দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে তালিকা চূড়ান্ত করে বর্ধমান পুরভোটে প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক দিল তৃণমূল।
শুক্রবারই ছিল পুর নির্বাচনে মনোনয়ন জমার শেষ দিন। আগের দিন পর্যম্ত দলের এক মন্ত্রী তথা জেলা নেতৃত্ব সূত্রে যে ৩৫ জনের নাম শোনা যাচ্ছিল, একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁদের সাত জন বাদ পড়লেন। এর মধ্যে দলের একদা রাজ্য সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষও রয়েছেন। তাঁদের বদলে তালিকায় এসেছেন নতুন সাত জন।
পঞ্চায়েতের মতো পুরসভার ভোটেও যে প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম আকার নিয়েছে, তা আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। যাঁরা শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে গেলেন, দলের সবুজ সঙ্কেত পেয়েই তাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। বেশ কয়েক জন ইতিমধ্যে টিকিট না পেয়ে ‘নির্দল’ হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সুজিত ঘোষের মতো হেভিওয়েট নেতাও। শুক্রবার ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি মনোনয়ন জমা দেন। বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা পরেশ সরকার ওই ওয়ার্ডেই প্রার্থী হয়েছেন।
বর্ধমান পুরসভার প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত করার জন্য কলকাতায় তৃণমূল ভবনে দিনের পর দিন বৈঠক হয়েছে। ঠিক ছিল, ১৬ অগস্ট তালিকা প্রকাশ করা হবে। তার পরে বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও কিন্তু তা করা যায়নি। শেষ লগ্নে দেখা গেল, বেশ কিছু ‘অঘটন’ ঘটে গিয়েছে। |
যেমন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ন্ত পাঁজাকে দাঁড় করানোর কথা চলছিল। বদলে প্রতীক পেলেন মহম্মদ আলি। পাশের ৫ নম্বরে বেলসুমা খাতুনের সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন শেফালি বেগম। তিনি দলেরই নেতা ইফতিকার আহমেদের স্ত্রী। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ক্রীড়া জগতের মানুষ শিবশঙ্কর ঘোষের আশায় জল ঢেলে প্রার্থী করা হয়েছে সৈয়দ মহম্মদ সেলিমকে। ৯ নম্বরে সুশান্ত ঘোষের নাম নিয়ে জল্পনা চলছিল। বদলে প্রার্থী হয়েছেন শিখা দত্ত। ১১ নম্বরে টিকিট পাওয়ার আশা করেছিলেন মনোজ মণ্ডল। সেখানে প্রার্থী হলেন দলের তফসিলি জাতি-জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সেলের নেতা শক্তিরঞ্জন মণ্ডল।
তৃণমূলে কিছু জেলা নেতা আগাম দাবি করছিলেন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সুনীল সাউয়ের শিকে ছিঁড়তে পারে। ওই ওয়ার্ডেই জয়দেব মুখোপাধ্যায় নামে এক তরুণ নেতাকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন এক রাজ্য নেতা। সুনীল বা জয়দেব কারও ভাগ্যেই প্রতীক জোটেনি। ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইউনিয়নের অন্যতম নেতা শৈলকুমার ঘোষ। প্রতিমন্ত্রী তথা বর্ধমান দক্ষিণ বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ইফতিকার আহমেদ পাপ্পু ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হবেন বলে কোমর বাঁধছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচশো কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল করেছিলেন স্থানীয় নেতা শেখ বশিরউদ্দিন ওরফে বাদশা। শেষে বাদশারই প্রার্তীর মুকুট মিলল।
দুপুর আড়াইটে নাগাদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বর্ধমানে আসেন। খানিক পরে তিনি বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামানিক, পরেশ সরকার, উত্তম সেনগুপ্তদের নিয়ে দক্ষিণ মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে ৩৫টি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের প্রতীক জমা দেন। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে দিয়েছেন কিছু কর্মী-সর্মথক। তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের কত জন শেষমেশ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন, তা-ও এখনও অস্পষ্ট।
গুসকরা পুরসভাতেও তৃণমূলের শহর সভাপতি নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় দলের হয়ে সমস্ত প্রতীক জমা দেন। ফলে তাঁর ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান চঞ্চল গড়াইয়ের মধ্যে এত দিনকার লড়াইয়ে আপাতত তিনিই জিতলেন বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের। গত ২০০৮ সালের পুর নির্বাচনে চঞ্চল গড়াইয়ের নেতৃত্বে সিপিএমকে হারিয়ে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এ বার নিত্যানন্দবাবুর হাতেই গুসকরা পুরভোটের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে দল।
কারও নাম না করেও চঞ্চলবাবু এ দিন বলেন, “দলকে বলেছিলাম, যে লোকের বিরুদ্ধে ছিনতাই বা লোকের টাকা মেরে দেওয়ার মামলা রয়েছে, তাকে যেন টিকিট না দেওয়া হয়। নইলে আমাদের যেন বাদ দেওয়া হয়। দল কথা শোনেনি। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠকে বসেছি।” তবে নিত্যানন্দবাবু বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওই ধরনের মামলা নেই। যে মামলাটি ছিল, তা হাইকোর্টে খারিজ হয়েছে। বরং অন্য কারও-কারও বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাৎ ও বধূ নির্যাতনের মামলা রয়েছে। তবে গুসকরার ভোটে আমরা সবাই এক সঙ্গেই আছি।” |