পুরসভাকে জমিদাতা বৃদ্ধার চিকিত্সায় গাফিলতি, নালিশ
হাসপাতাল তৈরির জন্য পুরসভাকে নিজের বসবাসের প্রায় পাঁচ কাঠা জমি দান করেছিলেন আশি ছুঁই ছুইঁ নিঃসন্তান এক বিধবা। শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার সেই জমিতে পুরসভার উদ্যোগে বছর ছয়েক আগে গড়ে উঠেছে চিকিত্‌সা কেন্দ্র শ্রীনিবাস সেবা সদন। পুরসভার তরফে সেখানে গরিব পরিবারের বাসিন্দাদের চিকিত্‌সা পরিষেবাও দেওয়া হচ্ছে। ওই বৃদ্ধা আশালতা মণ্ডল বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের ডান দিকের অংশ অসাড় হয়ে গিয়েছে। দিন ২০ আগে পুরসভার চিকিত্‌সক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সেবা সদনের নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে আসেন। চলাফেরার করার শক্তি নেই। চিকিত্‌সায় কিছুটা সুস্থ হলে সপ্তাহ খানেক আগে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়েছেন চিকিত্‌সক। কিন্তু তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার বা দেখভালের লোক নেই। নিরুপায় হয়ে তাঁকে হাসপাতালেই পড়ে থাকতে হচ্ছে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর স্বপন দাস জানান, হাসপাতালে ভর্তি করার পর পুরসভার চিকিত্‌সকরা দু’একটি ওষুধ কিনে দিয়েছিলেন। মাঝে এক দিন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ শিখা রায় গিয়ে একটি শাড়ি এবং ১০০ টাকা দেখভালের জন্য দিয়ে গিয়েছেন। ভর্তি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালের আয়ার খরচ প্রতিদিন ২০০ টাকা করে লেগেছে। তা ছাড়া স্ক্যান, রক্ত পরীক্ষা করানো, ওষুধ কেনার ব্যাপার রয়েছে। সে জন্য পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধানের কাছে আবেদন করেন স্বপনবাবু। মেয়রকেও জানিয়েছেন। তার পরেও কেউ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ তিনি। পুরসভার তরফে মেয়র বা আধিকারিকরা তাঁকে দেখতেও যাননি। চেনা পরিচিতদের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে আয়ার টাকা, বিভিন্ন পরীক্ষা, ওষুধের খরচ স্বপনবাবু জোগার করে দিয়েছেন। কিন্তু চিকিত্‌সক ছুটি দেওয়ায় সেবা সদনের ঘরে নিয়ে এলে তাঁকে কে দেখভাল করবেন, কে খাবার দেবে তা নিয়ে ধন্দ্বে পড়েছেন স্বপনবাবু। নিরুপায় হয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে বৃদ্ধাকে আনতেও সাহস করছেন না। তাঁর যুক্তি, “হাসপাতালে অন্তত দু’বেলা খাবার পাচ্ছেন বৃদ্ধা, আয়ারা দেখছেন। বাড়িতে আনলে কে দেখবেন। এখন তার আগের মতো চলাফেরার শক্তিও নেই। ”
বৃদ্ধা যাঁর অধীনে রয়েছেন সেই চিকিত্‌সক গৌতম দাশগুপ্ত বলেন, “বৃদ্ধার শরীরের ডান দিক অসাড় হয়ে গিয়েছে। তা কবে ঠিক হবে অনিশ্চিত। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে ছুটি দিয়েছি। এই অবস্থায় ওনার যত্ন দরকার। কাউন্সিলর কয়েকবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজ নিয়েছেন। তেমন আর কেউ তাকে দেখতেও আসেননি। বাড়ি যাবেন কি না আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কথা বলতেও পারছেন না। হেসে মাথা নেড়ে বলছেন যাবেন না। কিন্তু এ ভাবেই বা উনি কতদিন হাসপাতালে থাকবেন?” হাসপাতালে তাঁর শরীরে ‘ক্যাথেটার’ লাগানো রয়েছে। তা দিয়ে প্রস্রাব শরীরের বাইরে একটি থলিতে জমা হয়। তা আরও অন্তত দিন ২০ রাখা দরকার বলে চিকিত্‌সক জানিয়েছেন। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ওনার দেখভালের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখছি। কাউন্সিলরও আমাকে বলেছেন।” মেয়র জানান, তিনি বর্তমানে শহরের বাইরে রয়েছেন। শুক্রবার ফিরে আসপাতালে গিয়ে দেখা করবেন।
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে স্বামী শ্রীনিবাসবাবু মারা যাওয়ার পর ওই বৃদ্ধা একাকী থাকতেন। পরে তিনি নিজের বসবাসের জয়গা পুরসভাকে দেন। সেখানে চিকিত্‌সা কেন্দ্র তৈরি করে বৃদ্ধার ইচ্ছায় স্বামীর নামেই সেটির নামকরণ করা হয়েছে। সেখানে একটি ঘরে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি একাই থাকতেন। পরে তাঁরই মতো বয়স্ক এক দূরসম্পর্কের বোনকে তিনি সেবা সদনে নিজের ঘরে রাখেন। ওই মহিলাকে আশাদেবীই দেখতেন। তিনিও এখন গুরুতর অসুস্থ। পুরসভার তরফে মাসে ৪ হাজার টাকা এবং সরকারি ব্যবস্থায় মাসে ৪০০ টাকা করে বার্ধ্যক্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ওই বৃদ্ধার। তা দিয়েই তাঁর দিন চলত। কাউন্সিলর স্বপনবাবু বলেন, “এখন যা পরিস্থিতি তাতে ওনাকে একা রাখা সম্ভব নয়। সেই ভয়ে হাসপাতাল থেকে তাঁকে আনতেও পারছি না। পুরসভা তরফে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম জানান, মানবিকতার খাতিরে ওই মহিলার যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য পুর কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন তাঁরাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.