সরকারের শত্রু নয় সংবাদমাধ্যম, বার্তা সনিয়ার
খনও টুজি কেলেঙ্কারি, কখনও কয়লাখনি বণ্টনের ফাইল উধাও, কখনও রেলমন্ত্রীর ভাগ্নের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, কখনও আবার জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ খোদ সনিয়া গাঁধীর জামাই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে। গত কয়েক বছরে এমন নানা ঘটনায় কংগ্রেস তথা কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কাঁটাছেড়া হয়েছে খবরের কাগজে বা টিভির পর্দায়।
লোকসভা ভোটের আগে সেই সংবাদমাধ্যমকেই আজ পাল্টা বার্তা দিতে চাইলেন সনিয়া ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কংগ্রেস সভানেত্রী বোঝাতে চাইলেন, সরকারের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সম্পর্ক শত্রুতার হতে পারে না। আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, তদন্তধর্মী সাংবাদিকতা যেন শিকার সন্ধান না হয়ে ওঠে। তথ্য সম্প্রচার ও মন্ত্রকের নয়া ‘ন্যাশনাল প্রেস সেন্টার’-কে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতির উদ্দেশে সমর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন সনিয়াও। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে চা-চক্রে সনিয়া এক দিকে লোকসভা ভোট এগোনোর সম্ভাবনা খারিজ করে দেন। আবার অন্য দিকে এ প্রত্যয়ও জানান যে, খাদ্য, শিক্ষা, কাজ, তথ্যের অধিকারের মতো বিষয়কে যে ভাবে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে ভর করেই তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠিত হবে। ভোটের আগে কংগ্রেস সভানেত্রীর মুখে এ ধরনের কথাই প্রত্যাশিত। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, সংবাদমাধ্যমে চাঁছাছোলা সমালোচনা নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের উদ্বেগ আজ সরাসরি না হলেও পরোক্ষে ধরা পড়েছে সনিয়া-মনমোহনের বক্তব্যে।
ভাই-বোন
রাহুল-প্রিয়ঙ্কা। শনিবার নয়াদিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে। ছবি: পিটিআই।
বস্তুত, সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কংগ্রেসের অনেককেই এর আগে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যম আরও সাবালক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সরকারের সমালোচনায় কোথাও যেন ভারসাম্যের অভাব হচ্ছে। এ-ও প্রকট হচ্ছে যে, কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে বিরোধীদের বক্তব্য তথা সরকার-বিরোধী যুক্তি-তর্ক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আর সরকারের বক্তব্য বিশেষ স্থান পাচ্ছে না। এমনকী বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার আগে সংবাদমাধ্যমেরই একাংশ কার্যত সেই কাজটি শুরু করে দিয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ।
সনিয়ার আজকের বক্তব্যে সেই বার্তাই নিহিত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান সংবাদমাধ্যমের আধুনিকতা তাদের বৃহত্তর দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বলেন, “অনেক সময়ই দেখা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যমে বিতর্কের ভাষা যথাযথ হয় না। কখনও কখনও রাজনৈতিক দলগুলিকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় মিডিয়া। হতে পারে, আমরা আমাদের বক্তব্য কার্যকরী ভাবে তুলে ধরতে পারি না।”
ভোটের আগে বহু কোটি টাকা খরচ করে সরকারের প্রকল্পগুলির কথা ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো শুরু হয়েছে। সরকারের এই কৌশল নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। আজ সেই প্রসঙ্গে সনিয়া বলেন, “খামোখা সরকারের কাজের প্রচারের পক্ষে আমরাও নই। কিন্তু সরকার মানুষের সুরাহার জন্য কী কর্মসূচি নিচ্ছে, সে ব্যাপারে তাঁদের সচেতন করাও জরুরি।”
সনিয়া যেমন সরকারের বক্তব্য তুলে ধরা নিয়ে বার্তা দিয়েছেন, তেমনই তদন্তধর্মী খবর করার বিষয়টি লক্ষ্যণীয় ভাবে গুরুত্ব পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কথায়। ঘটনাচক্রে, কয়লাখনি বণ্টনের ফাইল উধাও নিয়ে সমালোচনার তির এখন মনমোহনেরই দিকে। এই পরিস্থিতিতে আজ তিনি বলেন, “অনুসন্ধানধর্মী সাংবাদিকতার স্থান সর্বদাই রয়েছে। কিন্তু কোনও তথ্য খুঁজে বার করার চেষ্টা কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা বা অপপ্রচারে পর্যবসিত হতে পারে না। ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ইচ্ছা রাষ্ট্রের হিতের থেকে বড় হতে পারে না। আখেরে বিশ্বাসযোগ্যতাই সংবাদমাধ্যমের সম্পদ।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, একশো দিনের কাজ, খাদ্য-সুরক্ষা, শিক্ষার অধিকার, তথ্যের অধিকারের মতো বেশ কিছু সামাজিক প্রকল্পের অস্ত্রেই কংগ্রেস ফের মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাইছে। কিন্তু একের পর এক দুর্নীতি মামলা আর নীতিপঙ্গুত্ব নিয়ে সমালোচনায় সরকারের এই পদক্ষেপগুলি ঢাকা পড়ে গিয়েছে। মোদী নিয়ে যত কথা হচ্ছে, তার সিকিভাগও হচ্ছে না ইউপিএ-র কাজকর্ম নিয়ে। এবং সেটাই সনিয়া-মনমোহনের মূল উদ্বেগের বিষয়।
সে দিক থেকে ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টার স্থাপনকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ভাল করার প্রয়াস হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ। ওয়াশিংটনে এরকমই একটি মিডিয়া সেন্টার রয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর থেকে তথ্য সংগ্রহ, গবেষণার জন্য সেই কেন্দ্রের গুরুত্ব অনেক। আজ সনিয়াও বলেন, “আশা করি নতুন এই মিডিয়া সেন্টার কেবল ইট-বালির ইমারত হয়ে থেকে যাবে না। ভবিষ্যতে এটি সরকার ও সাংবাদিকদের মধ্যে আরও বেশি করে তথ্য আদানপ্রদান ও আড্ডার কেন্দ্র হয়ে উঠবে।”

পুরনো খবর






First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.