|
|
|
|
স্যর রিচার্ডের মন্তরশক্তি
স্বপ্ন সফল করার জন্য কোনও আংটি নয়। পাথর নয়। গায়ের সঙ্গে লাগানো কোনও সুতোটুতো নয়।
স্রেফ ইচ্ছাশক্তি।
সেই মন্তরের
খোঁজ দিলেন স্যর রিচার্ড হ্যাডলি। বেঙ্গালুরুতে গৌতম ভট্টাচার্য একান্তে কথা বললেন |
স্যর রিচার্ড হ্যাডলির কাহিনিটা স্রেফ রূপকথা! পঁচিশ বছর পর তাঁকে হাতের সামনে পেয়েও মনে হতে থাকে এই মানুষটা তো ক্রিকেট মাঠের হ্যারি পটার। বা হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেন। বা গ্রিম ভাইদের গপ্পো। যা ভেবেছে, তাই করে ফেলেছে। ১৯৮৪-র এক বিকেলে ক্রাইস্টচার্চের বাড়িতে শুয়ে হ্যাডলি ঠিক করেন, তাঁকে এ বার ইংল্যান্ডের কাউন্টি মরসুমে ডাবল করতে হবে। এক
হাজার রান। একশো উইকেট। গত আঠারো বছরে যা কেউ করতে পারেনি। এর পেছনে কারণও আছে। আগের মতো আর উইকেট খোলা থাকে না। অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ দু’টো দুধভাত টিমের বিরুদ্ধে আর উইকেট নেওয়ার সুযোগ নেই। অনমনীয় হ্যাডলি তবুও ভিজুয়ালাইজ করলেন জিনিসটা তাঁর জীবনে এ ভাবে ঘটতে চলেছে।
ব্যাটে ম্যাচ ২০ ইনিংস ৩১ রান ১০১৫ গড় ৩৪। বলে ওভার ৭৫০ মেডেন ২৫০ রান ১৫০০ উইকেট ১০০ গড় ১৫।
সত্যি সত্যি যা ঘটল; ব্যাটে ম্যাচ ২৪ ইনিংস ৩৩ রান ১১৭৯ গড় ৫১। বলে ওভার ৭৭৪ মেডেন ২৪৮ রান ১৬৪৫ উইকেট ১১৭ গড় ১৪.১৫।
বেঙ্গালুরুর হোটেলে মুখোমুখি বসে স্যর রিচার্ড জানালেন ডাবল পূর্তির লক্ষ্য থেকে যখন তিনি মাত্র ১২০ রান আর ১২ উইকেট দূরে, তখন নটিংহ্যামশায়ারে বসে তাঁর শরীর পুরো ভেঙে পড়েছে। বল করা কী! মনে হচ্ছে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। তখন নিউজিল্যান্ড থেকে তাঁর মনোবিদ ফোনে বললেন, “রিচার্ড, জয়ীরা কখনও ক্লান্ত হয় না। তারা সাময়িক ক্লান্তির আরামে ভোগে। আবার নিজেদের রিচার্জ করে নেয়।” হ্যাডলি দ্রুত ফিরে গেলেন নিজের অভ্যেসে।
শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল এক মায়াবী ড্রেসিং রুম তাঁর। রূপকথার চেয়েও অলৌকিক।
আজকাল ক্রিকেট টিমের সঙ্গে মনোবিদ রাখার খুব চল হয়েছে। আমাদের সময় রুডি ওয়েবস্টার ছাড়া আর কারও সে ভাবে নাম শোনা যেত না। আমি ব্যবহার করতাম গ্রাহাম ফেল্টন নামে আমাদের দেশের এক মনোবিদকে। দারুণ উপকারও পেয়েছিলাম। ১৯৮৩-তে প্রথম আমার ডিপ্রেশন হয়। প্রথমে ভাবতেই পারিনি আমার মতো মানুষের জীবনে যে ডিপ্রেশন হতে পারে। আজকাল যে প্লেয়াররা মনোবিদের প্রতিনিয়ত সাহায্যের সুযোগ পাচ্ছে। চূড়ান্ত চাপের মধ্যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে মনোবিদ হতে পারেন সেই মানুষ যাকে সব কিছু বলা যায়। আমার মতে এদের বলা উচিত স্পোর্টস মেন্টর। নিছক ডাক্তার নয়।
|
|
ছবি: উৎপল সরকার |
একটা কথা উঠতি প্লেয়ারদের বুঝতে হবে যে ডিপ্রেশন যে-কোনও মানুষের হতে পারে। ঠিক একটা ভাল স্পোর্টস কারও যেমন চলতে চলতে সাময়িক বিগড়ে যেতে পারে। মানুষের শরীরও তাই। এখন তো ওদের লোড আরও বেশি। টি-২০, ওয়ান ডে, টেস্ট ম্যাচ, ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ সব খেলতে হয়। শরীরের উপর বিকট চাপ পড়ে। আমার নিজের আঠারো বছরের কেরিয়ারের কথা যখন ভাবি, তখন দেখি প্রায় ১০ লাখ বল করেছি গোটা জীবনে। এ বার মানুষের শরীর তো দশ লাখ ডেলিভারি করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। অম্যনুষিক চাপ পড়েছে তার ফলে। আমার রাইট হিপ রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে। বাঁ হাঁটু বদলাতে হয়েছে। বললাম না, ঠিক গাড়ির মতোই। সেরা গাড়িরও যেমন সাভির্সিং লাগে। প্রয়োজনে পার্টস বদলাতে হয়, আমাদেরও তাই।
ডিপ্রেশন হলে প্রথম স্টেপ হল সেটাকে স্বীকার করে নিতে পারা। সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা। তা হলেই সেটা সারানোর দিকে এগোনো যাবে। ডিপ্রেশনকে যত ‘ডিনাই’ করব তত সেটা বাড়তে শুরু করবে। আমার ডিপ্রেশনটা হয় অতিব্যবহারে। এমন একটা সময় যখন আমিই নিউজিল্যান্ড টিমের মুখ্য তারকা। গোটা দেশ যেন সব কিছুতে শুধু আমাকেই চাইছে। ম্যাচ জেতাবও আমি। প্রধান অতিথি হব আমি। এই সবাইকে হ্যাঁ করতে করতে আমি নিজেই টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম। ভেতরে ভেতরে একটা অদ্ভুত বিরক্তি তৈরি হচ্ছিল। ছোট ছোট কারণে চটে যাচ্ছিলাম। দেওয়ালের ছবিটা কেন সোজা নেই। মনে হচ্ছে উঠে গিয়ে সোজা করে দিই। বৌয়ের সঙ্গে কোথাও বেরোব বলে গাড়িতে বসেছি। হঠাৎ তীব্র বিরক্তি চলে এল। না, পাবলিকের মধ্যে যাব না। ইচ্ছে করছে না। সব কিছুতেই যেন স্ট্রেস। আমি দ্রুত বুঝে নিই এই অবস্থায় থাকলে চলবে না। আমি এখনও নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলতে চাই। আমাকে এর থেকে বেরোতে হবে। স্ট্রেস স্বীকার করে ব্যবস্থা নিতে চাওয়াটা দারুণ ইতিবাচক স্টেপ। এটা বোঝায় সমস্যার চোখে চোখ রেখে আপনি লড়তে তৈরি।
ক্রিকেট জীবনের সেরা সময় কাটিয়েছি শেষ আট বছর। ঠিক ওই সময়টাই মনোবিদ গ্রেম ফিল্টনের সঙ্গে ছিলাম। ক্রিকেট জীবনের শুরুর দিকে অত মোটিভেশন-টোটিভেশন বুঝতাম না। খেলতাম স্রেফ খেলার আনন্দে। যত সময় গেল, বুঝতে শিখলাম ক্রিকেটে মন তৈরি করে রাখাটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। টিম গেম হয়েও এটা আসলে ভীষণ রকম ইন্ডিভিজুয়াল স্পোর্ট। মাঠে বারবার এমন পরিস্থিতি আসে যখন ব্যাপারটা স্রেফ একের বিরুদ্ধে এক। সেই ডুয়েলগুলোয় জিততে হয়। মন তৈরি না থাকলে সম্ভবই না। টিম স্পোর্টে ঈর্ষাকাতর সহ-খেলোয়াড় খুব কমন ব্যাপার। তারা নেগেটিভ আবেগ দেবে। জিততে হলে সেই আবেগ সামলানো শিখতে হবে।
|
|
আমার কেরিয়ারে দু’বার গাড়ি জিতেও সেটা বিক্রি করে সমপরিমাণ টাকা টিমের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়েছিল। কারণ নিয়ম ছিল সব প্রাইজ মানি শেয়ার হবে। এর পর অস্ট্রেলিয়ায় যখন ইন্টারন্যাশানাল ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার হয়ে দামি গাড়ি জিতলাম তখন সেটা ভাগ করে নিতে আমি অস্বীকৃত হই। আমার যুক্তি ছিল, এটা ব্যক্তিগত পুরস্কার। টিম সাফল্য নয়। ব্যাপারটা ভোটে যায়। টিমের মধ্যে সেই ভোটাভুটিতে আমিই জিতি। কিন্তু এটা ঠিক, আমার বিরুদ্ধেও অনেকে ভোট দিয়েছিল। আমার মনে হয় ঈর্ষার শিকার হলে যেটা শেখার সেটা হল কত দূর অবধি আমি নমনীয় হব, শেয়ার করব। আর কোথায় গিয়ে নিজের নীতিতে অনমনীয় থাকব। আজকালকার টি-২০-র যুগে প্লেয়াররা এত রোজগার করে যে আমার মনে হয় না ওরা আর কেউ কাউকে হিংসে করে বলে।
সাফল্যের জন্যে নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলে যাওয়াটা খুব জরুরি। আমার বাবা আমায় বলতেন, “রিচার্ড যা করবে পেশাদারি অহঙ্কার রেখে করবে। তোমার চেয়ে ভাল কেউ করতেই পারে। হয়তো সেই বাজি নিয়ে গেল, তুমি জুলজুল করে তাকিয়ে থাকলে। কিন্তু তোমার মধ্যে যেন এই সন্তুষ্টিটা থাকে যে তুমি নিজের যথাসাধ্য দিয়েছিলে।” বাবার কাছে আরও শিখেছিলাম ক্রিকেট মাঠে ভাল আর খারাপ দিন খুব পরপর চলে আসে। তাই ভাল দিনে আরও ভাল করে নিজেকে যথাসম্ভব বাড়িয়ে নিতে হয়। যাতে অনিবার্য খারাপ দিনের শকটা কমানো যায়। আমি নিজেকে মোটিভেট করে রাখা ছাড়াও কতগুলো মন্ত্র ব্যবহার করতাম। যেমন, ডেনিস লিলি। লিলি ছিলেন আমার আইডল। পরের দিকে গ্লেন ম্যাকগ্রা এসেছে। ম্যাকগ্রা আমার চেয়ে অনেক লম্বা। বেশি রান আপ নিয়ে বল করে। কিন্তু আমি আর ও একই পথের পথিক। দু’জনেই বোরিং কিন্তু দু’জনেই খুব ধারাবাহিক। অফ স্টাম্পের বাইরে একই লাইন-লেংথ রেখে যাওয়া ছিল আমাদের কাজ। শুনেছি আমার মতো ম্যাকগ্রাও লিলি ভক্ত। ওর সমস্যায় পড়লে কী দর্শন ছিল আমি জানি না। তবে আমি নিজেকে বলতাম, পালাচ্ছ কেন? লিলি কি এই অবস্থায় পালাতেন? উনি তো লড়তেন।
ক্রিকেট যুদ্ধ জেতার জন্য মনের পুষ্টি নানা ভাবে হতে পারে। অনেকে বিপন্ন হয়ে পুরনো সাফল্যের জাবর কাটা শুরু করে। এটাও টেকনিক হিসেবে ভাল। একে বলে সিমুলেশন। চিবিয়ে চিবিয়ে মনের মধ্যে জেতার অভ্যেসটাকে ফিরিয়ে আনা। একটা টেকনিক খুব কমন যে, আমি যখন জিতছি তখন ঠিক কী ভাবছি। কী কী করছি। এ বার সেটাকে ব্রেনে অনবরত রিহার্স করে যাওয়া। তা হলে আশঙ্কাগুলো দূর হয়ে যেতে পারে।
আমি খুব গুরুত্ব দিয়েছি ব্যক্তিগত ভাবে ভিজুয়ালাইজেশনের উপর। ভিজুয়ালাইজ করার নিয়ম হল প্রথমে একটা ‘গোল’ সেট করতে হয়। তার পর সেটাকে মনের কাঠামোয় ফিট করতে হয়। তার মধ্যে ডিটেলগুলো এক এক করে আসে। গোল সেটিংটা খুব বাস্তবসম্মত হতে হবে। ডিটেলগুলোও ঠিকঠাক থাকা চাই। |
|
আমি যেমন বিশ্বরেকর্ডের উইকেটের জন্য ক্রাইস্টচার্চে বসে, গোল সেটিং করেছিলাম। তার আগে কখনও বেঙ্গালুরুতে খেলিনি। এটুকু জানতাম লাল মাটির উইকেট। আন্দাজ করেছিলাম আমার কথা ভেবে ভারত উইকেটে এতটুকু ঘাস রাখবে না। চিন্তায় দেখতে শুরু করলাম বেঙ্গালুরু স্টেডিয়াম। দেখতে শুরু করলাম আমরা টস হেরে প্রথম বল করছি। ওই যে শ্রীকান্ত নেমেছে, নীল হেলমেট পরে। দু’টো করে বল খেলছে, কুঁজো হওয়া স্টান্সে। তার পর সরে যাচ্ছে লেগ আম্পায়ারের দিকে। আমি ঠিক করলাম ওই হবে আমার বিশ্বরেকর্ড! একটা খোঁচা দিয়ে চার পাবে। তার পরেই কট বিহাইন্ড। আমি মনের মধ্যে দেখতে শুরু করলাম ৪৩১তম উইকেট। শ্রীকান্ত কট ইয়ান স্মিথ বোল্ড হ্যাডলি ৪। এমনই কপাল, সব ঠিকঠাক চলল। কিন্তু শ্রীকান্ত হঠাৎ করে সে দিন সাদা হেলমেট পরে নামল। আমার স্বপ্ন দৃশ্যে ফিট করা ছিল ও আউটসুইঙ্গারটা তাড়া করছে নীল হেলমেটে। ডিটেলের বেশ কমে প্রথম দু’টো ওভার আমার ধাতস্থ হতে গেল। শ্রীকান্তকে সেই তুললাম তবে তার আগে পেলাম অরুণলালের উইকেট।
আজ বিশ্বরেকর্ড মুরলীর হাতে। ও নিয়েছে ৮০০ উইকেট। প্রায় আমার দ্বিগুণ। এটা ভাঙতে হলে কাউকে তিরিশ বছর টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে। প্রায় অলৌকিক কীর্তি মুরলীর। যদি কেউ ভাঙতে চায় তাকে মানসিক এবং শারীরিক দিক দিয়ে অপরিসীম বলশালী হতে হবে। আমার বারবারই মনে হয় তরুণ প্লেয়ারকে বুঝতে হবে যে কোনও শৃঙ্গেই চড়া যায়। কিন্তু বেস ক্যাম্পেই একটা সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। তা হল শান্তিপূর্ণ শৃঙ্গ আরোহণ অসম্ভব। ঢেউ আসবেই। চড়াই-উৎরাই অনিবার্য। জিততে হলে মানসিক বুনোটে বাধা-বিপত্তি ঢুকিয়ে নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ সব পারে। যদি শরীরের সঙ্গে মনটাকে সে ঠিক মতো তৈরি রাখতে পারে...
|
স্যর রিচার্ডের আধ ডজন মন্তর |
১. ভয়। আশঙ্কা। দু’টোই নেগেটিভ ইমোশন। জিততে চাইলে দু’টোকেই তাড়াতে হবে। মনে রাখবে গাড়ির মতো মানুষেরও সার্ভিসিং হতে পারে। সেটা হলে আবার সে সার্ভিস করা গাড়ির মতোই ছুটবে
২. সমস্যায় পড়লে ফিরে যাও নিজের পুরনো সাফল্যে। ভাবতে থাকো, কী করে সেটা এসেছিল। বারবার করে পুরনো সাফল্যের সঙ্কেত পাঠাও নিজের ব্রেনে। একে বলে সিমুলেশন
৩. মানুষের ব্রেন হল টেপ রেকর্ডার। যে কোনও কিছু ‘ইরেজ’ করা যায়। ভাল স্মৃতি রিওয়াইন্ড করে করে বারবার প্লেব্যাক করা যায়
৪. ভিজুয়ালাইজেশন খুব জরুরি। যদি কোনও বড় সাফল্য চাও, আগে থেকে সেই ছবিটা দেখতে শুরু করো। তবে তোমার কাহিনিটা নিখুঁত হওয়া চাই। বাস্তবসম্মত হতে হবে আর ভিজুয়ালাইজ করার সময় ছোট ছোট ডিটেলকে খাপে খাপে ফিট করাতে হবে
৫. ঈর্ষার মধ্যে পড়লে মাথা ঠান্ডা রেখে বোঝার চেষ্টা করো কোথায় শেয়ার করবে। আর কোথায় একান্তই তোমার ব্যক্তিগত সাফল্য জেনে অনমনীয় থাকবে
৬. সব সময় চেষ্টা করবে নিজের সেরাটা দিতে। নিজের সম্পর্কে যেন নিজে গর্বিত থাকতে পারো। এমন হতেই পারে তোমার সেরাটা চ্যাম্পিয়ন করতে পারল না। তাতে কিছু আসে যায় না। তুমি তো সেরাটা দিয়েছ |
|
|
|
মনোবিদের প্রেসক্রিপশন
ড. রিমা মুখোপাধ্যায় |
অনেক অ্যাচিভার এই টেকনিকটা প্র্যাকটিস করেন। তাঁরা নিজেদের সামনে একটা লক্ষ্য ঝুলিয়ে রেখে অবিরত সেই লক্ষ্য ধাওয়া করার সময় পজিটিভ ভিজুয়ালাইজেশনের আশ্রয় নেন। মনে মনে দ্যাখেন স্বপ্নটা অলরেডি সফল হয়ে গিয়েছে। এটা খুব শক্তিশালী মানসিক অস্ত্র। অবচেতন মনে এই সঙ্কেতটা যদি ক্রমাগত পাঠানো যায় যে আমি জিতে গেছি। আমি অলরেডি আমার স্বপ্ন সফল করে ফেলেছি। তা হলে নিজেকে মোটিভেট করতে আরও সুবিধা হয়। তবে টার্গেট যেন বাস্তবোচিত হয়। তার মধ্যে বাস্তব শর্তগুলো যেন রক্ষিত থাকে। কেউ স্কুলের পড়া শেষ করতেই হামাগুড়ি দিচ্ছে, এ বার সে যদি ভাবতে শুরু করে এ-ই তো ভিজুয়ালাইজ করছি এমবিএ-টা শেষ করে ফেলেছি, তা হলে কোনও লাভ হবে না। পজিটিভ ভিজুয়ালাইজেশন তখনই কাজ দেয় যখন সেটা বাস্তবসম্মত। |
মন টেপ রেকর্ডারের কাজ অনেকটা করতেই পারে। তবে পুরোটা পারে না। কোনও চরম দুঃখকে সে একেবারে মুছে ফেলতে পারে না। কিছু নেগেটিভ জিনিসকে সে কনসাস লেভেল বা ভাবনাচিন্তার জগৎ থেকে সরিয়ে রাখতে পারে। সফল মানুষেরা সেটা করতে পারেন। তাঁরা এত ফোকাসড যে নেগেটিভ জিনিসকে টেপ রেকর্ডারের ‘ইরেজ’ বাটনের মতো টিপে বেমালুম ‘ইরেজ’ করে দিতে পারেন। তাঁরা শুধু পজিটিভ চিন্তাই রিওয়াইন্ড করে করে ব্রেনে সিগনাল পাঠান। নেগেটিভ চিন্তা ঢুকতেই পারে না। লক্ষ্য সফল করার জন্য সেটা খুব ভাল টেকনিক।
|
অ্যাচিভারদের একটা সমস্যা কখনও কখনও হয়। ঘাড়ের উপর আছড়ে পড়া সমসাময়িকদের ঈর্ষা। সেটা তার একই পেশার লোকেদের হতে পারে, একই গোষ্ঠীর লোকেদের হতে পারে। মনের ট্রেনিংয়ে ঈর্ষা সামলানোও শেখা যায়। ঈর্ষা হল নেগেটিভ ইমোশন। এতে আক্রান্ত হলে নিজেকে নিজে বলতে হয় এটা এ জন্যই হচ্ছে যে আশেপাশের মানুষজন আমার সম্পর্কে বিপন্নতায় আক্রান্ত হচ্ছে, যে আমি বুঝি তাদের ছাড়িয়ে গেলাম। নিজের ব্রেনে তখন ক্রমাগত সঙ্কেত পাঠাতে হয় যে আমার সাফল্য হল একটা প্যাকেজ, যা সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে ধেয়ে আসবেই। যত সময় এগোবে, যত আমার সাফল্য বাড়বে, তত পাল্লা দিয়ে বাড়বে ঈর্ষা। সে জন্যই একটা কথা আছে, সাফল্য মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়। আশেপাশের লোকের গঞ্জনায় মন খারাপ করলে চলবে না। নিজেকে বোঝাতে হবে, এটাই হওয়ার ছিল। এই প্রস্তুতিটাও মনের ট্রেনিং। সেটাও শিখতে হয়। |
|
|
|
|
|
|
|