খাদ্য সুরক্ষায় তেলঙ্গানা কাঁটা বিজেপির
রকার মরিয়া খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাতে। সঙ্গে সম্ভব হলে অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল। এ জন্য সরকার যখন সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা ভাবছে, ঠিক তখনই তেলঙ্গানা প্রশ্নে প্যাঁচ কষলো বিজেপি। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ এ দিন দাবি তুললেন, অবিলম্বে তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পেশ করা হোক। অন্ধ্রপ্রদেশের দলীয় সাংসদ ও মন্ত্রীদেরই সামলে উঠতে পারছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই অবস্থায় তেলঙ্গানা-বিতর্ককে উস্কে দিয়ে বিজেপি সংসদের অচলাবস্থা জিইয়ে রাখতে চাইছে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।
আসন্ন লোকসভা ভোটে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নকে তুরুপের তাস করতে চাইছে কংগ্রেস। চাইছে, অন্য কোনও প্রসঙ্গই যেন চলতি অধিবেশনে এই বিল পাশে বাধা না হতে পারে। এমনকী তেলঙ্গানা প্রশ্নে সরব লোকসভার ১২ জন সদস্যকে সাসপেন্ড করে হলেও সুষ্ঠু ভাবে অধিবেশন চালাতে মরিয়া কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁরা আগামী সোমবার থেকে ওই বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিতে চান।
বিলটি নিয়ে আলোচনার প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছে বিজেপিও। কিন্তু তাদের সমস্যা হলো, রাজনৈতিক কারণেই খাদ্য সুরক্ষার মতো বিলের সরাসরি বিরোধিতা তারা করতে পারছে না। এমনকী, বিলটিকে তারা সমর্থন করবে বলেও জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের তাগিদেই কংগ্রেসকে খাদ্য বিল প্রশ্নে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও তারা নারাজ। তারা চায় না মনমোহন সরকার বিলটি পাশ করাতে সক্ষম হোক। এ কারণেই বিল পাশের পথে ঘুরপথে বাধা সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে তারা। সম্প্রতি খাদ্য সুরক্ষা বিলের বেশ কিছু ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আর আজ বিরোধী দলনেত্রী সুষমাও এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ওই আইন রূপায়িত করে কংগ্রেস যাতে ভোটের বাক্সে ফায়দা তুলতে না পারে তারই চেষ্টা চালিয়ে যাবে বিজেপি শিবির।
সেই কৌশলেরই অঙ্গ হিসেবে সুষমা আজ বলেন, “অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার। ওই সময়ে বেশ কিছু নতুন বিলও আনতে চলেছে কেন্দ্র। মেয়াদ যখন বাড়ছেই তখন আমরা চাই ওই সময়ের মধ্যে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন সংক্রান্ত বিলটিও সরকার পেশ করুক।” সুষমার দাবি, তেলঙ্গানা ও বাকি অন্ধ্রে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, পৃথক রাজ্য গঠনের বিল আনার মাধ্যমেই তা মেটানো সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে জানিয়ে রেখেছেন, রাজ্য ঘোষণা হওয়ার পর তার বিলটি তৈরি করতে প্রায় ছ’মাস সময় লেগে যাবে। ফলে এত অল্প সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষে যে বিলটি প্রস্তুত করা অসম্ভব সেটা জেনে-বুঝেই বিজেপি ওই দাবিতে সরব হতে শুরু করেছে। এবং এটা-ও স্পষ্ট যে, আগামী দিনে বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সরকারের উপরে চাপ আরও বাড়াবে। বাদল অধিবেশনের অর্ধেকের বেশি সময় খরচ হয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই। এখন তেলঙ্গানা বিলের প্রশ্নে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে বাকি অধিবেশনও ভেস্তে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
এই অবস্থায় কংগ্রেস শিবিরের একাংশের বক্তব্য, একান্তই যদি বিলটি এই অধিবেশনে পাশ করানো অসম্ভব হয়, সে ক্ষেত্রে নতুন করে অধ্যাদেশ জারি করবে সরকার।
তেলঙ্গানা বিলের প্রশ্নে চাপে ফেলার পাশাপাশি, আজ সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা নিয়েও সরব হয়েছে বিজেপি। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি আজ দিল্লিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত একটি বক্তৃতায় অর্থনীতি থেকে বিদেশনীতি সব ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার পিছনে ইউপিএ-র নেতৃত্বের সঙ্কটকেই দায়ী করেছেন। জেটলির কথায়, “সরকার ও দলের মধ্যে ক্ষমতার দু’টি কেন্দ্র রয়েছে। গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীই শেষ কথা বলেন। কিন্তু ইউপিএ সরকারে দলের সভানেত্রীই শেষ কথা বলেন। আর সে কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে গোটা দেশকে।”
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মনমোহন সিংহকে দুর্বল নেতা হিসেবে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দেশের বেহাল অথর্নীতি, চিন-পাকিস্তান সীমান্তে আগ্রাসনের ঘটনা বিজেপি নেতৃত্বকে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণের আরও সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেই জেটলি এ দিন ইউপিএ নেতৃত্বকে আক্রমণ করে বলেন, “আগামী দিনের ভারতকে নতুন করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন দক্ষ ও পরীক্ষিত এক জন প্রশাসক।” সন্দেহ নেই, নাম না করেও নরেন্দ্র মোদীর পক্ষেই সওয়াল করেছেন জেটলি।
সুষমা ও জেটলি আজ যে ভাবে এক সুরে সরকারকে আক্রমণ করেছেন তা থেকে স্পষ্ট, নিজেদের মতান্তর সরিয়ে রেখে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে লোকসভা ভোট পর্যন্ত ঐকবদ্ধ ভাবেই চলতে চাইছেন বিজেপি নেতারা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.