বিরোধীদের চাপের মুখে কিছুটা নরম হল কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার। কয়লা বণ্টন কেলেঙ্কারি নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মুখ খুলতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে।
কয়লা বণ্টন সংক্রান্ত ফাইল উধাও হওয়া নিয়ে গত ক’দিন ধরেই সংসদ কার্যত অচল করে রেখেছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, এই কেলেঙ্কারির সময় মনমোহন সিংহের হাতেই যে হেতু কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল, তাই তাঁরই উচিত সংসদে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলা। কিন্তু সরকার গোড়া থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে এই বিতর্ক থেকে দূরে রাখার জন্য সক্রিয়।
সরকারের বক্তব্য, উধাও ফাইল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন বক্তব্য রাখবেন? ফাইল যত্ন করে রাখা কি তাঁর দায়িত্ব? এর পরে কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জায়সবাল বিবৃতি দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় বিরোধীরা। অবশেষে প্রবল চাপের মুখে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব শুক্ল জানান, সংসদে এ নিয়ে বক্তব্য রাখবেন কয়লামন্ত্রীই। তবে প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
সরকারের এই বক্তব্যে আপাতত কিছুটা শান্ত হয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের বক্তব্য, মুখ খুললেও যথাযথ জবাব প্রধানমন্ত্রী দিতে পারবেন না। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে পরবর্তী রণকৌশল তৈরির কথা ভাবছে বিরোধীরা। কংগ্রেস সূত্রের মতে, উধাও ফাইল নিয়ে ইতিমধ্যেই মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। যত ক্ষণ না সেই কমিটি রিপোর্ট দিচ্ছে, তত ক্ষণ সরকারের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জায়সবালও একই কথা বলেছেন সংসদে। বিরোধীদের বক্তব্য, যদি প্রধানমন্ত্রী কমিটির দোহাই দিয়ে ফের মূল জবাব এড়িয়ে যান, তা হলে সরকারকে ছেড়ে কথা বলা হবে না।
সরকারের কাছে বিজেপির নেতাদের বক্তব্য, শ্রীপ্রকাশ জায়সবাল নিজেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। তাঁর পরিবারের লোকেরাও কয়লা ব্লক বণ্টনে সুবিধা পেয়েছেন। তার উপর এর আগে রাজ্যসভায় তিনি যা বিবৃতি দিয়েছেন, তাতেও সত্য বলেননি বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
সেখানে মন্ত্রী বলেছিলেন, শুধু মাত্র এনডিএ আমলের ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ইউপিএ জমানার ফাইলও উধাও। এই অবস্থায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই যোগ্য জবাব দিতে পারেন। লোকসভায় সুষমা স্বরাজ, রাজ্যসভায় অরুণ জেটলিরা এই দাবিই তুলেছেন। সুষমা বলেন, “আমরা সংসদ চালানোর পক্ষপাতী। কিন্তু তাই বলে সরকার যা ইচ্ছা করে যাবে, বিরোধীরা সেটি মুখ বুজে সহ্য করতে পারে না।” সদ্য বিজেপির সঙ্গ-ছাড়া জেডি(ইউ)-ও এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। দলের নেতা শরদ যাদব আজ লোকসভায় সুষমার বক্তব্যের রেশ টেনে বলেছেন, সভা চালানোর জন্য সরকারকে মধ্যপথ খুঁজতে হবে। বাম, এডিএমকেও আজ এ নিয়ে সরব হয়েছে।
|