|
|
|
|
|
|
আঁধার সাঁতরে |
লক্ষ মানিক জ্বালা |
চন্দন রুদ্র |
এঁরা জল বোঝেন স্পর্শে। দিক বোঝেন শব্দে। এঁদের নিয়েই রবীন্দ্র সরোবরের সুইমিং পুলে হয়ে গেল দৃষ্টিহীনদের সারা বাংলা সাঁতার প্রতিযোগিতা। যৌথ ভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ‘ব্লাইন্ড পারসন্স অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি’।
টানা আট বছর ধরে চলছে এই প্রতিযোগিতা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, টালিগঞ্জের ‘লাইট হাউস ফর দ্য ব্লাইন্ড’, বেহালার ‘ভয়েস অফ ওয়ার্ল্ড’, হলদিয়ার ‘ভারত সেবা মিশন’-এর মতো একাধিক সংস্থার প্রায় ১৫০ জন প্রতিযোগী এ বারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন।
|
|
ব্লাইন্ড পারসন্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব বুদ্ধদেব সিকদার বললেন, “পুলের দু’দিকে লাইফ সেভাররা থাকেন। যাতে প্রতিযোগীদের আঘাত না লাগে। আর দিক ঠিক রাখার জন্য প্রতিটি লেনের সামনে ঘণ্টা বাজানো হয়।” চেন্নাইয়ে গত বছর দৃষ্টিহীনদের জাতীয় সাঁতারে জুনিয়র বিভাগে সেরা হয়েছিল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ‘ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমি’র দশম শ্রেণির ছাত্র বিজয় পুরকায়েত। এখানে ফ্রিস্টাইল ও ব্যাকস্ট্রোকে পদক জিতল সে। সাঁতারু মাইকেল ফেল্পসের ভক্তটি বলল, “আন্তর্জাতিক প্যারা অলিম্পিকে দেশের হয়ে অংশ নিতে চাই।”
হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ‘ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুল’ থেকে ১৫ জন দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছিলেন স্কুলের শিক্ষক দীপ্তেন্দুবিকাশ মান্না। এই স্কুল থেকে এ বারই চারটি লেটার-সহ ৫২১ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে মন্দিরা মণ্ডল। শ্যামপুরের কৃষক পরিবারের এই মেয়ে ১০ বছর বয়সে গ্লকোমায় দু’চোখের দৃষ্টি হারায়। “অসুস্থতা, পড়াশোনার চাপে এ বার তেমন অনুশীলন হয়নি। তাই ফল ভাল হল না,” আক্ষেপ মন্দিরার।
রীতিমতো লড়াই করে একাধিক পদক জিতে নিয়ে গেল নবদ্বীপের ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ব্লাইন্ড স্কুল’-এর পিঙ্কি খাতুন, প্রতিমা ঘোষ, সাবিনা খাতুন, সান্ত্বনা ঘোষরা। ক্রীড়াপ্রশিক্ষক বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় বললেন, “আবাসিক এই স্কুলে সাঁতার শেখার কোনও ব্যবস্থাই নেই। পাশের একটি পুকুরে অনুশীলন চলে। |
|
এর পরেও ছেলেমেয়েরা চেন্নাইয়ের জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা থেকে একাধিক পদক জিতে এসেছে।” ‘ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমি’র আট জন প্রতিযোগী চেন্নাই থেকে জিতে আনে ২২টি পদক। দৃষ্টিহীনদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এই স্কুলের ছাত্র শুকদেব বিশ্বাস ২০০৬-এ লন্ডনে যান। ২০০৮-এ প্রসেনজিৎ আদক জার্মানি গিয়েছিলেন। অ্যাকাডেমির সাঁতার প্রশিক্ষক সুকুমার সাঁতরা বললেন, “প্রথমে এঁরা জলে নামতে ভয় পান। তাই লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে নামাতে হয়। এঁদের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে।
কিন্তু উৎসাহের অভাবে অনেক প্রতিভাই হারিয়ে যাচ্ছে।”
সভাপতি কিঙ্কর ঘোষ জানান, সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজনের পাশাপাশি ব্রেইলে উচ্চশিক্ষার বই, দৃষ্টিহীন ছাত্রদের জন্য অডিও লাইব্রেরি চালানো হয়। ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি-র সুইমিং কনভেনর অমিত বসুর কথায়: “আট বছর ধরে চলছে এই প্রতিযোগিতা। আমরা চাই এই সাঁতারুরাও প্রতিষ্ঠা পাক।” |
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
|
|
|
|
|