ভুয়ো সংঘর্ষেই খুন ইশরাত, জানাল তদন্ত
রেন্দ্র মোদী সরকারকে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলে বিশেষ তদন্তকারী দল জানিয়ে দিল (সিট), কলেজ ছাত্রী ইশরাত জহান এবং তাঁর তিন বন্ধুকে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করেছিল গুজরাত পুলিশ। সিট-এর এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিল গুজরাত হাইকোর্ট, যে ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাণদণ্ড।
গত শুক্রবারই রিপোর্টটি জমা দেয় সিট। যেখানে সাত বছর পরে এই প্রথম বারের জন্য বলা হয়েছে, ইশরাত ও তাঁর সঙ্গীদের হত্যা আসলে পুলিশের সাজানো ঘটনা। রিপোর্টে ইশরাত-হত্যা নিয়ে গুজরাত পুলিশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিও খণ্ডন করা হয়েছে। প্রথমত, গুজরাত পুলিশের অপরাধ দমন শাখা জানিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যা করতেই এসেছিল ওই চার লস্কর জঙ্গি। কিন্তু সিট-এর রিপোর্টে সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, এই বক্তব্য ঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, পুলিশের দাবি ছিল, ২০০৪ সালের ১৫ জুন তারিখে আমদাবাদের শহরতলি এলাকায় সংঘর্ষে ইশরাত-সহ চার জনের মৃত্যু হয় (বস্তুত, এটাই ছিল সিট-এর তদন্তের বিষয়)। কিন্তু সিট জানিয়েছে, বাস্তবে তার অনেক আগেই পুলিশের হেফাজতে খুন হন ১৯ বছরের ইশরাত। একই সঙ্গে নিহত হন জাভেদ শেখ ওরফে প্রাণেশ পিল্লাই, আমজাদ আলি রানা এবং জিশান জোহর। আরও তদন্তের স্বার্থে সিট-এর রিপোর্ট সম্পর্কে বিশদে জানাতে চায়নি হাইকোর্ট।
আইপিএস অফিসার আর আর বর্মা এবং দুই শীর্ষ পুলিশ অফিসার মোহন ঝা ও সতীশ ঝায়ের নেতৃত্বে ঘটনাটির তদন্ত চালিয়েছিল সিট। বিচারপতি জয়ন্ত পটেল এবং বিচারপতি অভিলাষা কুমারীর বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গত ৭ অক্টোবর সিট-কে তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট ২১ জন পুলিশ অফিসার ও কর্মী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একাধিক আইপিএস-ও রয়েছেন। যেমন, অপরাধ দমন শাখার যুগ্ম পুলিশ কমিশনার পি পি পাণ্ডে, সাসপেন্ড হওয়া ডিআইজি ডি জি বানজারা, তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এন কে আমিন। এঁদের মধ্যে আবার বানজারা এবং আমিনের বিরুদ্ধে সোহরাবুদ্দিন শেখ এবং তাঁর স্ত্রী কস্তুরবিকে হত্যার অভিযোগেও মামলা চলছে। দু’জনেই এখন জেলে।
ঘটনার পরই মৃত্যুর কারণ নিয়ে পুলিশের ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন প্রাণেশের বাবা গোপীনাথ পিল্লাই এবং ইশরাতের মা শামিমা কৌসর। তারই ভিত্তিতে ২০১০ সালে সিট-এর হাতে সরাসরি তদন্তের দায়িত্ব তুলে দেয় হাইকোর্ট। সিট-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের কথা শুনে গোপীনাথ পিল্লাই বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই জানি এটা ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা। ওদের চার দিন ধরে পুলিশ হেফাজতে রেখে জেরার নামে অকথ্য অত্যাচার করা হয়। ওদের মৃতদেহে অত্যাচারের চিহ্নও মিলেছিল।” ইশরাতের কাকা রউফ লালা বলেন, “আমাদের গায়ে যে জঙ্গি-তকমা লেগেছিল, তা শেষ পর্যন্ত উঠল!” ইশরাতের মায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া, “ওরা আমার নিরপরাধ মেয়েটাকে মেরেছে। ওদের ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত।”
একে তো আইপিএস অফিসারেরা পরের পর অভিযোগ তুলছেন, গুজরাত দাঙ্গার ব্যাপারে মুখ খুলতে চাওয়ায় তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। তার উপরে ইশরাত নিয়ে সিট-এর রিপোর্ট। বাস্তবিকই যথেষ্ট চাপে মোদী সরকার। হাইকোর্ট আজ আরও জানিয়েছে, পরবর্তী তদন্ত কাকে দিয়ে করানো হবে, সিবিআই না জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ), সে ব্যাপারে আবেদনকারীদের কাছ থেকে মত জানতে চাওয়া হবে। তবে যাকেই বাছা হোক, রাশ কিন্তু থাকবে সেই কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতেই।
এই অবস্থায় মোদীকে আক্রমণে করতে ময়দানে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “এটা পরিষ্কার যে ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে গুজরাতে বহু ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মোদীর শাসনকালে মানবাধিকার নানা ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা বারবার বলেছি। এখন সকলে সত্যিটা দেখতে পাচ্ছেন।”

বিচার যে পথে
১৫ জুন, ২০০৪
সংঘর্ষে ইশরাত জহান-সহ চার ‘জঙ্গি’র মৃত্যু, জানাল পুলিশ
সেপ্টেম্বর, ২০০৯
‘ভুয়ো সংঘর্ষ’, বললেন আমদাবাদ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট তামাং
অগস্ট, ২০১০
বিশেষ তদন্ত দল (সিট)-কে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
সেপ্টেম্বর, ২০১০
তদন্ত কর্তা রাঘবন সরে যেতে চাওয়ায় নতুন সিট গড়ল হাইকোর্ট
নভেম্বর, ২০১০
নতুন তদন্ত দলের ব্যাপারে গুজরাতের আপত্তি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
এপ্রিল, ২০১১
সিট-এর কাজে বাধা দিলে সিবিআই, গুজরাতকে সতর্ক করল হাইকোর্ট
২১ নভেম্বর, ২০১১
ভুয়ো সংঘর্ষ, বলল সিট। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরুর নির্দেশ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.