বিধায়ক তহবিলের টাকায় কাজের পর্যালোচনা
প্রশাসনিক বৈঠক প্রতি মাসে
বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে বরাদ্দ টাকায় কাজের পর্যালোচনা করতে প্রতি মাসে মহকুমা এবং ব্লকস্তরে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে জেলায় এসে পৌঁছেছে এই নির্দেশিকা। সেই মতো মাসিক বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আজ ২৪ অগস্ট মেদিনীপুর (সদর) মহকুমাস্তরের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকটি হবে মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্তের দফতরে। উপস্থিত থাকার কথা এই মহকুমার অন্তর্গত ৪ জন বিধায়ক এবং ৬ জন বিডিওর। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ খরচে অনেক সময়ই ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে। নিয়ম মেনে খরচের ইউসি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট ) জমা দেওয়া দূর, প্রাপ্য টাকার প্রকল্পও সময়মতো তৈরি করতে পারেন না একাংশ বিধায়ক। সরকার মনে করছে, প্রতি মাসে মহকুমা এবং ব্লকস্তরে বৈঠক হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
কয়েক মাস আগে এই তহবিলের কাজকর্ম নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠে অডিট রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, প্রাপ্য অর্থ খরচ না হওয়ায় স্থানীয়স্তরে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে রাজ্য থেকে রিপোর্টের প্রতিলিপি পাঠিয়ে প্রতিটি জেলাকে সতর্ক করা হয়। এ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১১, এই সময়ের মধ্যে ১৯টি জেলার জন্য ৭০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এ ক্ষেত্রে ৩৭৬৩৮টি প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছিল। যদিও খরচ হয়েছে ৫৮২ কোটি ১৩ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা। এই টাকায় ২৯৩৭২টি প্রকল্পের কাজ হয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই রাজ্য সরকারের ওই নির্দেশ বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন এলাকা উন্নয়ন তহবিলে বিধায়কদের জন্য বছরে ৬০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়। বরাদ্দ অর্থের ৩০ শতাংশ খরচ হলে পরের ধাপের টাকা পেতে পারেন একজন বিধায়ক। কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় গড়িমসি করা হয়। ফলে, কাজ এগোতে সমস্যা হয়। জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, কাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগোয়। খরচের হিসেব আসতে কিছুটা দেরি হয়। ফলে, খাতায়কলমে বাস্তবের খরচের সঙ্গে হিসেবে কিছুটা ফারাক থাকেই। প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিরোধীদের আরও অভিযোগ রয়েছে। নিয়মমতো কোনও কাজ শেষের পর, প্রকল্প এলাকার সামনে একটি ফলক বা বোর্ড লাগানোর কথা। যেখানে লেখা থাকবে, কাজটি ওই তহবিলের অর্থেই হয়েছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ‘আমরা-ওরা’র বিভাজন চলছে বলে অভিযোগ একাংশ বিরোধী বিধায়কের। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল বিধায়কদের নির্বাচনী এলাকায় যে সব কাজ হচ্ছে, সেখানে প্রকল্পের সামনে বড় ফলক কিংবা বোর্ড লাগানো হচ্ছে। কিন্তু বিরোধী বিধায়কদের নির্বাচনী এলাকায় কাজের ক্ষেত্রে বোর্ড লাগানো হচ্ছে না। কোথাও কোথাও দায়সারা ভাবে প্রকল্প এলাকায় বোর্ডে লেখা হচ্ছে ‘বিইইউপি’, অর্থাৎ বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প। তা অবশ্য পথচলতি মানুষের নজরেই পড়ে না।
তবে, সব ছাপিয়ে সামনে উঠে আসছে সময় মতো টাকা খরচের বিষয়টিই। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় বিধায়কেরা তাঁদের এলাকার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে পারেন। কালভার্ট তৈরি, স্কুলের পরিকাঠামো নির্মাণ, পানীয় জল প্রকল্প-সহ নানা কাজ করা যায়। অধিকাংশ এলাকায় রাস্তাঘাট, পানীয় জল, সেচের সমস্যা রয়েছে। অথচ, টাকা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র একাংশ বিধায়কদের উদাসীনতার জন্য অনেক সময় কাজ করা যায় না বলে অভিযোগ। ফলে, বরাদ্দ অর্থ ফেরতও যায়। জানা গিয়েছে, রাজ্যের নির্দেশিকার প্রতিলিপি ইতিমধ্যে মহকুমাশাসক এবং বিডিওদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর্ব শেষ হতেই বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ অগস্ট মেদিনীপুর (সদর) মহকুমাস্তরে বৈঠক হবে। পরে খড়্গপুর, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম মহকুমাস্তরে বৈঠক হবে। পর্যালোচনা বৈঠকের ফলে কাজ এগোতে আরও সুবিধে হবে বলে মনে করছেন বিধায়কেরাও। মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতির কথায়, “আলোচনার সুযোগ থাকছে। ফলে, দুর্বলতা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এর ফলে, পরবর্তীকালে কাজ এগোতে আরও সুবিধে হবে।” কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুইয়ের কথায়, “প্রকল্প নিয়ে আমাদের বক্তব্য বৈঠকে বলব। আমরা চাই, সময়ের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হোক।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.