মেওয়া চলে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে, তালের বড়া হবে কীসে?
ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ের শ্রাবণী মেলা মিষ্টির স্বাদ কেড়েছে জঙ্গিপুরের। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ওই মেলার জন্যই ‘মেওয়া’ বাড়ন্ত। ক্ষীর বা ‘খোওয়া’-কেই চলতি কথায় বলা হয় মেওয়া। তার আকাল চলছে জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়েই। মেওয়ার অভাবে পানসে ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমীর উৎসবও। দুটি উৎসবেই তালের মাড়ি দিয়ে তৈরি নানা খাদ্য-উপকরণের সঙ্গে মেওয়ার মিশ্রণে অপূর্ব স্বাদ থেকে যাচ্ছে অধরা।
মেওয়া দিয়ে মিষ্টির প্রথম সারিতেই রয়েছে পোস্তমাখানো রসকদম্ব। মেওয়ার ঘাটতির কারণে তাতে বাড়তি চিনি মিশিয়ে দেওয়ায় স্বাদ হারিয়েছে রসকদম্ব। মৌচাক, পান্তুয়া, লেডিকেনি, চমচমের খোয়া, সবেতেই মেওয়ার ব্যবহার। কিন্তু দীর্ঘ এক মাস ধরে মেওয়া মিষ্টি বাজার থেকে প্রায় উধাও। দোকানে যেগুলি বিক্রি হচ্ছে তা কার্যত ‘চিনির ঢেলা’ এবং দামেও বেশি।
রঘুনাথগঞ্জের বড় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী অতনু নন্দন বলেন, “জঙ্গিপুর থেকে ফরাক্কা সর্বত্রই চলছে মেওয়ার সংকট। শুধুমাত্র জঙ্গিপুর ও রঘুনাথগঞ্জের শহরের প্রায় ৩০টি মিষ্টির দোকানে দৈনিক ৩ কুইন্টল করে মেওয়া লাগে। সবটাই আসে বহরমপুর থেকে। এক মাস আগেও মেওয়ার দাম দিতে হচ্ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কিলো। আর এখন ২১০ টাকা দরেও ভাল মেওয়া মেলা ভার। কারণ আমদানি হওয়া সব মেওয়াই জঙ্গিপুর বাজারে না এসে চলে যাচ্ছে লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে। সেখানে এক মাস ধরে চলছে শ্রাবণী মেলা, যার রেশ এখনও কাটেনি। হাজার হাজার দর্শনার্থী জড়ো হয় সে মেলায়। মেলার পাশেই ঘোড়ামারা গ্রামে বসেছে ‘প্যাড়ার মেলা’। শ’দুয়েক দোকানে কাঁড়ি করে রাখা আছে মেওয়ার তৈরি প্যাড়া। জঙ্গিপুরের মেওয়া চড়া দাম পাওয়ার কারণে চলে যাচ্ছে সেখানে। ফলে স্থানীয় বাজারে মেওয়া বাড়ন্ত। সামনের পুজো পর্যন্ত এই সমস্যা চলবে।”

মুর্শিদাবাদের রসকদম্ব, এখন মেওয়ার অভাবে পানসে। —নিজস্ব চিত্র।
আর এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সুমিত দাশগুপ্তের কথায়, “এখন কোনও রকমে দোকান চালাতে আশেপাশের ছানা-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া দামে মেওয়া বানিয়ে নিতে হচ্ছে। ফলে মেওয়ার তৈরি মিষ্টির দামও বেড়েছে, গুণমানও কমেছে। কান্দিতে প্রচুর পরিমাণে ছানা ও মেওয়ার উৎপাদন হয়। কিন্তু সে মেওয়া দিয়ে পাকের মিষ্টি বানানোর ক্ষেত্রে ঠিকমতো কাজ হয় না। তাই সে মেওয়ার চাহিদা নেই।” জঙ্গিপুরের ৭০ বছর বয়স্ক সীমন্তিনী দাস বলেন, “এই সময় ঝুলনযাত্রা ও জন্মাষ্টমীর মতো অনুষ্ঠানগুলি থাকে। পাকা তালের মাড়ি দিয়ে বড়া, লুচি-সহ অনেক কিছু উপকরণ তৈরি হয়। গ্রামাঞ্চলে বহু পরিবারে ঘটা করে ঝুলন ও জন্মাষ্টমীর উৎসব হয়। তালের মাড়ির সঙ্গে দুধ ও মেওয়া মিশিয়ে মোলায়েম করে তৈরি হয় সেই সব উপকরণ। তার স্বাদই আলাদা।” বছর পাঁচেক আগেও ৫০ টাকা কিলো দরে ভাল মেওয়া মিলত জঙ্গিপুরের বাজারে। এখন বেশি দাম দিয়েও ভাল মেওয়া মিলছে কই? তাই মেওয়া ছাড়া তালের বড়া বড় বিস্বাদ লাগছে সীমন্তিনী দেবীর।
জঙ্গিপুরের বালিঘাটা পল্লির ছানা ও মেওয়ার কারিগর নবকুমার ঘোষ বলেন, “দুধের দাম অত্যধিক বেশি। এই সময় এক কিলোগ্রাম দুধে বড় জোর ১৭৫ গ্রাম মেওয়া তৈরি করা যাবে। শীতকালে সেটাই দাঁড়ায় ২৫০ গ্রামে। তা ছাড়া জঙ্গিপুরে মেওয়া তৈরির আগে দুধ থেকে সর তুলে নেওয়া হয় না। ফলে গুণমানে সেই মেওয়ার স্বাদই আলাদা। তাই আড়াইশো টাকার কমে মেওয়া বিক্রিতে লাভ থাকে না। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা অবশ্য সস্তার মেওয়া খোঁজে।” তিনি জানান, বহরমপুরের মেওয়া তৈরির কারিগরা মেওয়া তৈরির আগে দুধের সর তুলে আলাদা করে রাখে। যা থেকে ঘি তৈরি করে আলাদা দাম পায়। পরে অবশিষ্ট দুধ ফুটিয়ে মেওয়া তৈরি করে। কিন্তু সেই মেওয়ার স্বাদ ভাল হয় না।
সাগরদিঘির সুমিতা সাহার কথায়, “ঠাকুরের পুজোয় মেওয়ার তৈরি প্যাড়া-মন্ডা লাগে প্রতিদিনই। বেশির ভাগ দোকানেই প্যাড়া নেই। তাই চিনি-বাতাসা দিয়েই পুজো সারতে হচ্ছে। তালের বড়ায় মেওয়া দিলে তার স্বাদই যেন বদলে যায়। পান্তুয়ার মতো লাগে। তালের মাড়ির সঙ্গে তাই মেওয়ার বিকল্প ডেয়ারির দুধের তৈরি ক্ষীর মিশিয়ে বড়া, লুচি বানালেও স্বাদ মিলছে কই? দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেলে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.