শরীর মানেই মন থাকবে এমন নয়

আজ থেকে বছর কুড়ি আগে ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যাল’ নামে একটা সিরিয়াল হত। একজন বছর চব্বিশের যুবক সেই সিরিয়ালের পরিচালক ছিলেন। সেখানে মুনমুন সেন আর সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে সুইমিং পুলে একটা অন্তরঙ্গ দৃশ্য শু্যট করানো হয়েছিল। সেই যুবকটিই আজকের অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়। দুঃসাহসটা কি আগের মতোই আছে?

যখন ‘চারুলতা ২০১১’ করলাম তখনও লোকে বলেছিল যে, “এই ধরনের ছবি তুমি করছ! এটার কী রিঅ্যাকশন হবে জানো?” তীব্র যৌনতার দৃশ্য ছিল সেখানে। ‘চারুলতা ২০১১’ বা ‘তিনকন্যা’র সময়ও একই প্রতিক্রিয়া পাই। তার মানে দুঃসাহসটা আমার আছেই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মিইয়ে যায়নি।

‘চারুলতা ২০১১’য় আপনি উদগ্র যৌনতা দেখিয়েছেন। সেখানে কোনও প্রেম নেই।
না, প্রেম তো ছিল না। শুধুই শরীর ছিল। এটা হতেই পারে। যৌনতা তো খিদে। শরীর মানেই যে মন থাকবে এমন নয়। এটা বুঝতে পারাই পরিণত বোধ।

আপনি মনে করেন আপনার ছবিগুলো পরিণত ধাঁচের?
পরিণত সম্পর্ক নিয়েই তো ছবি করি।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’ বা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শব্দ’। বা গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’— সবই তো পরিণত ছবি...
‘অটোগ্রাফ’ বা ‘বাইশে শ্রাবণ’ এমন কিছু নতুন নয়। আর গৌতমদা (গৌতম ঘোষ), যে মানুষ এতগুলো ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের ছবি বানিয়েছেন, সেই মানুষের যতটা এগোনোর ছিল, ততটা এগোতে পারলেন না। আর সত্যি কথা বলতে কী সৃজিতের ছবি আমার খুব সিউডো লাগে। দর্শক হিসেবে ওঁর ছবির সঙ্গে আইডেনটিফাই করতে পারি না।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
কিন্তু সৃজিতের ছবি তো হইহই করে চলেছে। বিশেষ করে ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’।
মনে হয় ওর ছবি একটা বিশেষ ধরনের দর্শককে কেটার করছে। পরিচালক হিসেবে সৃজিত ওভাররেটেড। মনে হয় না সৃজিত এখনও পর্যন্ত নিজে বিশ্বাস ক’রে খুব মন থেকে সিনেমা বানিয়েছে। দর্শক যা দেখতে চায়, প্রোডিউসর ওকে যা ফরমায়েশ করেছেন, সে ভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। মনে হয় এক দিন ও মন থেকে বিশ্বাস করে সিনেমা বানাবে।

আর ‘শব্দ’ ?
‘শব্দ’ও হাইলি ওভাররেটেড। ‘শব্দ’ দেখতে গিয়ে অর্ধেক দেখে আমি তো ঘুমিয়েই পড়লাম। আই ওয়াজ সো ডিসঅ্যাপয়েন্টেড।

তা হলে ‘শব্দ’র জাতীয় পুরস্কারটাও ঠিক বিচার হয়নি বলছেন?
অনেক তাৎপর্যহীন ছবিও অনেক সময় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে।
মনে পড়ে ‘পুকার’ বলে একটা অত্যন্ত বাজে ছবিও একবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। আমার প্রচণ্ড ভাল লাগে রীনাদি (অপর্ণা সেন)র কাজ। চিত্রনাট্য দারুণ শক্তিশালী।
তবে হালে ওঁর ছবিও কোথাও যেন একটু পলকা হয়ে যাচ্ছে। যিনি ‘পারমিতার একদিন’ বা ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার’য়ের মতো ছবি করেন, তাঁর কাছে অনেক বেশি অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ছবি আশা করি।

‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ কেমন লেগেছে?
টেকনিকালি খুব শ্যাবি। সংলাপের জোরে চলেছে। বিষয়টায় নতুনত্ব ছিল। তবে আমার ভাললাগা মন্দলাগায় কী আসে যায়? এই যেমন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর ‘অপরাজিতা তুমি’ আমার বেশ ভাল লেগেছিল। কিন্তু ছবিটা চলল না। এই ছবির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই ‘মিসেস সেন’ বানাই।

তার মানে অনিরুদ্ধর ছবি আপনার ভাল লাগে?
না, তা বলব না। আমার ‘অন্তহীন’ আর ‘অনুরণন’ ভাল লাগেনি। কিন্তু খুব চলেছিল।

কলকাতায় কুলীন পরিচালক বলতে যাঁদের নাম উচ্চারিত হয়, তাঁদের পাশে যে আপনাকে সম্ভববত রাখা হয় না এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
কারা কুলীন, সেটা কে ঠিক করল? দর্শক তো কুলীন পরিচালক বলে কোনও দল তৈরি করেনি।
একটা, দুটো কী চারটে কাগজ কিছু পরিচালককে কুলীন মনে করে। করে তো করে... আমার ছবি বানানো কাজ। আমি ছবি বানিয়ে যাব।

কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও আপনাকে দেখা যায় না....
কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রায় সব ছবিই আমার ডিভিডিতে দেখা। ফেস্টিভ্যালের সব ব্যাপারটাই আমার সিউডো মনে হয়। যদি কোনও দিন চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি থেকে আমাকে সসম্মানে ডাকা হয়, নিশ্চয়ই যাব।

রাজ্য সরকারের কোনও অনুষ্ঠানেও আপনি আসেন না। আগের সরকারের সময়ও আপনাকে দেখা যেত না।
আমি খুব রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় মানুষ নই। তাই এড়িয়ে যাই। তবে কোনও মহৎ কারণে সরকার যদি আমাকে চান, পাশে পাবেন।

তবু আপনার ছবি রিলিজ মানেই একটা বিতর্ক। কেন এমন হয়?
সবটাই মিডিয়া হাইপ। তারা সব সময় কনট্রোভার্সি চায়।

এটা কি মনে হয় যে মিডিয়া আপনাকে আপনি যেমন ভাবে চান ঠিক তেমন ভাবে তুলে ধরছে না?
মিডিয়া আননেসেসারিলি কিছু পরিচালককে যে হাইপ দেয়, সেটা হয়তো একটা বিশেষ সেকশন অব প্রেস থেকে পাই না। না গুরুত্ব দিলে কী করব? আমার ছবি বানানো কাজ, ছবি বানিয়ে যাব।

যে ছবিই করুন না কেন তা কোনও বড় প্রযোজকের ঘর থেকে তৈরি হচ্ছে না। যেমন ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মণি আমার বন্ধু। তবু বলব ওদের সঙ্গে কাজ করার চাইতে সিনেমা ছেড়ে দেব তাও ভাল। কেন এই সিদ্ধান্ত সেটা আমি বলতে
চাই না।

আপনার ছেলে সুদর্শন। বয়সও অল্প। এত অল্প বয়সের প্রযোজক সচরাচর চোখে পড়ে না।
আমি তো ওকে বলেছিলাম অভিনয় করতে। ও বলল ‘না আমি আগে প্রোডিউস করতে চাই।’ এর পর যদি ও মনস্থির করে অভিনয় করবে, তা হলে ওকে আমি লঞ্চ করব বড় ভাবে।

ভিন্ন ধারার ছবি যাঁরা করছেন, সেই সব পরিচালক বারিস্তা, কাফে কফি ডে-তে আড্ডায় বসেন। আপনাকে তো কখনও সেই আড্ডায় দেখিনি....
বাইরের, বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের সঙ্গে মিশতে একটু বাধো বাধো লাগে। কারণ আমি যখনই কোনও পার্টিতে যাই, যাঁরা আমার সঙ্গে কথা বলেন বা অ্যাপ্রোচ করেন তাঁরা সকলেই কিছু একটা মতলবে থাকেন। আমার ছবির বক্স অফিস রেজাল্ট কী, তাই দেখে লোকে আমাকে হাই হ্যালো বলে। এ সব ভাল লাগে না।

আপনি তো এ বার হিন্দি ছবিও করতে যাচ্ছেন...
হ্যাঁ। ছবির নাম ‘তেরে আনেসে’। নায়ক-নায়িকা পূরব কোহলি আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এটা একটা রোমান্টিক প্রেমের গল্প।

আপনার আগের সব ছবিই প্রায় নারী-প্রধান। এই ঝোঁকটা কেন?
আসল কথা টালিগঞ্জে নায়কের বড় অভাব। কাকে নিয়ে নায়কপ্রধান ছবি করব?
‘চারুলতা’ ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
বেশির ভাগ ছবিতেই ঋতুপর্ণাকে নায়িকা নেন। কেন?
ঋতুপর্ণার সব চেয়ে বড় গুণ ছবির শুরু থেকে শেষ মানে, ছবির স্যাটেলাইট রাইট বিক্রি পর্যন্ত প্রযোজক- পরিচালকের পাশে থাকে।

কলকাতায় আর কোনও নায়িকাকে তা হলে ভাল লাগে না?
প্রিয়াঙ্কা ভাল অভিনেত্রী। কিন্তু টিমের সঙ্গে মিশে যায় না। একটা রোলের জন্য স্বস্তিকাকে প্রস্তাব দিতে যাই। কথা বলার সময় দেখলাম সে একজন রিপোর্টারকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। দু’দিন বাদে দেখলাম সেই জার্নালিস্ট স্টোরি করল যে স্বস্তিকা আমার ছবিতে অভিনয় করছে। তারও দু’দিন পরে সে আরেকটা স্টোরি করল যেখানে লেখা হল স্বস্তিকা আমার ছবিতে অভিনয় করছে না। এই তো সব মানুষ। একবার পাওলিকে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম। সে বলল, ঋতু যেখানে আছে সে কাজ করবে না। এই রকম অবস্থা হলে কাকে নিয়ে কাজ করব বলুন?

ভাল অভিনেতা নেই বলছেন। প্রসেনজিৎ তো এখন অন্য রকম সব ছবিতে কাজ করছেন।
হ্যাঁ বুম্বাদাকে একবার বললাম— তোমাকে নিয়ে একটা ছবি করতে চাই। বুম্বাদার তখন হয়তো হাতে কোনও সময় ছিল না। আমাকে বললেন, “কয়েক দিন পরে আমরা বসব।” সেই বসা আর হয়নি।

আপনার স্ত্রী সুদীপা মুখোপাধ্যায় তো নিজেই ছবি বানাচ্ছেন। আপনার অবদান কতটা?
মনে হয় সুদীপার ছবির বক্স অফিস রেজাল্ট ভাল হবে। ছবিতে আমার ইনপুট জাস্ট ক্যামেরাম্যান হিসেবে যতটা থাকে ততটাই। ওরই লেখা চিত্রনাট্য ও গল্প। যেখানে সাজেশন ও চেয়েছে, আমি দিয়েছি। কয়েকটা সাজেশন ও রেখেছে, কয়েকটা রাখেনি।

একটি রান্নার শো-তে সুদীপা জনপ্রিয় সঞ্চালক। কেমন রাঁধেন উনি?
হ্যাঁ। খুব ভাল রাঁধে। সেটা তো আমার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছেন।

দু’বার বিয়ে করেছেন। সুদীপা আসার আগে অরুণিমা ঘোষের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল আপনার। সেই সব দিনের কথা মনে পড়লে কেমন লাগে?
জীবনের প্রত্যেকটা পর্ব থেকে কিছু শিখেছি। আমার মনে হয় সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রে কে ভাল কে খারাপ সেটা বড় কথা নয়। দুটো মানুষের মধ্যে কমপ্যাটিবিলিটি না হলেই তা ভাঙে। অরুণিমার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছিল।
কিন্তু এখনও আমরা নির্ভেজাল বন্ধু। মাঝে মধ্যে ফোনেও কথা হয়। অরুণিমা সুদীপারও খুব বন্ধু। আমার মনে হয় আমার সঙ্গে থাকা খুব সহজ। আবার এটাও ঠিক আমার খুব স্পেসও লাগে। এই সব মুড সুইংয়ের সঙ্গে খুব ভাল মানিয়ে নিয়েছে সুদীপা। আসল কথা লাইফ মুভস অন। যত সম্পর্কের ভাঙাগড়া হয়েছে, তত শিখেছি। একটা কথা বলতে পারি আমার জীবনটা খুব ফিল্মি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.