|
|
|
|
বিশ্লেষণ সিপিআইয়ের |
রাজনৈতিক মোকাবিলার ব্যর্থতায় ভরাডুবি ভোটে
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে বামফ্রন্ট। সে কারণেই পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো একদা লালদুর্গে বামেদের ফল খারাপ হয়েছে। নির্বাচনী ফলাফলের পর্যালোচনায় এ কথা স্বীকার করে নিল বাম শরিক সিপিআই।
দলীয় সূত্রে খবর, কেন পঞ্চায়েতে বামেদের ভরাডুবি হল, তা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি সিপিআইয়ের এক বৈঠক হয়। সেখানে চার পাতার একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। রিপোর্টে সিপিআই নেতৃত্বের স্বীকারোক্তি, সমগ্র প্রচারপর্বে মুখ্যমন্ত্রী-সহ ১০-১২ জন মন্ত্রী দিনের পর দিন ছোট বড় অসংখ্য সভা করে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেছে। নানা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। অন্য দিকে, বামপন্থীরা তেমন কোনও সংগঠিত রাজনৈতিক প্রচার চালাতে পারেনি। বড় সভা, মিছিল হয়নি। কিছু প্রচারপত্র, কিছু পোস্টারেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার কথায়, “পঞ্চায়েতের ফল নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। কী জন্য এমন ফল হল, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা জনগণের কাছে তুলে ধরা দরকার। কী ছিল, কী হয়েছে, জনগণের প্রত্যাশাই বা কী ছিল, তা জানানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমরা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
সিপিআইয়ের পর্যালোচনায় কী উঠে এসেছে? জানা গিয়েছে, ভরাডুবির ৭টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শাসক দলের সন্ত্রাস। দুই, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার বাইরে থাকা গ্রামীণ কায়েমি শক্তির হঠাৎ সক্রিয়ে হয়ে ওঠা। তিন, তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলায় ফ্রন্টের পিছিয়ে থাকা। চার, গত দু’বছরে পঞ্চায়েতকে কাজ করতে না দেওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা। পাঁচ, বামফ্রন্টের অনৈক্য। ছয়, পার্টির সাংগঠনিক ঘাটতি। এবং সাত, জঙ্গলমহলে তৃণমূল সরকারের সাফল্য। পর্যালোচনা রিপোর্টে নেতৃত্ব স্বীকার করেছেন, ঝাড়গ্রাম মহকুমায় তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় কম পেয়েছে। সন্ত্রাসও অপেক্ষাকৃত কম। প্রাক্তন মাওবাদী এবং জনগণের কমিটির একটা বড় অংশ তৃণমূলে ভীড়ে গিয়েছে। শাসক দলের আধিপত্য কায়েম হয়েছে। তাই এলাকা আপাতত শান্ত। মুখ্যমন্ত্রী বারেবারে জঙ্গলমহলে এসেছেন। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মানুষও প্রভাবিত হয়েছেন। পাশাপাশি, দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, বামফ্রন্টের ঐক্য সর্বাত্মক করার সঙ্কল্প ঘোষিত হয়েছিল। জেলা ও স্থানীয়স্তরে বারেবারে আলোচনা করে আসন বণ্টনে মোটামুটি সার্বিক ঐক্য হলেও যথারীতি সিপিআইয়ের বরাদ্দ আসনে সিপিএমের গোঁজ ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব যথাযথ পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিলেও কিছুই করতে পারেননি। বড় শরিক সিপিএম আরও যত্নবান হলে সার্বিক ঐক্য বামপন্থী মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, জেলা পরিষদ আসনের নিরিখে পশ্চিম মেদিনীপুরে বামফ্রন্ট ভোট পেয়েছে ৯ লক্ষ ৯১ হাজার। তৃণমূল ভোট পেয়েছে ১৬ লক্ষ ৮৬ হাজার। কংগ্রেস ৩৫ হাজার। বিজেপি ১৭ হাজার। ঝাড়খণ্ডী দলগুলো ৯ হাজার। সিপিআইয়ের এক জেলা নেতার কথায়, “রাজনৈতিক প্রচারের শূন্যতা, সন্ত্রাস, সাংগঠনিক দুর্বলতা সহ বহু ত্রুটি- বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও ৯ লক্ষ ৯১ হাজার মানুষ বামপন্থীদের উপর আস্থা রেখেছেন। তাই হতাশা কাটিয়ে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছনো জরুরি। কারণ, ব্যাপক মানুষের সমাবেশই পারবে তৃণমূলের জনস্বার্থ বিরোধী কাজকে প্রতিহত করতে।” |
|
|
|
|
|