মুম্বইয়ে গ্রেফতার আরও ২
ধর্ষণে শেষ হবে না জীবন, প্রত্যয়ী তরুণী
কটা ধর্ষণ জীবন শেষ করে দিতে পারবে না, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই বাঁচার গল্প শোনালেন মুম্বইয়ের তরুণী চিত্রসাংবাদিক। সবে দু’টো দিন কেটেছে। তাঁর উপর পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে যখন পথে নেমেছে গোটা দেশ, তরুণীর মনোবল নতুন করে সাহস জুগিয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে। বৃহস্পতিবার নিজের পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে দক্ষিণ পারেলে পরিত্যক্ত শক্তি মিলের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। মুম্বইয়ের অন্যতম এই প্রাণকেন্দ্রে ভর সন্ধেবেলা তাঁকে ধর্ষণ করে পাঁচ যুবক। বারে বারেই ঘুরে ফিরে আসছে সেই ভয়ার্ত স্মৃতিগুলো। জানান দিচ্ছে শরীরের ক্ষতও। কিন্তু তাতে কি! বছর তেইশের প্রাণটায় যে বাঁচার ইচ্ছে ভরপুর। তাই হাসপাতালের ঘরটা ছেড়ে নিজের কাজে ফেরার জন্য আর যেন তর সইছে না তাঁর। ওই তরুণীকে দেখতে জাতীয় মহিলা কমিশনের এক প্রতিনিধি দল এ দিন গিয়েছিলেন যশলোক হাসপাতালে। পরে দলেরই এক সদস্য নির্মলা সমন্ত প্রভাওয়ালকর জানান, “ধাক্কাটা অনেকটাই সামলে উঠেছেন তরুণী। কাজে ফেরার জন্য যেন ছটফট করছেন।”
মুম্বই গণধর্ষণ কাণ্ডে নবনির্মাণ সেনার প্রতিবাদ। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
তবে অভিযুক্তরা তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে আর তাদের কঠোরতম শাস্তি হলেই প্রাণ জুড়োবে কিছুটা, সে কথাও জানাতে ভোলেননি মুম্বইয়ের এই চিত্রসাংবাদিক। অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে জোরকদমে কাজ করছেন অপরাধ দমন শাখার অফিসাররা। শনিবারই পুলিশের জালে ধরা পড়েছে আরও দুই অভিযুক্ত।
এ দিন ভোররাতে মদনপুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বিজয় যাদবকে। ধরা পড়ার ভয়ে দক্ষিণ মুম্বইয়ে এক বন্ধুর ভিডিও পার্লারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল সে। আর তৃতীয় অভিযুক্ত সিরাজ রহমান মুমব্রা এলাকা থেকে ধরা পড়ে আজ বিকেলে।
গণধর্ষণ কাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অন্যতম অভিযুক্ত চাঁদ বাবু সাত্তাত শেখ ওরফে মহম্মদ আব্দুলকে পাকড়াও করে মুম্বই পুলিশ। ধর্ষণের মতো অপরাধে ছেলের নাম জড়ানোর পরও অবশ্য শনিবার পাশে দাঁড়াল তার পরিবার। চাঁদের ঠাকুমার দাবি, ঘটনার সময় তার বন্ধুরা তাকে ফোন করে ডেকেছিল বটে। কিন্তু ওই কাণ্ড দেখে সে ওখান থেকে পালিয়ে আসে। এ রকম বাজে কাজ তাঁর নাতি করতেই পারে না। ঘটনার সঙ্গে চাঁদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েও সাজার হাত থেকে তাকে বাঁচাতে অবশ্য অন্য রকম প্রস্তুতি শুরু করেছেন চাঁদের ঠাকুমা সারনাবাঈ। তাঁর দাবি, নাতির বয়স এখন সবে ষোলো। শনিবার চাঁদ বাবুর জন্ম সার্টিফিকেট তিনি জমা দিয়েছেন পুলিশকে। তাতে চাঁদের জন্ম তারিখ লেখা, ১৯৯৭ এর ২৬ ফেব্রুয়ারি। তবে তাতে কলম চালানোর ছাপ স্পষ্ট। সার্টিফিকেটের বাকি লেখাগুলো স্পষ্ট হলেও জন্ম তারিখের জায়গায় কলম বোলানো হয়েছে একাধিক বার বলে দাবি পুলিশের ফলে চাঁদ ওরফে মহম্মদ আব্দুলের বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। অভিযুক্তকে নাবালক প্রমাণ করা গেলে অন্য অপরাধীদের থেকে তার শাস্তির মাত্রা হবে অনেকটাই কম। দিল্লি গণধর্ষণে অপরাধীদের এক জনের বয়স আঠারোর গণ্ডি না পেরোনোয় কিশোর অপরাধীদের জন্য বিশেষ আদালতে বিচার চলছে তার। দোষ প্রমাণ হলে কোনও সংশোধনাগারে সর্বোচ্চ তিন বছর কাটানোর শাস্তি হতে পারে তার। এ ক্ষেত্রেও চাঁদের পরিবার সেই চেষ্টাই করছে বলে অভিযোগ পুলিশের।
মুম্বই পুলিশের দাবি, চাঁদের অপরাধে হাতেখড়ি এই প্রথম বার নয়। চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধে আগেও পুলিশের খাতায় নাম উঠেছিল তার। তা ছাড়া, ২০১১ সালে এই চাঁদ বাবু সাত্তাত শেখকে এক বার ধরা হয়েছিল। সে সময় তার বয়স ছিল ১৭। ফলে হিসেব মতো এখন তার বয়স হয় উনিশ বছর। প্রতিবেশীদের চোখেও কুখ্যাত হিসেবেই পরিচিত এই যুবক।
তদন্তের হাল হকিকত জানতে এন এম জোশী মার্গ থানায় আজ হাজির হন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাটিল। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি বিজয় আর চাঁদকেও জেরা করেন তিনি।
তদন্তের কাজে পুলিশকে সব রকম সাহায্য করছেন ওই তরুণীর সহকর্মীও। বৃহস্পতিবার রাতেই অপরাধীদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি। গত কাল তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পরিত্যক্ত ওই কারখানায় গিয়েছিল পুলিশের এক দল। কোথায় তাঁকে বেল্ট দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, আর কোথায় ওই তরুণীকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় পাঁচ যুবক সবই পুলিশকে দেখিয়েছেন তিনি। এও জানিয়েছেন, ধর্ষণের ঠিক আগেই মেয়ের খোঁজখবর নিতে ওই তরুণীর ফোনে ফোন করেছিলেন তাঁর মা। ভাঙা মদের বোতল মাথায় ঠেকিয়ে রেখে সব ঠিক আছে বলতে তাঁকে বাধ্য করেন অভিযুক্তরা।
ঘটনাস্থল থেকে আজ বেশ কিছু প্রমাণও জোগাড় করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। বাকি দুই অপরাধীকেও তাড়াতাড়িই গ্রেফতার করা যাবে বলে আশাবাদী মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার সত্যপল সিংহ।
এ দিকে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত আজও। দুই অভিযুক্ত বিজয় আর চাঁদকে যখন এ দিন দাদারের আদালতে তোলা হয়, বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপি ও শিবসেনা সমর্থকরা। মহিলা সংগঠনগুলিও এ দিন প্রতিবাদ দেখাতে জড়ো হয় এন এম জোশী মার্গ থানার সামনে। এ তো গেল মুম্বইয়ের ছবি। লজ্জা আর শোকের দিনটা মুম্বইকরদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে সারা দেশও।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.