বুধবার রাতেও পাহাড়বাসী ঘুমোতে গিয়েছিলেন এই আশা নিয়ে যে, অবশেষে স্বাভাবিক হবে পাহাড়। শুক্রবার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলন কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। তার পরে শান্তি ফিরবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর হল ফের গণ্ডগোলের আশঙ্কা নিয়েই। কাকভোরে প্রাতর্ভ্রমণের সময়েই কালিম্পং থানার সামনে ইতিউতি মোর্চা নেতাদের জটলা থেকেই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাংকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেলা বাড়তে পাহাড়বাসী জেনে গেলেন, আশঙ্কা সত্য। বিনয় তামাংকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ফের পাহাড়ের অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ডেকে দেওয়া হল। |
তাই বেলা যত বেড়েছে, ততই যেন থমথমে হয়েছে কালিম্পং। এক দিকে আদালত চত্বরে উৎকণ্ঠিত মোর্চার নেতা-কর্মীরা। অন্য দিকে, ডম্বর চক সহ অন্যত্র সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীদের আলোচনায় শোনা গিয়েছে হতাশার সুর। প্রায় সকলেরই বক্তব্য, পুজোর আগে সমস্যা না মিটলে প্রচুর লোকসানের মুখে পড়তে হবে। পুজোর আগে স্কুল-কলেজ না খুলবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ুয়া ও অভিভাবকরাও। কয়েকজন তো মোর্চা নেতাদের সামনেই জানতে চাইলেন, “আর কত দিন এমন চলবে? কবে খুলবে দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস সব কিছু?” এক মোর্চা নেতা ম্লান হেসে বললেন, “তা আমিও বলতে পারব না।”
এ দিন সকাল থেকেই কালিম্পঙে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। কিন্তু সিআরপি টহল শুরুর পরে মিছিল দ্রুত শেষও হয়ে যায়। গোলমালের আশঙ্কায় কড়া পাহারা ছিল আদালত চত্বরেও। কালিম্পঙের ডম্বরচক থেকে থানা, আদালত চত্বর, মহকুমা শাসকের দফতর সহ প্রধান সড়কে নিরাপত্তা ছিল নিশ্ছিদ্র।
এর মধ্যেই জিটিএ সদস্য বিনয় তামাং, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সতীশ পোখরেল সহ রিবস সুব্বা, ললিত ছেত্রী, সুবীর মঙ্গরাতি ও পেমা তামাংকে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে বিচারক কমল সরকারের এজলাসে তোলা হয়। বিচারক ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। তত ক্ষণে অবশ্য আদালত চত্বর থেকে মোর্চার বড় মাপের নেতারা চলে গিয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকজন মোর্চা কর্মী সেখানে ছিলেন। বিকেল গড়াতে থমথমে মুখে ফিরে গিয়েছেন সেই মোর্চা সমর্থকেরাও। কয়েকজনকে বলতেও শোনা গিয়েছে, “বিনয়ের পর এ বার কে?”
ঘটনা হল, দলের তরফে বিনয় তামাং ছিলেন কালিম্পঙের আন্দোলনের দায়িত্বে। ফলে রাতারাতি যেন কালিম্পঙে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে মোর্চা। পুলিশ লক আপ থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দলের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীকে হাত নেড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেন বিনয়। ওই নেতা-কর্মীদের কয়েকজন জানান, টাকাপয়সা, গাড়ি, লোকজন জোগাড় করার দায়িত্ব বিনয়ই সামলাতেন। এখন কী ভাবে কী হবে, তা ভেবেই তাঁরা উদ্বিগ্ন।
এ দিন আদালতের থানা চত্বরে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন কালিম্পঙের মোর্চা বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রীও। তিনি অভিযোগ করেন, “রাজ্য সরকার আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতেই মোর্চা নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের নীতি নিয়েছেন। তাতে আমরা দমছি না। আরও তীব্র আন্দোলনে যাব।”
কিন্তু এ ভাবে দিনের পর দিন পাহাড় অচল রাখাটা ঠিক হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন পাহাড়ের অনেকেই। এমনকী, কালিম্পঙে থানা ও আদালত চত্বরে দাঁড়িয়েও প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? তা ছাড়া, অতীতে সুবাস ঘিসিংয়ের অনিদিষ্টকালের বন্ধ-এর বিরোধিতায় আপনার নেতৃত্বেই তো মিছিল হয়েছিল কালিম্পঙে। জবাবে হরকাবাহাদুর বলেন, “আগের সঙ্গে এখনকার অনেক ফারাক। এর বেশি কিছু বলার নেই।” |