র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠার পরে তড়িঘড়ি ‘অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড’ তৈরি করল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাতে প্রথম বর্ষের এক ছাত্র র্যাগিংয়ের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে কলেজের ছাত্রদের একাংশ জানায়। তবে এখনও কারও বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
২০১২ সালে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়। মেডিক্যাল কাউন্সিল দ্বিতীয় বর্ষের অনুমোদন দেওয়ায় এ বছর প্রথম বর্ষে নতুন ১০০ জন ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করা হয়। তাদের নিয়ে গত ১২ অগস্ট থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাসও শুরু হয়েছে। ক্লাস শুরুর ১০ দিনের মধ্যে প্রথম বর্ষের ছাত্র এক ছাত্রকে বুধবার রাতে ‘র্যাগিং’ করা হয় বলে দ্বিতীয় বর্ষের কয়েক জন ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে দরজা ভেঙে ওই ছাত্রকে ঘর থেকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করার পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খবর দেওয়া হয় ওই ছাত্রের কলকাতার বাড়িতে। খবর পেয়ে তার বাবা-মা বিকেলে বহরমপুরে এসে পৌঁছান। পরে ওই রাতেই ছেলেকে নিয়ে কলকাতা ফিরে যান।
কলেজ অধ্যক্ষ অজয়কুমার রায় বলেন, “ওই ছাত্রকে র্যাগিং করা হয় বলে শুনেছি। তবে র্যাগিংয়ের কোনও লিখিত অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের কিছুটা মনোমালিন্য হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি। সেটাকে র্যাগিং বলা যাবে কিনা আমি জানি না।”
তবে ওই ঘটনার পরেই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড তৈরি করে। ওই স্কোয়াডে কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক পাঁচজন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের দুজন করে চারজন ছাত্র রয়েছেন। কলেজ চালুর সময়ে অবশ্য ‘অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি’ বলে ৯ জন শিক্ষক-চিকিৎসক নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে অবশ্য কোনও ছাত্র প্রতিনিধি ছিল না। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ চালুর দেড় বছর পরে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড তৈরি করা হল কেন? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেল বলেন, “সমস্ত কলেজে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড থাকার কথা। কলেজ চালুর দেড় বছর পরেও কেন তা গঠন করা হয়নি, তা আশ্চর্যের! কলেজে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড থাকলে ওই ছাত্রকে প্রকৃতই র্যাগিং করা হয়েছে কি না, এবং কারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা জানা যেত।” তিনি জানান, অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের কাছে ‘র্যাগিংয়ের ঘটনাতে জড়িত হবে না’ এই মর্মে কলেজের সমস্ত ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের সই করতে হয়। স্কোয়াড তৈরি হয়নি বলে সেই অঙ্গীকারও কলেজ কর্তৃপক্ষ আদায় করতে উঠতে পারেনি।
এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমানও বলেন, “অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড আরও আগেই গঠন করার প্রয়োজন ছিল।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পার্থ পাল অবশ্য বলেন, “এত দিন তো মেডিক্যাল কলেজে কোনও র্যাগিংয়ের মত কোনও ঘটনা ঘটেনি। ফলে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের প্রয়োজন হয়নি। বুধবার রাতে র্যাগিংয়ের ঘটনার পরেই অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে।” তবে স্কোয়াড গঠন না হওয়ার জন্য পার্থবাবু মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামোর অভাবকে দায়ী করেন।
আক্রান্ত ছাত্রটি অবশ্য র্যাগিংয়ের বিষয়ে কোথাও কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি। তাঁর কথায়, “আমাকে ফের ওই কলেজে ক্লাস করতে যেতে হবে। এ নিয়ে আমি কোনও কিছু বলব না।” সুস্থ হলেই আগামী সপ্তাহে তিনি কলেজে যাবেন বলে জানান। |