থিমপুজোর শহরে এ বার ইন্দো-ফরাসি যুগলবন্দি
‘আফটার কান, ইট’স কলকাতা’!
এমনই একটা হোর্ডিং কিছু দিন ধরে দেখছে নানা কৌতূহলী চোখ। যাদবপুর থানা ছাড়িয়ে প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোডে ডান হাতে যে মাঠটা, সেটা টিনের দেওয়ালে ঘেরা। সেখানেও পোস্টার- ‘ইন্দো-ফ্রেঞ্চ কোলাবরেশন’।
বাঙালি-মনে ফরাসি শব্দটাই অনেকটা সুগন্ধির মতো। দুই সংস্কৃতির মিল নিয়েও বহু চর্চা চালু। এ হেন কলকাতায় সুদূর কান থেকে কিসের আমদানি হতে চলেছে? তা-ও আবার সেই যোধপুর পার্কের কাছে। যেখানে ক’দিন আগেই ফরাসি তরুণ-তরুণীর হেনস্থা ও তার পরে সেই তরুণীর রাতারাতি নিজের দেশে ফেরা নিয়ে বেশ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল শহরে।
তবে এ বারের ফরাসি যোগটা বাঙালির সেরা পার্বণ দুর্গাপুজো নিয়ে। একটি ভ্রমণ সংস্থা ও কলকাতায় ফরাসি দূতাবাসের সাংস্কৃতিক শাখা ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’-এর যৌথ উদ্যোগে হতে চলেছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের পল্লিমঙ্গল সমিতির এ বারের পুজো।
‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’-এর ডিরেক্টর স্তেফান আমালির বললেন, “গত দুর্গাপুজোর ঠিক আগে কলকাতায় আসি। ফ্রান্সের খুব কম লোকই এর কথা জানে। আমি গত বছরই এর সাক্ষী হলাম। পুজোর শৈল্পিক সৌন্দর্য, একে ঘিরে লক্ষ লক্ষ লোকের উন্মাদনা সত্যি অবর্ণনীয়। পুজোর কয়েকটা দিন শহরটার চেহারাই বদলে যায়। অনেকটা ভেনিস কিংবা রিও-র কার্নিভ্যালের মতো।”
মধ্য লন্ডনের ক্যামডিনে পাড়ি দেবে কুমোরটুলির প্রতিমা। জোরকদমে চলছে তারই প্রস্তুতি। ছবি: সুদীপ আচার্য
ভ্রমণ সংস্থার তরফে জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত পুজোয় ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক প্রভৃতি ৮টি দেশ থেকে পর্যটকরা এসে দারুণ উপভোগ করেছিলেন পুজো। সেই থেকেই এ বারের পুজোর ভাবনা। আর ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’কেও পাশে পেলাম। এ বার ‘লো ফিগারো’ ও ‘লা প্রেস’ নামে দু’টি ফরাসি দৈনিক থেকে কিছু সাংবাদিকের পুজো দেখতে আসার কথা।”
কেমন হবে এই ইন্দো-ফরাসি পুজো? থিমটা আকর্ষণীয়। ভারতীয় সিনেমার ১০০ বছর। মূল ভাবনাটি যাঁর, সেই সোনালি চক্রবর্তীর দাবি, “এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্রের ১০০ বছর উদ্যাপিত হয়। তার পরে এই পুজোতেই আবার ফিরছে বর্ণময় সেই অধ্যায়।” তিনি জানান, ফরাসি-ভারতীয় সিনেমার যোগ আজকে নয়। বহু কাল আগে ল্যুমিয়ের ব্রাদার্স পারি-তে সিনেমাটোগ্রাফিকে সকলের কাছে পরিচিত করার পরের বছরই তৎকালীন বম্বের ওয়াটসন হোটেলে প্রথম দেখান তাঁদের শর্ট ফিল্ম ‘লারিভে দ্যাঁ থ্র্যাঁ অঁ গার দো লা সিওতা’ (দ্য অ্যারাইভাল অফ আ ট্রেন অ্যাট দ্য স্টেশন সিওতা)। তার পরেই ১৯১৩-য় মুক্তি পায় দাদাসাহেব ফালকের ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’। আমাদের ভাবনাও শুরু সেই সময়কাল থেকেই।”
স্তেফানের কথায়, “শুনেছিলাম, কলকাতা ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানে এসেও দেখছি, রোজই প্রদর্শনী, থিয়েটার, সিনেমা কিছু না কিছু হচ্ছেই। ঠিক পারি-র মতোই। এখানকার মতোই ফ্রান্সেও সিনেমা সংস্কৃতির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গ। বাংলা ছবি ফ্রান্সে খুব জনপ্রিয়, সেই সত্যজিৎ রায়ের আমল থেকে। বাংলা ছবি তৈরির ধরনটা ফরাসি ছবির মতোই। কাজেই ইন্দো-ফরাসি পুজোয় এর চেয়ে ভাল থিম আর কী-ই বা হতে পারে?”
এই পুজোয় ফ্রান্স থেকে দুই ফ্রেস্কো আর্টিস্ট আসবেন। তাঁরা দুর্গাপুজোয় এখানে কাজ করতে আসবেন বলে খুব উত্তেজিত। তবে ফরাসিরা বাঁশের কাঠামো ব্যাপারটার সঙ্গে পরিচিত নন। তাই ওই দুই শিল্পী প্রতিমা বা মণ্ডপ সাবেক রেখে সাজসজ্জায় শুধু একটু ফরাসি ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করবেন। ৮ অক্টোবর পুজোর উদ্বোধনের দিন থেকে পুজোপ্রাঙ্গণে হবে ফরাসি শো। ওটা অনেকটা পথনাটিকার মতো, ফরাসিতে যাকে বলে ‘স্পেকতাক্ল দো লা রু্য’। তবে দর্শকরা সকলে তো ফরাসি বুঝবেন না। তাই শো-টা হবে নির্বাক ছবির বিষয় নিয়ে।
দুর্গাপুজো কি তা হলে আক্ষরিক অর্থেই আন্তর্জাতিক হল? স্তেফানের সংযোজন, “দুর্গাপুজোটা বিদেশি ট্যুরিস্টদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় হতে পারে। ফ্রান্সের লোকদের কাছে জনপ্রিয় বেড়ানোর জায়গা ইতালি-গ্রিস। ভারতে এলে তারা তাজমহল বা গোয়ায় যেতে ভালবাসে। আর পশ্চিমবঙ্গে এলে দার্জিলিং বা সুন্দরবন। কিন্তু দুর্গাপুজো যেহেতু বাঙালি সংস্কৃতির এত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক, তাই এটা দেখতেও বিদেশিরা পছন্দ করবে। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্যই তখন তারা দুর্গাপুজোর সময়ে কলকাতায় আসবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.