পুলিশকর্মীদের মারধর এবং তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করে এ বার আসামি ছিনতাই করা হল উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার আটপুকুর গ্রামে।
শুক্রবার বিকেলে ওই ঘটনায় তৃণমূলের লোকজনই জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জনতা যাকে ছিনিয়ে নেয়, সে খুনের মামলায় অভিযুক্ত। তার খোঁজ চলছে। পুলিশের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। র্যাফ নামানো হয়েছে।”
পুলিশের হাত থেকে আসামি ছিনতাই জেলায় এই প্রথম নয়। বছর চারেক আগে আমডাঙা থানা থেকে তোলাবাজির অভিযোগে ধৃত এক সিপিএম নেতাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বছর দেড়েক আগে গোলমালের অভিযোগে ধৃত এক তৃণমূল নেতাকে আমিনপুর তদন্তকেন্দ্র থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন আটপুকুর থেকে যাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর নাম অজেত গাজি ওরফে ঢালি। তিনি ২০০৮-এর অক্টোবরে আটপুকুরের সিপিএম নেতা আলাউদ্দিন মোল্লা খুনের ঘটনায় আরও ৩৮ জনের সঙ্গে অভিযুক্ত। সকলেই এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ইতিমধ্যে ওই মামলায় পুলিশ ২০ জনকে ধরেছে। অজেত-সহ বাকিরা দীর্ঘদিন পুলিশের খাতায় পলাতক ছিলেন। মাসকয়েক আগে তাঁরা নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়ে গ্রামে ফেরেন। অভিযোগ, তার পর থেকে অজেতের নেতৃত্বে তৃণমূলের লোকজন নিহত আলাউদ্দিনের স্ত্রী সাইরুন্নেসা-সহ গ্রামের সিপিএম সমর্থকদের উপরে অত্যাচার শুরু করে। সম্প্রতি অভিযুক্তদের জামিনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাইরুন্নেসা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট অভিযুক্তদের জামিন খারিজ করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়।
সেই নির্দেশ মতোই এ দিন পুলিশ অজেতকে গ্রেফতার করে আটপুকুর ফাঁড়িতে আনে। তার পরেই কয়েকশো স্থানীয় বাসিন্দা অজেতকে ছাড়ার দাবিতে ফাঁড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। কিছু গ্রামবাসী বিক্ষোভ শুরু করেন আটপুকুর বিহারী হাই-মাদ্রাসায়। সেখানে শিক্ষকতা করেন সাইরুন্নেসা। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা তাঁকে অজেতদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিতে থাকে। বিকেল ৩টে নাগাদ থানা থেকে পুলিশের গাড়ি গেলে অজেতকে ফাঁড়ি থেকে বের করে তাতে তোলা হচ্ছিল। সেই সময়েই পুলিশের গাড়িটি ভাঙচুর করে ভেড়িতে উল্টে ফেলে দেয় জনতা। কয়েকজন পুলিশকর্মীকে মারধর করে অজেতকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তার পরে বোমা ফাটাতে ফাটাতে বিক্ষোভকারীরা চলে যায়।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য নিরঞ্জন সাহার অভিযোগ, “শাসক দলের লোকজনই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।” বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলামের পাল্টা দাবি, “ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। গ্রাম্য বিষয়। এলাকার কিছু মহিলাই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” |