একই শয্যায় আড়াআড়ি শুয়ে রয়েছেন ওঁরা। এক চিলতে জায়গায় দু’দুটি সদ্যোজাত। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাতৃসদনে এটাই চেনা চিত্র।
পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে অনেক রোগীকে সদ্যোজাত বাচ্চা নিয়ে মেঝেয় রাত কাটাতে হচ্ছে। মাতৃসদনের দু’টি তলায় বেডের সংখ্যা সাকুল্যে ১৭০। নিয়ম করে প্রায় সাড়ে তিনশো প্রসূতি প্রতি দিন হাসপাতালে ভিড় করেন। সঙ্গে শ’খানেক সদ্যোজাত তো রয়েইছে। স্বভাবতই সকলের ভাগ্যে শয্যা জোটে না। আশপাশে বড় কোনও সরকারি হাসপাতাল না থাকার দরুন মাতৃসদনে পিঁপড়ের মত রোগীর সার লেগেই রয়েছে।
এ বছরের জুলাইয়ে রোগী ৩০৩৮ জন ভর্তি হন। গত বছরের তুলনায় সংখ্যাটা ৭৫০ জন বেশি। অত্যধিক রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকের মাতৃসদন চত্বরে ঢোকাই দায়। ওয়ার্ডের মধ্যে পা ফেলার জায়গা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। প্রসূতির সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হলে দোতলার একটি শ্রেণিকক্ষকে ‘ওয়ার্ড’ বানিয়ে নেন কর্তৃপক্ষ। তাতে অবশ্য ২০ জনের বেশি মাথা গোঁজার সুযোগ নেই।
এত রোগীর চাপ সামলাতে ভরসা ৬ জন নার্স। চিকিৎসক রয়েছেন ৫ জন। এক চিকিৎসক বলেন, “৫ জন চিকিৎসকের এত জনের সিজার করা সম্ভব নয়।” |
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মাতৃসদন ও বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে দু’টি ‘মেটারনিটি চাইল্ড হাব’ তৈরি না হওয়া অবধি ওই সমস্যা মিটবে না। হাব দু’টি তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে ২৩ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে।” সেই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের অকারণে প্রসূতিদের ‘রেফার’ করার প্রবণতা বন্ধ করার কথাও বলেন সুপার। তিনি বলেন, “অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলে অহেতুক মেডিক্যাল কলজে রেফার করার ব্যাপারে রাশ না টানলে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বাড়বে। সঠিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।” একে তো ঘেঁষাঘেষি করে শয্যা ভাগ করে থাকতে হয় রোগীদের। তার উপর কিছু অসাধু হাসপাতাল কর্মীদের কারসাজিতে সুরক্ষা যোজনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা। এর পিছনে এক শ্রেণির চিকিৎসকও জড়িত বলে জানা গিয়েছে।
হাসপাতালেই সমস্ত ওষুধ মজুত থাকার কথা। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও অনেক অসাধু ডাক্তার রোগীদের বাইরে থেকে ‘প্রয়োজনীয়’ ওষুধ কিনতে বাধ্য করছেন। অস্ত্রোপচারের পরে প্রসূতির বাড়ির লোকজনকে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে বাধ্য করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই ওষুধ খেয়ে রোগীর শরীরে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
সুপার মণিময়বাবু বলেন, “হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। তা সত্ত্বেও কোনও কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোগীর আত্মীয়দের বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনে আনতে বলেন বলে অভিযোগ পেয়েছি।” গত বুধবার স্ত্রী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ডাকা জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। রোগীদের অভিযোগ, প্রসবের পর নিয়ম অনুযায়ী ১০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা। কিন্তু তা দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সুপার মণিময়বাবু বলেন, “এখন নগদ টাকা না দেওয়ার ব্যপারে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। প্রসূতির নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। ভর্তির সময়ে রোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে ফর্ম পূরণ করিয়ে নেওয়া হয়। ওই টাকা সরাসরি রোগীর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।” |