এই রোগ ছিল না, এমন নয়। একেবারেই নির্মূল হয়ে গিয়েছেও বলা যাবে না। তাই রাজ্যের অন্য জেলার মতো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ফাইলেরিয়া মুক্ত কর্মসূচিতে নামল। ২৫ অগস্ট রবিবার ফাইলেরিয়া দূরীকরণ দিবস। ওই দিন থেকে শুরু করে মঙ্গলবার পর্যন্ততিন দিন ধরে জেলার প্রতিটি মানুষকে ওষুধ খাওয়ানো হবে।
কি ভাবে এই কর্মসূচি সফল করতে হবে তা নিয়ে শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জেলা পরিষদের সভাকক্ষে একটি বৈঠকও করেন। বৈঠক শেষে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশ চন্দ্র বেরা, উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যকান্তি সারেঙ্গি-সহ জেলার পদস্থ আধিকারিক, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, নার্সরা নিজেরাই এই ওষুধ খেয়ে দেখান। |
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, অনেক সময়েই সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন থাকে। ওষুধ খেলে ক্ষতি হতে পারে বলে ভ্রান্ত ধারণাও তৈরি হয়। কিন্তু এই ওষুধ খেলে উল্টে ভাল হয়, তা বোঝানোর জন্যই নিজেদের ওষুধ খাওয়ার পরিকল্পনা। তারপরেও যদি কোনও ব্যক্তি ওষুধ খাওয়ার পর কোনও রকম সমস্যা অনুভব করেন তার চিকিৎসার জন্যও তৈরি রাখা হয়েছে ‘র্যাপিড রেসপন্স টিম’। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওষুধ খাওয়ার পর কোনও এলাকা থেকে সমস্যার কথা জানা গেলেই, ওই টিম দ্রুত গিয়ে তা খতিয়ে দেখবে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করবে। তবে এই ওষুধ খেলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” তারই সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতর এটাও জানিয়েছে, যাঁদের মধ্যে এই রোগ রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ দেখা দেবে। অর্থাৎ শরীরের কোন অংশ ফুলে যাওয়া বা মাথা ধরা প্রভৃতি। তাহলে বুঝতে হবে, ওষুধ কাজ করছে। তিনি উপকৃতই হচ্ছেন।
২০০৪ সাল থেকে শুরু হয়েছিল ফাইলেরিয়ার মুক্ত জীবন গড়ার কাজ। ওই বছর থেকেই ওষুধ খাওয়ানোর কাজও শুরু। বছরে একবার সরকারি ভাবে ওষুধ খাওয়ানো হয় নিখরচায়। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই ওষুধ খাইয়ে আসেন। ২০১৫ সালের মধ্যে সমস্ত জেলাকে ফাইলেরিয়া মুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তার আগে এই নিয়ে সমীক্ষা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও ৮টি এলাকায় ৪ হাজার মানুষের মধ্যে সমীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে মাত্র ৮ জনের দেহে এই রোগ পাওয়া গিয়েছে, শতাংশে তা ০.২ শতাংশ।
শুধু গ্রামীণ এলাকাতে নয়, শহরাঞ্চলেও এই রোগ রয়েছে। তবে দাঁতন, শালবনি-সহ কয়েকটি ব্লকে এই রোগীর সংখ্যা বেশি বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৪৫৪ জন ব্যক্তিকে পাওয়া গিয়েছে যাঁদের হাইড্রোসিল রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, নিখরচায় তাঁদের অস্ত্রোপচারের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের একটি তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। শিবির করে ওই চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করবেন।
ফাইলেরিয়া হলে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। অথচ, অতি সহজেই এই রোগ মুক্তি পাওয়া যায়। তাই এই কর্মসূচি যাতে সফল ভাবে রূপায়িত করা যায় সে জন্য কেবল স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক বা কর্মীদেরই নয়, পুরসভা, পঞ্চায়েত, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আবেদন জানানো হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “আমরা চাই, আমাদের জেলায় এমন একজনও মানুষ থাকবেন না যাঁর মধ্যে ওই রোগ রয়েছে। সমস্ত মানুষকেই ফাইলেরিয়া মুক্ত করতে চাই।” |