অনু-সেচ বা হাইটেক হর্টিকালচার। কিংবা বিশ্বমানের সাদা জাপানি গুটির রেশম চাষ।
উন্নত মানের ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কৃষিপদ্ধতির প্রশিক্ষণ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে নদিয়ার ১০০ জন কৃষককে। এগ্রি-টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির প্রকল্পের টাকায় কৃষি, উদ্যানপালন, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য ও রেশম দফতর থেকে কৃষকদের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে। কৃষি দফতর থেকে ২০ জন কৃষককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওড়িশার কটকে সেন্ট্রাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। সেখানে উন্নত প্রযুক্তির ধানচাষের পাশাপাশি নতুন জাতের ধান চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ধানখেতে কী ভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব, শেখানো হবে তা-ও।
ওড়িশার ভুবনেশ্বরে পাঠানো হচ্ছে ২০ জন মৎস্য চাষিকে। সেখানে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্রেশ ওয়াটার অ্যাকুয়াকালচার-এ তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এখানেও ধানখেতে মাছ চাষের মতো সুসংহত মৎস্য চাষ পদ্ধতি শেখানো হবে। বিশাল জলাশয় বা নদীতে খাঁচা করে ‘কেভ ইরিগেশনে’র মাধ্যমে বিশেষ প্রযুক্তির মাছ চাষেরও প্রশিক্ষণ নিয়ে আসবেন ওই মৎস্য চাষিরা। রেশম দফতর তাদের চাষিদের পাঠাচ্ছে বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল সিল্ক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলায় হলুদ রঙের যে রেশম চাষ হয় তা খুবই নিম্নমানের। চাহিদা কম, দামও কম পান চাষিরা। অথচ নদিয়ায় বিশ্বমানের সাদা জাপানি গুটির চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। রানাঘাট তুঁত ফার্মে বহু রেশম চাষ করে সফলও হয়েছে রেশম দফতর। এই রেশম বর্তমানে কেবল মাত্র কালিম্পং ও দার্জিলিঙে চাষ হয়। এর সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে যাতে নদিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে সাদা রেশমের চাষ করা যায়, তার জন্য বহু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পৃথিবী বিখ্যাত বেঙ্গালুরু সিল্ক কী ভাবে তৈরি হয়, তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ দফতর থেকেও ২০ জন কৃষককে পাঠানো হচ্ছে গুজরাতের আনন্দ এলাকায়। সেখানে সমবায়ের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপণনের বিষয়টি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে সবার প্রথমে উদ্যান পালন দফতর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৭ জন চাষিকে বাছাই করে নিয়ে যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের জলগাঁও এলাকায়। সেখানে বিভিন্ন কৃষি ফার্মে নিয়ে গিয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে ‘মাইক্রো ইরিগেশন’ বা অনু-সেচের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়াও পলি হাউসের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তিতে চাষেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, অনু-সেচের মাধ্যমে জলের সঙ্গে গুলে জমিতে সার দেওয়া হয়। আর শুধু জলের ও সারের অপচয় বন্ধ হয় না, আগাছা নিয়ন্ত্রণও হয়। রোগ ও পোকার উপদ্রব কমানোর পাশাপাশি ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মানবৃদ্ধি হয়।
কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ?
নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “উদ্যানপালন থেকে শুরু করে মাছ চাষ, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমাদের জেলার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। কিন্তু চাষিদের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকায় ঠিক মতো অগ্রগতি হচ্ছে না। চিরাচরিত প্রযুক্তি আঁকড়ে থাকায় অনেক সময় চাষিরা পিছিয়ে পড়ছে।” তিনি বলেন, “বিভিন্ন দফতর থেকে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসার পরে তাঁরা নিজেরাই তাদের জমিতে চাষ করবেন। পরবর্তী কালে ওই সব চাষিদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি ওঁদের দিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়ানো হবে।” ২৬ অগস্ট জলগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন করিমপুরের পানচাষি লক্ষণ প্রামাণিক। তিনি বলেন, “ঠিক মতো জল দিতে না পারলে পান গাছে ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই আমরা যদি অনু-সেচ পদ্ধতি ঠিক মতো শিখে আসতে পারি, সব পানচাষিদেরই ব্যাপক উপকার হবে।” আবার বর্ষায় কী ভাবে উন্নত মানের পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব, তা সেখানে দেখতে যাচ্ছেন নাকাশিপাড়ার আনন্দ মণ্ডল।
চাষিদের আপাতত একটাই কথা— কী ভাবে আরও উন্নত প্রযুক্তিতে জৈব চাষ সম্ভব, সেটা আমারা ভাল করে শিখে আসতে চাই। |