সিপিএমের প্রতীকে জিতে দলবদল করে ‘তৃণমূলে’ যোগ দিয়েছিলেন খয়রাশোল পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ। লটারির মাধ্যমে শুক্রবার ভূপেনবাবুই ওই পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান নির্বাচিত হলেন। গোটা খয়রাশোল ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে একমাত্র খয়রাশোল পঞ্চায়েতের ক্ষমতাই সিপিএমের দখলে এল। তবে ওই পঞ্চায়েতে উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূল থেকেই।
এই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে ঘিরে শুধু মাঝে হল একপ্রস্থ নাটক।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষ হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে এবং ওই খুনে অভিযুক্ত ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ছত্রছায়ায় থাকা বেশ কিছু নির্বাচিত সদস্য এলাকা ছেড়ে পালানোয় ওই ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন দিন কয়েক পিছিয়ে গিয়েছিল। এ দিনই বোর্ড গঠন হল পঞ্চায়েতগুলিতে। ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টিতেই ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। শুধুমাত্র খয়রাশোল ও নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েতে ছিল ত্রিশঙ্কু। ৮ আসন বিশিষ্ট খয়রাশোল পঞ্চায়েতে ৪টি করে আসন পেয়েছিল তৃণমূল ও সিপিএম। আর নয় আসনের নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েতে ৪টি করে আসন সিপিএম ও তৃণমূল পায়। ১টি আসন পেয়েছিল নির্দল প্রার্থী (আদতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল)। |
ভিতরে তখন চলছে বোর্ড গঠনের সভা। বাইরে পাহারায় পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র |
স্থানীয় সূত্রর খবর, পঞ্চায়েত ভোটের সময় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর নেতা আশোক ঘোষ ও ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় আসন সমঝোতা করে খয়রাশোলে লড়লেও ভোট মিটতেই দুই নেতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে অসতে শুরু করে। দলের টিকিটে জিতে আসা পঞ্চায়েত সদস্যদের উপর কর্তৃত্ব কোন নেতার হাতে থাকবে, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী অশোক মুখোপাধ্যায় না এলাকার প্রভাবশালী নেতা অশোক ঘোষ লড়াইটা মূলত ছিল এটা নিয়েই। ১২ অগস্ট খুন হওয়ার আগে এলাকায় তাঁর শক্তি ক্রমশই বাড়িয়ে চলেছিলেন অশোক ঘোষ। খুন হওয়ার দিন কয়েক আগেই সদ্য নির্বাচিত প্রধান ভূপেন্দ্রবাবু-সহ ত্রিশঙ্কু খয়রাশোল পঞ্চায়েতে চার সিপিএম সদস্যকে তৃণমূলে যোগ করিয়েছিলেন অশোকবাবু। যদিও সেই দল বদল ছিল মৌখিক। ভিন্ন অবস্থানে ছিলেন ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, “এ ভাবে কাউকে দলে ঢোকানো যায় না।” প্রায় একই অবস্থানে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। সেই কারণেই পাকাপাকি ভাবে দল বদল হয়নি ভূপেন্দ্রবাবুদের।
এ দিকে, পরিস্থিতি বুঝে ফের সিমিএমের কথা মতো এ দিন বোর্ড গঠন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সিপিএমের চার নির্বাচিত সদস্য। ক্ষমতায় সিপিএম না তৃণমূল থাকবে, তা নিয়ে বিরোধিতা তৈরি হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক দু-পক্ষের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। কিন্তু সমাধান না মেলায় শেষ পর্যন্ত টসে ঠিক হয় ক্ষমতা দখল করবে সিপিএম। তার পরেই প্রধান হন ভূপেন্দ্রবাবু। তবে উপ-প্রধান পদ সংরক্ষিত আসনের জন্য। কিন্তু সিপিএমের জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে তফসিলি জাতির মহিলা না থাকায় উপপ্রধান হন তৃণমূলের শিউলি আঁকুড়ে। সদ্য নির্বাচিত সিপিএম প্রধান ভূপেন্দ্রবাবুর সাফাই, “আমি অশোক ঘোষের অনুগামী হয়ে দল ছেড়েছিলাম। তবে মৌখিক ভাবেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। আর জটিলতা এড়িয়ে মানুষের জন্য কাজ করার জন্যই দলবদল করেছিলাম। এ দিন সিপিএমের প্রধান হিসেবেই নির্বাচিত হয়েছি।” মৌখিক ভাবে হলেও তিনি তৃণমূলে আর গেলেন না কেন? এর অবশ্য স্পষ্ট উত্তর মেলেনি ভূপেন্দ্রবাবুর কাছ থেকে। তবে দলীয় সূত্রে খবর, যেহেতু তৃণমূলের জেলা সভাপতি তাঁকে মেনে নিতে পারেননি, তাই ঝামেলা না বাঁধিয়ে সিপিএমেই থেকে গিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “সিপিএমের টিকিটে জেতা প্রার্থীরা তৃণমূলের কেন হতে যাবে। তাতে বিরোধী আসনে বসলেও ক্ষতি নেই।” অন্য দিকে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওঁরা কেউ দল বদল করেননি। সবই অপপ্রচার। দল বদল করলে আমাদের প্রধান হতেন না।”
খয়রাশোল পঞ্চায়েতে নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করতে না পারলেও নাকড়াকোন্দার নির্দল প্রার্থী শম্পা গণকে নিজেদের দলে টেনে ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় এল তৃণমূলই। |