেবে রেকর্ড করে রাখেন। জিতেরও দুটো ফোন। ব্ল্যাকবেরি আর আইফোন।
জিৎ যখন ভয়েস নোটস-এ নিজের ভাবনা রেকর্ড করছেন, তখন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী তাঁর মেয়ের সঙ্গে ‘ফেসটাইম’-এ কথা বলেন মায়ামিতে।
“আমার মেয়ে মায়ামিতে পড়াশুনো করছে। ওর সঙ্গে ফেসটাইমএ কথা হয়। এ ছাড়াও বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন প্রি-প্রোডাকশন মিটিং তো আমি স্কাইপ-এই সারি। এ ছাড়াও শ্যুটিংয়ের সময় ওয়েদার অ্যাপসগুলো কাজে দেয়। কোনও অচেনা জায়গায় গেলে কোথায় রেস্তোরাঁ আছে, সেটাও ‘জোম্যাটো’র মতো কিছু অ্যাপ্লিকেশন বলে দেয়,” বলছেন অনিরুদ্ধ।
টালিগঞ্জের দুই প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি ও রানা সরকারও টেলিফোন স্যাভি। লেটেস্ট অ্যাপ্লিকেশন সব থাকে তাঁদের ফোনে। মহেন্দ্র সোনি অবশ্য বেশি ব্যবহার করেন তাঁর ফোনের ক্যামেরা। “মণি এমন ছবি তোলে ওর আইফোনের ক্যামেরায় যে কবে থেকে আমরা সবাই বলছি ওকে একটা এক্সিবিশন করতে,” বলছিলেন পরিচালক বীরসা দাশগুপ্ত।
রানা আগে ব্যবহার করতেন ব্ল্যাকবেরি কিউ টেন। কিন্তু আবার ফিরে গিয়েছেন ব্ল্যাকবেরি বোল্ড-এ।
“আমার ফোনটা অফিস। আগে প্রচুর বাজে ফোন পেতাম। তবে ‘ট্রু কলার’ অ্যাপ্লিকেশনটা ডাউনলোড করার পর সেই ফোনগুলো এড়িয়ে যেতে পারি,” বলছেন রানা।
‘মা’ ফোল্ডারে সব এসএমএস থাকে
শুধু রুপোলি পরদার সেলিব্রিটিরাই নয়, রাজনীতিবিদদের ফোন ব্যবহারের নানা মজার ঘটনা রয়েছে।
জানেন কি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোবাইলে চার হাজারের ওপর এসএমএস সেভ করা আছে? জানেন কি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পছন্দ আইফোনের নানা রকম ব্যাক কভার। আর ববি হাকিমের বেশি দরকার পরে চার্জারের। “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যবহার করেন নোকিয়া ৩০১ এবং আইফোন। দিদি বহু দিন আগে ব্যবহার
করতেন নোকিয়া ই ফিফটি টু। সেই ফোনটা ওঁর এত পছন্দ ছিল যে, পরপর তিন বার ফোন বদল করেও একই ফোন ব্যবহার করতেন। তার পর পছন্দের ফোন ছিল নোকিয়া সি ৫০০। প্রথম বার নোকিয়া সি ৫০০ খারাপ হওয়ার পরে, দ্বিতীয় বার একই মডেলের ফোন ব্যবহার করতেন।
কিছু দিন আগে উনি মোবাইল বদল করে নোকিয়া ৩০১ ফোন ব্যবহার করা শুরু করেছেন। এ ছাড়াও তাঁর দ্বিতীয় ফোন হিসেবে রয়েছে আইফোন,” বলছিলেন রবি গুপ্ত।
দিদির ফোন আপডেট করতে যান তাঁর এক কর্মী। তাঁর কাছে জানা গেল, দিদির মোবাইলে চার হাজার এসএমএস স্টোর করা থাকে। ফোন বদল করলেও ওই এসএমএসগুলো তাঁর চাই। এবং একটা ফোল্ডারেই এই এসএমএসগুলো স্টোর করেন দিদি। ফোল্ডারটার নাম ‘মা’।
তাঁদের থেকেই জানা গেল ববি হাকিম ব্যবহার করেন ব্ল্যাকবেরি, আর ববি হাকিমের যেটা সব চেয়ে বেশি দরকার পড়ে, তা হল মোবাইল চার্জার।
এ ছাড়াও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আইফোনে থাকতেই হবে ‘অ্যাক্টিভ নোটস’। অন্য দিকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের লেটেস্ট ফোন বা অ্যাপস নিয়ে তেমন কোনও ফ্যাসিনেশন নেই। তাঁর পছন্দ নানা রকমের ফোনের ব্যাক কভার।
এতক্ষণ যে আপনারা নিজেদের ফোনটা সরিয়ে তারকা থেকে রাজনীতিবিদদের ফোন ব্যবহারের নানা ঘটনা শুনলেন, এ সবের থেকে আজও শত সহস্র দূরে তিনি।
‘বব বিশ্বাস’। ফোনে ছবি দেখে মানুষ খুন করলেও আজও মোবাইল ব্যবহারের ধারেকাছেও নেই শাশ্বত।
“বাবা, আগে ছিল শুধু ফোন। এখন হয়েছে টুইটার, ফেসবুক, বিবিএম, হোয়াটস্অ্যাপ, আরও কত কী! মা গো, যত যন্ত্র, তত যন্ত্রণা। ফোন ছাড়া বেশ আছি,” সব শেষে বলেন শাশ্বত।
|
সেলিব্রিটিদের ফোন-কথা |
স্মার্টফোনে আজকে ই-মেল থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট সব থাকে। আর সেলিব্রিটিদের ফোনে থাকে হাজারো নম্বর, প্রচুর এসএমএস, অনেক গসিপ। তাই তাঁদের কিছু আলাদা চাহিদা থাকে।
যেমন: |
• ফোনের ব্যাকআপ
যেন মিসইউজ না হয়
• ছবি ট্রান্সফার হলেও
সেগুলো
যেন
কোনও
কম্পিউটারে
সেভ না করা হয়
|
|
• সব এসএমএস-এর
যেন ব্যাকআপ থাকে
• ই-মেলের পাসওয়ার্ড যেন
অন্য কোথাও লিক না হয়
• ফোনের পাসওয়ার্ড যেন
অন্য কেউ জানতে না পারে |
|
|
আমি ফোনে সুযোগ পেলেই
পেন্সিল স্কেচ করি,
এ ছাড়াও আমার
ফোনে ইউটিউব খুব চলে
প্রসেনজিৎ |
আমার ফোন যদি কেউ একদিনের
জন্যও
নিয়ে চলে যায়, আমি শেষ। আমার
পুরো
জীবনটাই চলে ফোনের উপর
ঋতুপর্ণা |
কোনও অচেনা জায়গায় গেলে কোথায় রেস্তোরাঁ আছে,
সেটাও ‘জোম্যাটো’র মতো কিছু অ্যাপ্লিকেশন আমায় বলে দেয়
অনিরুদ্ধ |
আমার ফোনে হাজারখানেক গান রয়েছে।
তবে সব চেয়ে মূল্যবান, কবীর সুমনের
আনরিলিজড বহু গান। ওগুলোর মূল্য অপরিসীম
সৃজিৎ |
আমি সারাদিন ‘ফ্রুট নিনজা’
খেলি।
ওই যে ফ্রুটস কাটলেই খচখচ
আওয়াজ হয়, ওটা আমার ফেভারিট
শ্রাবন্তী |
|
তথ্য সংগ্রহে সহায়তা: আর জি সেলুলার |
|
|
|
|
|