ইশরাত মামলায় সিবিআই-আইবি সংঘাত তুঙ্গে
গোয়েন্দামহলে নজিরবিহীন গৃহযুদ্ধ। এক দিকে সিবিআই, অন্য দিকে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। প্রসঙ্গ ইশরাত জহান হত্যা মামলা।
আইবি-র স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাজেন্দ্র কুমারকে ইশরাত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে সিবিআই। এর আগে তাঁকে মামলার সাক্ষী হিসেবে দু’বার জেরা করা হলেও এ বার জেরা করা হবে সন্দেহভাজন হিসেবে। প্রয়োজনে এই গোয়েন্দা কর্তাকে গ্রেফতারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সিবিআই কর্তারা। ফলে এই নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরে এখন দুই গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে। ইতিমধ্যেই নর্থ ব্লকে সিবিআই প্রধান রঞ্জিৎ সিন্হার দফতরে গিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এসেছেন আইবি প্রধান আসিফ ইব্রাহিম। স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহের কাছেও তিনি ক্ষোভ জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
ইশরাত জহান
২০০৪ সালে আমদাবাদে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইশরাত ও তাঁর তিন সঙ্গী। ১৯ বছরের কলেজ-ছাত্রী ইশরাত যে আদতে লস্কর-জঙ্গি এবং তাঁরা যে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন, সেই তথ্য ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর তরফে রাজেন্দ্র কুমারই গুজরাত পুলিশকে জানিয়েছিলেন। এই তথ্যের উপর নির্ভর করেই অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু পরে অভিযোগ ওঠে, গোটাটাই ভুয়ো সংঘর্ষ পুলিশি হেফাজতেই খুন করা হয়েছিল ইশরাতদের। ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। এবং সিবিআই-কর্তাদের সন্দেহ, এই ঘটনায় জড়িত গুজরাত পুলিশের অফিসারদের সঙ্গে রাজেন্দ্র কুমারের যোগসাজশ ছিল। কাজেই প্রয়োজনে তাঁকে গ্রেফতার করে জেরা করা হতে পারে।
স্বভাবতই প্রবল অসন্তুষ্ট আইবি। সংস্থার কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, গোয়েন্দা তথ্য দেওয়ার জন্য যদি কাউকে জেরা বা গ্রেফতার করা হয়, তা হলে গোয়েন্দা সংস্থার কাজ চালানোই মুশকিল হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার তরফে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছিল। পুলিশি অভিযান বা ভুয়ো সংঘর্ষে তাঁদের হত্যা করার পরামর্শ দেওয়া হয়নি। গোয়েন্দা-তথ্য পাওয়ার পরে যা করার গুজরাত পুলিশই করেছে। এখন সিবিআই যদি প্রশ্ন করে, ওই তথ্য সঠিক ছিল কি না, বা তার সত্যতা যাচাই করা হয়েছিল কি না, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া মুশকিল। কারণ গোয়েন্দা-সূত্রে পাওয়া খবরের এমন কোনও নথি থাকে না।
মণিপুর-ত্রিপুরা ক্যাডারের আইপিএস অফিসার রাজেন্দ্র কুমার বহুদিন ধরেই আইবি-তে রয়েছেন। স্পেশ্যাল ডিরেক্টর হিসেবে বর্তমানে তিনি সংস্থার শীর্ষ পাঁচ কর্তার অন্যতম। এই পর্যায়ের এক কর্তাকে এ ভাবে জেরা করা হলে সংস্থার অন্য অফিসারদের উপরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন আইবি কর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন সিবিআইকে জেরার এই অনুমতি দিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আবার বলা হচ্ছে, যেহেতু এটি দুর্নীতির মামলা নয়, ভুয়ো সংঘর্ষের ফৌজদারি মামলা, তাই এ ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “এমনিতেই সিবিআই ও আইবি-র মধ্যে সব সময় একটা পেশাগত লড়াই চলে। সিবিআইয়ের যে ধরনের পুলিশি ক্ষমতা রয়েছে, তা আইবি-র নেই। তা সত্ত্বেও আইবি-র প্রভাব সিবিআইয়ের থেকে অনেক বেশি। এই ঘটনায় সেটাই ফের প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।”

শুধু গোয়েন্দাদের গৃহযুদ্ধ নয়, ইশরাত-মামলা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরও তুঙ্গে। আইবি কর্তা ছাড়াও গুজরাত পুলিশের প্রাক্তন ও বর্তমান শীর্ষকর্তাদেরও তলব করছে সিবিআই। বস্তুত, সিবিআই আজই আমদাবাদের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার পি পি পাণ্ডেকে ‘ঘোষিত অপরাধী’ আখ্যা দেওয়ার জন্য বিশেষ আদালতের অনুমতি চেয়েছে। পাণ্ডে গত এক মাস ধরে গ্রেফতার এড়িয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ। আজ বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষি লেখি বলেন, “পুরোটাই নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করার চেষ্টা।” কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ পাল্টা বলেছেন, “যখন সিবিআই রেলমন্ত্রীর ভাগ্নের দুর্নীতির তদন্ত করে, তখন বিজেপি তার প্রশংসা করে। কিন্তু মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেই সিবিআই হয়ে যায় ‘কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’।”

পুরনো খবর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.