নদীর পাড় বাঁধাতে চিরাচরিত পাথর এবং বালির বস্তা ছেড়ে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে চলেছে সেচ দফতর। এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির পঞ্চনই নদীকে। শালবাড়িতে নদীর ৫০০ মিটার পাড় বাঁধানোর কাজে রাজ্যে প্রথম জিয়ো-সিন্থেটিক ব্যাগের ব্যবহার হবে। আজ, শুক্রবার রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে শিলিগুড়িতে ওই প্রযুক্তির কাজের শুরু করবেন। শিলিগুড়ির পরে দক্ষিণবঙ্গের নদীয়া এবং মুর্শিদাবাদে জিয়ো পদ্ধতির একটি পাইলট প্রজেক্ট করা হবে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহানন্দা নদীতে ৫০০ মিটার বাঁধে এই কারিগরি প্রয়োগ করা হবে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, আপাতদৃষ্টিতে জিয়ো ব্যাগ যে কোনও সিমেন্টের বস্তার মতোই দেখতে। জিয়ো-ব্যাগ তৈরিতে কোনওরকম কাপড়ের উপাদান ব্যবহার করা হয় নায় পলিস্টার, পলিপ্রপলিন এবং পলিথিলাইনের ফাইবার দিয়ে তৈরি এই ব্যাগ জলে কোনওরকম ক্ষতি হয় না। এই ব্যাগের ভেতরে বালি-মাটি ভরে রসায়নিক দিয়ে সেলাই করে দেওয়া হবে। নদীর পাড়ে ওই একই উপাদানের একটি চাদর পেতে, ব্যাগগুলি বোল্ডারের মতোই ধাপেধাপে বিছিয়ে দেওয়া হবে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাগের ভিতরে মাটি-রাসায়নিক ভরার পরে এক একটির ওজন হবে প্রায় ১২৬ কেজি। সে কারণে নদীর পাড়ের সাধারণ জলোচ্ছাসে তা ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। ব্যাগের সুবিধে হল, অন্তত ১০ বছর পর্যন্ত এই ব্যাগ জলের তলায় থাকলেও কোনওরকম পচন ধরবে না। ব্যাগের ভিতরে জল ঢুকে ভেতরের উপাদান ভাসিয়ে নিয়ে যেতেও পারবে না। নদীর পাড় বাঁধাই করতে বোল্ডার ব্যবহার হলে বছর ঘুরলেই বোল্ডার ক্ষয়ে যায় বা ভেসে যায়। বালি ভরা চটের বস্তাও পচে যায়। জিয়ো ব্যাগের ক্ষেত্রে বছর বছর খরচ নেই। সে কারণে একদিকে যেমন এই ব্যাগ খরচ বাঁচাবে। অন্যদিকে টেকসই হবে অনেক বেশি বলে সেচ দফতরের বাস্তুকারেরা জানিয়েছেন। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় বলেন, “পরীক্ষামূলক ভাবে জিয়ো ব্যাগের ব্যবহার শুরু হচ্ছে। শিলিগুড়ির প্রকল্প সফল হলে সারা রাজ্যেই এই ব্যাগের ব্যবহার শুরু হবে। এই ব্যাগের খরচ অনেক কম। একবার বসিয়ে দিলে অন্তত ১০ বছর নিশ্চিন্ত। বন্যা প্রবণ এলাকাগুলিতে এই ব্যাগের ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।” শিলিগুড়ির শালবাড়ির অনুষ্ঠানের পরে তিস্তা সেচ নিয়ে বৈঠক করবেন মন্ত্রী। আগামী শনিবার জলপাইগুড়িতে উত্তরবঙ্গের সেচ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বর্ষা-পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। |