শাস্তি চেয়ে কলকাতার কোর্টেও গর্জন কামদুনির
কামদুনিবাসী চেয়েছিলেন, কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের মামলাটি চলুক বারাসত আদালতেই। তবে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই মামলা শেষ পর্যন্ত মহানগরীর বিচার ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ায় দমে যাননি তাঁরা। বারাসত আদালতে মামলা চলাকালীন নিয়ম করে তাঁরা সেখানে হাজির হয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাতেন। শুক্রবার বিচার ভবনে বিচার শুরুর প্রথম দিনেও ছোট লরিতে চেপে আদালত-চত্বরে হাজির হন কামদুনির জনা চল্লিশ বাসিন্দা। দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
বিশ্বজিৎ নস্কর, ভাস্কর মণ্ডল, বিশ্বজিৎ কয়াল, সুনন্দা নস্কর, আন্না মণ্ডলের মতো কামদুনির অনেকেই এ দিন এজলাসে ঢুকতে পারেননি। কিন্তু তাতে তাঁরা হতাশ হননি মোটেই। এই মামলার নিষ্পত্তি দেখতে তাঁরা কতটা মরিয়া, তাঁদের সঙ্কল্পেই সেটা স্পষ্ট। কামদুনির ওই বাসিন্দারা জানান, বারাসত আদালত থেকে মামলা তুলে কলকাতার আদালতে আনা হয়েছে। তাতে কেউ যদি মনে করেন, তাঁরা রোজ রোজ এত দূরে এসে মামলার খোঁজখবর নেবেন না, ঘটনার প্রতিবাদ করবেন না, তা হলে ভুল করবেন। যে-দিনই শুনানি থাকবে, তাঁরা হাজির হবেন বিচার ভবনে। ধর্ষিতা ও নিহত ছাত্রীর দুই ভাই এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে আদালতে পৌঁছে দিয়েছিল পুলিশের গাড়ি। ওই ছাত্রীর দুই ভাই বলেন, “আমাদের হারানোর আর কিছু নেই। সুবিচার পেলে সেটাই হবে মস্ত বড় পাওয়া।”
ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত আট জনকেই এ দিন বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ দমদম জেল থেকে বিচার ভবনে হাজির করানো হয়। আদালত-চত্বরে তখন দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবি উঠছে মুহুর্মুহু। পুলিশ জানায়, নিরাপত্তার কারণে কামদুনি থেকে আসা সকলকে এজলাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পুলিশি নিরাপত্তায় আদালতের পথে মৃতার আত্মীয়রা। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
বিচারক এজলাসে উঠেই জানতে চান, আট অভিযুক্তকেই আনা হয়েছে কি না। অভিযুক্ত সইফুল আলি, আমিন আলি, নুর আলি, আনসার আলি মোল্লা, এনামুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, ভোলা নস্কর ও গোপালনাথ নস্কর একে একে হাত তুলে নিজেদের হাজিরার প্রমাণ দেয়।
মামলাটির শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণের ভিডিওগ্রাফি করার জন্য এ দিনই আদালতে আবেদন জানায় অভিযুক্ত পক্ষ। অভিযুক্তদের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও সঞ্জীব দাঁ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বেঞ্চ-২) সঞ্চিতা সরকারের এজলাসে বলেন, এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া ভিডিওয় তুলে রাখা দরকার। তবে বিষয়টি মোটেই নিম্ন আদালতের আওতায় পড়ে না বলে সওয়াল করেন সরকার পক্ষের আইনজীবী দীপক ঘোষ এবং অনিন্দ্য রাউত। তাঁরা বলেন, ভিডিও ক্যামেরা চালু রেখে সাক্ষ্যগ্রহণ করা যায় কি না, সেটা হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচার্য। যেখানে এই আবেদন করা হচ্ছে, বিষয়টি সেই আদালতের এক্তিয়ারে পড়ে না। দু’পক্ষের বক্তব্যের পরে বিচারক জানান, ২৭ অগস্ট এই আবেদনের শুনানি হবে।
জেলে অভিযুক্তদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করারও আবেদন জানান তাদের আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, জেলে অভিযুক্তদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলে অন্যতম অভিযুক্ত আনসারের গলায় তারের ফাঁস দিয়ে খুনের চেষ্টা হয়েছে। বেধড়ক পেটানো হয় তাকে। ওই অভিযুক্ত সাত দিন আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাই এই মামলার সব অভিযুক্তকে সশস্ত্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখা দরকার। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আবেদন, জেলে অন্য কয়েদিদের থেকে ওই অভিযুক্তদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা হোক। জেল-কর্তৃপক্ষকে দিয়ে খাবার পরীক্ষা করিয়ে তবেই যেন তাদের খেতে দেওয়া হয়। তাঁদের বক্তব্য, আনসারের উপরে হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সব অভিযুক্তের জন্য কঠোর নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠছে।
আনসারকে আলাদা করে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারক জানতে চান, কারা, কী ভাবে তাকে মেরেছে। আনসার জানায়, দমদম জেলে অমিত নামে এক বন্দি এবং তার সঙ্গী তারের ফাঁস দিয়ে তার শ্বাস রোধের চেষ্টা করেছিল। গলায় সেই চিহ্নও বিচারককে দেখায় সে।
সরকারি আইনজীবীরা তখন বিচারককে জানান, তাঁরা অভিযুক্তদের নিরাপত্তা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বা তাদের পরীক্ষিত খাবার সরবরাহের আর্জির বিরোধিতা করছেন না। তবে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট এবং বিভিন্ন হাইকোর্টের রায়ের দীর্ঘ নিদর্শন দেখিয়ে অকারণে আদালতের সময় নষ্ট করছেন। বিচারাধীন বন্দিদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা-সহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে জেলের নির্দিষ্ট নিয়মাবলি রয়েছে। এক অভিযুক্তের উপরে হামলার অভিযোগ নিয়ে তো অন্য আদালতে মামলা চলছে। তাই সেটি এই আদালতের বিচার্য হতে পারে না। বিচারক সেই বক্তব্য মেনে নিয়ে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের জানান, এখানে ওই মামলার প্রসঙ্গ আর তোলার প্রয়োজন নেই।
তার পরেই সরকার পক্ষের আইনজীবীরা আবেদন জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে চার্জ গঠন করে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। দু’পক্ষের বক্তব্যের পরে বিচারক জানান, এই আবেদনের ব্যাপারে তিনি মঙ্গলবার রায় দেবেন।
শুনানির পরে আইনজীবী জয়নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ধর্ষিতা ও নিহত ছাত্রীর এক ভাইকে বিচারকের কাছে নিয়ে যান। বিচারকের কাছে ওই যুবক অভিযোগ জানান, সিআইডি-র তদন্তকারীরা তাঁকে ডেকেছিলেন। কিন্তু তিনি যা যা বলেছেন, সিআইডি তা নথিভুক্ত করেনি। সিআইডি তাঁকে বিভ্রান্ত করেছে। বিচারক সহানুভূতির সঙ্গে তাঁকে জানান, আইনের নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তাঁকে এই ব্যাপারে যথাস্থানে অভিযোগ জানাতে হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.