নব্বই মিনিটে বদলের সুনামি

...চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ইউরোপের শৃঙ্গে ফের বায়ার্ন মিউনিখ।
...ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতে ছাব্বিশ বছর পর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড জার্সিকে বিদায় স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের।
...স্পেনে আবার সেই চেনা ছবি। লিগ মরসুম শেষে রেকর্ড পয়েন্ট নিয়ে লা লিগা বার্সেলোনার হাতে।

ইউরোপীয় ফুটবলের গত মরসুমের নির্যাস যদি অল্প কথায় বলতে হয়, মুখ্য ঘটনাবলি হিসেবে উপরের তিনটে আসবে পরপর। সাম্প্রতিক কালে ইউরোপীয় ফুটবলের প্রভাব ভারতের মতো এশীয় দেশগুলোয় ঢুকে পড়েছে বললে ঠিক হবে না। বোধহয় বলতে হবে, ঢুকে পড়েছে শহরের শিরা-উপশিরায়। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম চেলসি ভক্তের বাকযুদ্ধ, রাসবিহারী বা কসবায় নতুন কিছু নয়। ঠিক তেমনই আবার উত্তর কলকাতার গলিতে লোকে জমা হয়ে টিভি চালিয়ে দেয়, এল ক্লাসিকো দেখবে বলে। কিন্তু আগের মরসুমগুলোর চেয়ে এ বারের ফুটবল-মরসুম একটু আলাদা। যেমন উত্তেজনায়, তেমন নতুন আকর্ষণে। আসন্ন মরসুমে ঠিক কী কী পরিবর্তন দেখতে চলেছে বিশ্ব ফুটবল? একটু দেখে নেওয়া যাক...

১০+১১
বিশ্ব ফুটবলে এখন এই একটা ফর্মুলাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দশ প্লাস এগারো। ভুলেও ভাববেন না ফর্মুলাটা কোনও কোচের দল সাজানোর ছক বা ট্যাকটিক্স। তা হলে ব্যাপারটা কী? কী আবার, এলএম টেন প্লাস ওয়ান্ডার কিড! বার্সেলোনায় লিও মেসি-র জার্সি নম্বর দশ। এবং নেইমারের এগারো। ব্রাজিলকে বিদায় জানিয়ে ইউরোপের চৌকাঠে পা রেখেছেন কনফেডারেশনস কাপ মাতানো নেইমার। সান্তোসের প্রাক্তন সেই ‘কিড’ এখন বিশ্ব ফুটবলের ‘ওয়ান্ডার কিড’। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসির সঙ্গে যখন জুটি বাঁধবেন নেইমার, বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের রাতের ঘুম উড়তে বাধ্য। তাই চলতি মরসুমের সবচেয়ে বড় ‘ইউএসপি’ ১০+১১ ফর্মুলা-ই হতে চলেছে, কোনও সন্দেহ নেই।


গোল লাইন প্রযুক্তি
নানা বিতর্ক, নানা মতামতের পর শেষ পর্যন্ত ফুটবলদুনিয়ায় এসে গেল গোললাইন প্রযুক্তি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সব চেয়ে প্রথম ব্যবহার করা হবে ‘হক আই’ প্রযুক্তি। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোল ডিসিশন সিস্টেম’। ব্যাপারটা এ রকম প্রতিটা প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে থাকবে চোদ্দোটা ক্যামেরা। যা বলের প্রত্যেকটা মুভমেন্টের উপর নজর রাখবে। হক আইয়ের সঙ্গে সংযোগ থাকবে রেফারিদের হাতঘড়ির। বল জালে ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গে ঘড়িতে চলে আসবে গোলের সঙ্কেত।

এলএম টেন ‘ওয়ান্ডার কিড’ নেইমার


স্যর অ্যালেক্স নন,
সিংহাসনে মোয়েস
সেই চেনা ওভারকোট পরে চিউয়িং গাম খাওয়া। মাঝে মাঝে পকেটে হাত। একমাথা শ্বেতশুভ্র চুল। কোনও কিছুই আর দেখা যাবে না। তেরোটা প্রিমিয়ার লিগ থেকে পাঁচটা এফ এ কাপ— মরসুমের পর মরসুম ভরিয়ে দিয়েছেন ক্লাবের ট্রফি ক্যাবিনেট। মিউনিখ থেকে মস্কো— দলকে ইউরোপসেরা করেছেন অক্লেশে। বেকহ্যাম থেকে রোনাল্ডো, গিগস থেকে কঁতোনা— চিনিয়েছেন ফুটবলবিশ্বের মহাতারকাদের। কিন্তু সাতাশ বছর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের হটসিটে রাজত্বের পর অবশেষে অবসর নিলেন স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন। তবে ম্যান ইউ-এর ইতিহাসের মতোই তাদের ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করবেন আর এক স্কটিশ— ডেভিড মোয়েস। কিন্তু সবার প্রশ্ন একটাই— মোয়েস কি পারবেন স্যর ফার্গির ছাব্বিশ বছরের ঝলমলে রাজত্বকে যোগ্য মর্যাদা দিতে?


প্রিমিয়ার লিগে
মোরিনহো
চেলসি ডাগআউটে আবার ফিরল সেই ঔদ্ধত্যের ছায়া। দীর্ঘ ছ’বছর পরে চেলসিতে ফিরলেন হোসে মোরিনহো। এলেন বটে কিন্তু পারবেন তো? গত মরসুম রিয়াল মাদ্রিদকে একটাও ট্রফি না জেতাতে পেরে প্রশ্নচিহ্ন ওঠা কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও চেলসি সমর্থকরা আশা করছেন, আগের মতো এ বারও মোরিনহোর হাত ধরে অনেক ট্রফি পেতে চলেছে চেলসি।


গুয়ার্দিওলার
দ্বিতীয় ইনিংস
বার্সেলোনার হয়ে বারোটা ট্রফি জিতেছেন। নবজন্ম দিয়েছিলেন রেনাস মিশেলসের ‘টোটাল ফুটবল’ থিওরির। তবুও ‘বিশ্রামের’ অজুহাত দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন ক্যাম্প ন্যু। কিন্তু বেশি দিন ফুটবল থেকে দূরে থাকলেন না পেপ। ফিরলেন জার্মান ত্রিমুকুটজয়ী দল বায়ার্ন মিউনিখের ম্যানেজার হয়ে। আপাতত বুন্দেশলিগার প্রথম দু’টো ম্যাচ জিতে সঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছে গুয়ার্দিওলার বায়ার্ন। কিন্তু বিতর্কেও জড়িয়েছেন ইতিমধ্যে। সুপার কাপের ম্যাচে টিমের প্লেয়ার আলকান্তারাকে চড় কষিয়ে!


জমজমাট বুন্দেশলিগা
গত বছর ফুটবল বিশেষজ্ঞরা সবাই মোটামুটি আশা করেছিলেন যে, ওয়েম্বলি মহারণে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। কিন্তু কোথায় কী? বরং স্পেনের দুই টিমকে চিৎপাত করে ফাইনালে ওঠে দুই জার্মান টিম বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। এবং অল জার্মান ফাইনালের পরেই প্রশ্ন উঠেছে যে স্পেনের আধিপত্য কি ছিনিয়ে নিল জার্মানি? সারা বিশ্বে দুই জনপ্রিয় লিগ ইপিএল বা লা লিগা হলেও, এ বার বুন্দেশলিগা নিয়েও ফুটবল দর্শকদের আগ্রহ চরমে পৌঁছোচ্ছে।


রাদামেল ফালকাও।
এডিনসন কাভানি।
ফ্রান্সে কে নেই এখন?
যে ফরাসি লিগে এক সময় দাপটে খেলেছেন রোনাল্ডিনহো থেকে অঁরি, সে লিগে আবার প্রাণ ফেরাচ্ছেন ফালকাও, মুটিনহোর মতো তারকারা। নতুন মালিকানায় এসে ইব্রাহিমোভিচ, থিয়াগো সিলভা, কাভানি— একের পর এক তারকাদের সই করিয়েছে প্যারিস সাঁ জাঁ। একই নীতি এ বছর প্রথম ডিভিশনে ফিরে আসা মোনাকোরও। তারা তুলেছে, ফালকাও, মুটিনহো, কার্ভালহোদের। যার অর্থ ফের ফুটবল বিশ্বে নিজেদের হারানো আধিপত্য পেতে মরিয়া ফ্রান্স।


লা লিগায়
নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা
এ মরসুমেও লা লিগা জেতার প্রধান দাবিদার রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। যেখানে থাকবে নতুন এক যুদ্ধ— কার্লো আন্সেলোত্তি বনাম জেরার্দো মার্টিনো। প্যারিস সাঁ জাঁ-কে ফরাসি লিগ জিতিয়ে বের্নাবৌমুখী হয়েছেন ইতালির কার্লো আন্সেলোত্তি। পাশাপাশি টিটো ভিলানোভার জায়গায় বার্সেলোনার নতুন কোচ হয়েছেন জোরার্ডো মার্টিনো।
কে জিতবেন, সেটা দেখতেই মুখিয়ে বিশ্ব।


নতুন ভূমিকায় জিদান
কোনও রূপকথার মতো শেষ হয়নি তাঁর ফুটবল জীবন। বরং মাতেরাজ্জিকে গুঁতো মারাই ছিল ফুটবল মাঠে ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের শেষ কীর্তি। তবে যে ফুটবলারকে সমর্থকরা ডিফেন্ডারদের নাস্তানুবাদ করতে দেখতে অভ্যস্থ, তাঁকে এ বার দেখা যাবে হাতে বাঁশি নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের নতুন সহকারী কোচ হিসাবে। কিন্তু নিজের জীবনের নতুন অধ্যায়ে কতটা সফল হবেন জিদান, তা দেখতেই উন্মুখ গোটা ইউরোপ।


বিদেশি মালিকানায়
মোনাকো
গত কয়েক বছরে ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাব চলে গেছে বিদেশি মালিকানার অধীনে। সেই তালিকায় নতুন ক্লাব ফ্রান্সের মোনাকো। রুশের দিমিত্রি রাইবোলোভলেভ হয়েছেন ক্লাবের নতুন মালিক। গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড অনুযায়ী বিদেশি মালিক আব্রামোভিচ, আল মুবারকরা সাফল্য এনে দিয়েছেন চেলসি, ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মতো ক্লাবদের। সেই পথে হেঁটে কি সফল হবে মোনাকো!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.